বাধ্যকারী প্রবৃত্তির জালে আটকে আছেন?
আপনি কি আপনার বাধ্যকারী প্রবৃত্তি গুলির জন্যে অখুশি? সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন, এই অতৃপ্তি নিয়ে এগিয়ে চলা কোনো সমাধান নয়। কারণ, কর্মের ভার বয়ে চলার পথে আপনি যদি এগুলো চাপা দেন, সেটা বরং আরও বাড়তেই থাকবে।

প্রশ্ন: সদগুরু, সাধনা করার সময়ও বারবার বাধ্যকারী প্রবৃত্তিগুলো উঠে আসছে, তাতে আমি খুশি নই।
অখুশি হল অস্বস্তিকর দশা। আমরা সবসময় আনন্দ আর প্রেমের বিষয়ে কথা বলছি যাতে আপনার মন আর আবেগ আনন্দময় থাকে। যখন আপনার মন আর আবেগ আনন্দময় থাকে, তখন আপনিও নমনীয় হন আর আপনাকে নিয়ে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু যখন মন আর আবেগ অপ্রসন্ন হয়ে ওঠে, আপনি কঠোর হয়ে যান—তখন আপনাকে নিয়ে আর কিছুই করা যায় না। প্রসন্ন অবস্থায় থাকলে, আপনি অন্য ধাঁচে নিজেকে গড়তে দিতে রাজী। অপ্রসন্ন অবস্থায়, আপনি তো নিজেকে স্পর্শ করতে দিতেও রাজী নন।
নিজের বাধ্যকারী প্রবৃত্তি গুলোকে খুশিমনে দেখুন
আপনার যাই বাধ্যকারী প্রবৃত্তি থাক না কেন, অখুশি থাকা তার চেয়ে বড় সমস্যা। এটা অনেকগুণ বড় সমস্যা কারণ এই অবস্থায়, আপনাকে স্পর্শ করা যাবে না, গড়া যাবে না, সাহায্য করা যাবে না। আপনি যাই ছাইপাঁশ হন না কেন, সবার আগে শিখতে হবে আনন্দময় আর প্রেমময় থাকা। আপনার কিছু বাধ্যকারী প্রবৃত্তি আছে, তো সেটাকে থাকতে দিন– সেগুলোকে খুশিমনে দেখতে শিখুন। তাহলে আপনার সাথে কাজ করা, আপনাকে সাহায্য করা, আপনার কাছাকাছি পৌঁছানো, এমনকি আপনার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বাইরেও কিছু করা সহজ হবে। আপনার ভালো লাগা আর মন্দ লাগা হলো প্রাথমিক বাধ্যকারী প্রবৃত্তি; এগুলো থেকে বেরোতে চাইলে, সবার আগে আপনাকে প্রসন্ন অবস্থায় থাকতে হবে। অপ্রসন্ন অবস্থায় থাকলে, আমরা আপনাকে দিয়ে কোনও অপছন্দের কাজ করাতে পারবনা; আপনি শুধু নিজের পছন্দের কাজই করবেন। মানুষ যত অখুশি, ততই তাঁরা জেদ করবেন,”আমি শুধু এটাই করব। আমি এরকমই!” খুশি মানুষরা নমনীয় – আপনি তাঁদের দিয়ে নাচ করাতে পারেন, কাঁদাতে পারেন, লাফাতে পারেন, মজার জিনিস করাতে পারেন, চারপাশে হামাগুড়ি দিতে বললেও তাঁরা রাজী; খুশি অবস্থায় তাঁরা সবকিছু করবেন। কারণ তখন তাঁরা নমনীয়।
নিজের নমনীয়তা হারাবেন না। সেটাই সবচেয়ে জরুরি। মনের বা আবেগের কোনোরকম অপ্রসন্ন অবস্থায় নমনীয়তা সম্ভব না। আপনার অনেক বাধ্যকারী প্রবৃত্তি আছে – শুধু সেই কারণেই আনন্দময়, প্রেমময় ও শান্তিপূর্ণ থাকা প্রয়োজন।
কর্মের আলু
কর্ম হল একটি আলুর বস্তার মতন। এই বাধ্যকারী প্রবৃত্তি গুলোকে যতই গভীরে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, ততই তারা বেড়ে উঠবে। সাধনা হল তাদেরকে খুঁড়ে বের করা, এমনভাবে শুকিয়ে ফেলা যাতে তারা আর অঙ্কুরিত হতে না পারে। একটা সময়কাল ধরে তীব্র সাধনা করার পর, যখন বাইরের জগতে পা রাখবেন, দেখতে পাবেন, আপনার ছোট ছোট অনেক বাধ্যকারী প্রবৃত্তি উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও আরও অনেক আলু তোলা বাকি। প্রত্যেক দিন তাদেরকে খুঁড়ে বের করে এমনভাবে শুকাতে হবে যেন তারা আর অঙ্কুরিত না হতে পারে।
যদি একটা আলু থেকে লক্ষ লক্ষ আলু তৈরী হয় – তবে সেটা একটা প্রকান্ড আলু। ধরা যাক, আপনার পাঁচ মিনিটের খুব তীব্র কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে – হয়তো ব্যথা, ভয়, কোনো যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্ত বা আপনার কাছে অত্যন্ত জঘন্য কিছু। এই পাঁচ মিনিটের 'আলু'গুলো এরপর কেবল বংশবৃদ্ধি করবে, আর আপনার গোটা জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনি যেখানেই যান না কেন, শুধু সেটার ব্যাপারেই কথা বলবেন, শুধু সেটা নিয়েই চিন্তা করবেন। আপনি সেগুলোকে পুঁতে ফেলছেন, এখন তারা বেড়ে চলেছে। সেই একই ঘৃণ্য প্রকৃতির লক্ষ লক্ষ আলু তৈরী হবে। কিন্তু সেই আলুটাকে শুকিয়ে রেখে দিলে, এটা একটা ভালো অভিজ্ঞতা হতে পারে। যদি আপনি খুব খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েও যান, সেটাও ভালো অভিজ্ঞতা হতে পারে, কারণ জীবনের অপ্রীতিকর মুহূর্তে যা শেখা যায় তা অমূল্য। শুধু মূর্খরাই সেটাকে ভুলতে চেষ্টা করবে। আপনি যদি বুদ্ধিমান হন, তবে নিজের জীবনের প্রত্যেক অপ্রীতিকর মুহূর্ত মনে রাখবেন – কোনও ক্ষোভ বা রাগ ছাড়া – যাতে আর কখনও সেই একই পরিস্থিতিতে না পড়েন।
আমরা আলুগুলোকে ফেলে দিতে চাই না; আমরা শুধু চাই তাদের খুঁড়ে বার করে এমনভাবে শুকিয়ে ফেলতে যে তারা আর অঙ্কুরিত না হতে পারে। আমরা আলুগুলোকে সংরক্ষণ করতে চাই; নয়ত আমরা আবার সেই অজ্ঞ-মূর্খের মতো হয়ে যাবো যাঁরা একই ভুল বারবার করে। জীবনের অভিজ্ঞতার মূল্য কোনও ফেলে দেওয়ার জিনিস নয়। কিন্তু যদি আপনি এটাকে নিজের মধ্যে বাড়তে দেন, তাহলে এটি আপনার পুরো জীবনকে বিষাক্ত করে তুলবে। কর্ম বা অভিজ্ঞতার স্মৃতিই একমাত্র জিনিস যা আপনাকে জ্ঞানী বানাতে পারে, আবার এটাই একমাত্র জিনিস যা আপনাকে বেঁধেও ফেলতে পারে – এমনভাবে আপনার জীবনকে বিষাক্ত করতে পারে যে সেটা আপনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সুতরাং, সমস্যাটা কর্ম নয়, আপনি সেটাকে কিভাবে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন সেটাই আসল সমস্যা।