প্রশ্ন: আমি শুনেছি যে সময়ামা নিজের কর্মকে ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করে, কিন্তু আমি জানতে চাই এটা ঘটে কীভাবে আর এটা কি জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে?

সদগুরু: আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার সার হল, নিজের জীবনকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। স্বাভাবিক গতিতে যেতে গেলে, হয়ত অনেক সময় লেগে যাবে। তাই, অধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া হল সেইসব মানুষের জন্য যাঁরা একটু তাড়ায় আছেন। তাঁরা নিজের লক্ষ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছতে চান। আপনি যদি আমাকে বলেন কতটা তাড়াতাড়ি পৌঁছতে চান, সেই অনুযায়ী আপনার সাধনাকেও বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু বোঝা দরকার, যখন সবকিছু খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তখন একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, বা জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে, হঠাৎ তেঁতুল দেখতে পেলে, আপনার মুখে জল আসবেই। তার ফুলগুলোও ভালো হয়, আপনি ছিঁড়তে পারেন। একটুখানি তেঁতুলের ফুল খেতে পারেন। তো, হাঁটতে হাঁটতে এসব ঘটলে সেটা ভালোই। গাছে চড়ে, যত খুশি তেঁতুল পেড়ে খেয়ে তারপর যেতে পারেন। যদি গরুর গাড়ি চেপে যান, তবে আরেকটু তাড়া আছে – হাতের কাছে যা পেলেন, ঝটপট তুলে নিতে হবে। বেছে বেছে তোলার সময় নেই। যদি গাড়িতে যান, তখন তুলতে যাওয়া একটু বিপদজনক হবে। যদি তুলতে যান, আপনার হাত কেটেও যেতে পারে। অন্যকিছু, যেমন প্লেনে চেপে গেলে, এসব কল্পনাও করতে পারবেন না। হাতই বার করতে পারবেন না। 

আপনি জীবনের উৎসকে জানতে চান, এমন আকাঙ্খা যদি জাগে, তবে আরেকটু গুরুতর চেষ্টা করতে হবে। সময়ামা হল সেটাই।

তো মানুষ নিজের ইচ্ছার মাত্রা অনুযায়ী নিজের যাত্রা বেছে নেবেন। যাত্রার পদ্ধতিটা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী হওয়া উচিত যে তাঁর কতটা লক্ষ্যে পৌঁছনোর আকাঙ্খা আছে বা তিনি কতটা যাত্রাটা উপভোগ করছেন আর লক্ষ্যের বিষয়ে তাঁর খুব একটা যায় আসে না। এমন নয় যে যায় আসে না – কেউই বলতে পারবেন না যে তাঁর যায় আসে না। এখানে যতক্ষন বসে আছেন, যায় আসে না কারন এটা এত আরামদায়ক। কিন্তু যত সময় যাবে, তাঁরা চিন্তা করবেন। সবাই লক্ষ্যে পৌঁছতে চান। প্রশ্নটা হল শুধু এই যে, আপনি কতদিন অপেক্ষা করতে রাজি আছেন? 

সময়ামা একটা নির্দিষ্ট ধরনের প্রক্রিয়া, যেখানে আপনাকে দ্রুত গতিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু একটি অত্যন্ত নিরাপদ পরিবেশে। যদি আপনি এটা কোনও সুরক্ষিত পরিবেশ ছাড়াই নিজে নিজে করতে চান, তবে এটা বিপদজনক হতে পারে। লোকে নিজের মস্তিস্ক উড়িয়েও দিতে পারেন, যদি এটা সুরক্ষিত পরিবেশে না করা হয়। এত কঠোর শর্তাবলী ঠিক করার কারন হল, আমরা চাই প্রক্রিয়াটির প্রতি উপযুক্ত শৃঙ্খলা , নিয়ানুবর্তিতা আর মনোযোগ থাকুক। নয়ত, বাসে করে যেতে গিয়েও, যদি আপনি তেতুল গাছকে ধরে বসে থাকেন, হয় বাসকে থামতে হবে, নয়ত আপনাকে নিজের হাত সেখানে ছেড়ে রেখে যেতে হবে। এর মধ্যে যেকোনও একটা ঘটবে। তা না হতে হলে, আপনার হাত বাইরে বের করা উচিত না। জানলা দিয়ে বাইরের পৃথিবীকে চলে যেতে দেখুন শুধু। হাঁটলে, ব্যাপারটা সেরকম হবে না, কিন্তু সময় অনেক লাগবে। এমনকি কোয়েম্বাটোর অবধি পৌঁছাতেও অনেক সময় লাগতে পারে। 

সময়ামা হল সেই মাত্রা, যেখানে অস্বচ্ছ জিনিসগুলোকে আমরা স্বচ্ছ বানাতে চাইছি।

তো, সময়ামা কোনও বিপদজনক জিনিস নয়, এর জন্য কেউ তৈরী কিনা সেটাও প্রশ্ন নয়। সবার অভিমুখ এইদিকেই, কিন্তু যথোপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া এটা খুবই শক্ত মনে হতে পারে, যথোপযুক্ত আক্ষাঙ্খা না থাকলেও শক্ত মনে হতে পারে। তো আমি বলবো, যদি আপনি শুধু একটা ভালো জীবনের আশা করছেন – ভালো জীবন বলতে, শান্তিপূর্ণ, আনন্দময়, প্রেমময় জীবনের – তবে ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং আর ভাব স্পন্দন যথেষ্ট আপনার জন্য। কিন্তু আপনি জীবনের উৎস কী তা জানতে চান, এমন আকাঙ্খা যদি জেগে থাকে, তবে আরেকটু গুরুতর প্রচেষ্টা করতে হবে। সময়ামা হল সেটাই। এর সার হল, আপনি ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে রাখতে শিখছেন, এবং সেটা শুধু তখনই সম্ভব যখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে এই সৃষ্টিতে আপনি নিজেই একমাত্র বাধা। কিন্তু একইসময়ে, আপনি চাইলে এক প্রবেশদ্বারও হতে পারেন। ব্যাপারটা একটা দরজার মতন। দরজাটা বন্ধ থাকলে, সেটা একটা অন্তরায়। কিন্তু খোলা থাকলে সেটা একটা প্রবেশপথ, তাই না? আপনিও ঠিক সেরকম। আপনি অস্বচ্ছ হয়ে গিয়ে একটা বাধা হয়ে উঠতে পারেন। দরজা বন্ধ মানে, যদি আমি রূপকের অর্থেও বলি, আপনার জন্য দরজা বন্ধ, তার মানে আপনি যেতে পারবেন না। দরজা আছে মানে, সেটাকে খোলারও নিশ্চয়ই কোনও উপায় আছে, তাই না? হয়ত দরজাটা এখন বন্ধ থাকতে পারে, কিন্তু দরজা আছে মানেই সম্ভাবনা আছে। যদি পুরোটাই পাথরের পাত হত, তাহলে আলাদা ব্যাপার ছিল। কিন্তু এটা দরজা। কেউ হয়ত সেটাকে বন্ধ করে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু আপনি ইচ্ছা করলে সেটাকে খুলতে পারেন।

তো, সময়ামা হল সেই মাত্রা, যেখানে অস্বচ্ছ জিনিসগুলোকে আমরা স্বচ্ছ বানাতে চাইছি। সেটা সম্ভব না হলে, অন্ততঃ আধ-স্বচ্ছ করতে চাই, যাতে আপনি পেরোতে না পারলেও, অন্ততঃ পরিষ্কার দেখতে পাবেন, জীবনের অন্য এক মাত্রা আছে। একবার দেখতে পেলে, আর নিজেকে বোকা বানাতে পারবেন না। সেখানে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।

সম্পাদকের নোট: সময়ামা প্রোগ্রামের বিষয়ে আরও জানুন।