কর্মটা আসলে কার?
পরিবারের কারও কর্ম কী আপনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে? সদগুরু মনে করিয়ে দেন, আপনার জীবনে যা কিছু ঘটছে সেটা আপনারই বানানো।

প্রশ্নকর্তা: আমার কর্মতে আমার কাছের মানুষদের কি কোনো অবদান আছে? যদি তাই হয়, তাহলে আমি এটাকে কিভাবে সামলাবো?
সদগুরু: এটা ভাববেন না যে আপনার পরিবারটাই ঠিক করার প্রয়োজন! কে কার কর্মফল ভোগ, সেটা কে বলতে পারে! হয়তো তারা আপনাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছে! যদি মনে হয় আপনার পরিবার খারাপ – তারা হয়তো এখন এরকম, কিন্তু তারা এরকমই থাকবেন এমন নয়। চাঁদের মতন তাঁদেরও বিভিন্ন দশা থাকে। তাঁদেরও প্রসন্ন অবস্থা থাকে, অপ্রসন্ন অবস্থাও থাকে। এটা ঘটার কারন হল পরিবারের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠতা।
আপনার জীবন, আপনার দায়িত্ব
আপনার জীবনে যা কিছু ঘটে, তার দায় আপনারই। তার মানে সেটা আপনারই কর্ম, আপনারই বানানো। যদি আপনি আধ্যাত্মিক পথে থাকেন, তাহলে যখনি আপনি “কর্ম” শব্দটি উচ্চারণ করবেন, সেটা যেন সবসময় নিজেকে উদ্দেশ্য করেই হয়। একজন ব্যক্তি যিনি খারাপ কিছুর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর বিষয়ে রায় দেওয়া আর ভাবা যে সেটা তাঁর কর্ম, এটা একটা সম্পূর্ণ ভুল পন্থা। এইভাবে আপনি নিজের মানবতা হারিয়ে ফেলবেন। অন্য কারুর কর্ম কখনোই আপনার ভাবার বিষয় নয়। এটা আপনার কর্ম যে আপনাকে অন্য একজনকে কষ্ট পেতে দেখতে হচ্ছে।
যখনি আপনি অন্য কারুর কর্মের বিষয়ে ভাবতে শুরু করেন, আপনি এক অশুভ শক্তিতে পরিণত হবেন। অশুভ সবসময় ইচ্ছা করে হয় না। অশুভ মানে এমন যে আপনি যাই করুন না কেন, সেটা আপনার চারপাশের সবার জন্য খারাপ ফল আনবে। যে মুহূর্তে আপনি অন্য একজনের কর্মের বিষয়ে ভাবতে শুরু করবেন, তখন আপনিও সেই পথেই এগোতে থাকেন।
আধ্যাত্মিকতায় আমরা এটাকেই ঠিক করতে চাই – যেন আপনি বুঝতে পারেন, যাই ঘটুক না কেন, সেটা হচ্ছে আপনারই জন্য। আপনার জীবনে ঘটছে মানে, সেটা আপনার কর্ম। আপনি আশেপাশের মানুষদের নিয়ে কষ্টে থাকুন বা আনন্দে – সেটাও আপনার কর্ম।
তাই আপনার পরিবার থেকে আসা কর্ম নিয়ে চিন্তিত হবেন না – এমন কিছুই নেই। “পরিবার” শুধু আপনার মনে। কে পরিবার আর কে নন, কে আপনার কাছের আর কে নন, সেটা সম্পূর্ণভাবে আপনার মনের তৈরী। যদি আপনার মন না থাকত, তাহলে আপনার পরিবারের ধারণাও থাকত না। তার মানে ওনারা আপনারই সৃষ্টি, আপনারই কর্ম। আপনার বোঝা জরুরি যে, আপনার জীবনে যাই ঘটুক না কেন, সেটার কারন আপনিই। একবার এই বিষয়ে সচেতন হলে, তবেই আপনি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হয়ে উঠবেন। তা না হলে, আপনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন। মানুষরা এত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন বলেই, তাঁদের চারপাশের এত কিছুকে নিজের পরিচয় বানিয়ে ফেলেছেন বলে, তাঁদের নিজেকে একজায়গায় জড়ো করে একটা সম্পূর্ণ সত্তায় পরিণত হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু একবার সেটা হলে, আপনি যা খুঁজছেন সেটা এক মুহূর্তেই আপনার হয়ে যেতে পারে।