সদগুরু: মানুষ এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন যে শরীর মানেই যন্ত্রণা। শরীর মানে যন্ত্রনা নয়, শরীর খুবই সুন্দর হতে পারে। আপনার শরীরকে আপনি এমন ভাবে তৈরি করতে পারেন যে আপনাকে এটা চতুর্দিকে বয়ে বেড়াতে হবে না, আপনি একে আপনার সঙ্গে শুধুই ভেসে থাকতে দিতে পারেন। শুধুমাত্র সঠিক খাদ্য, সঠিক অভ্যাস আর দৃষ্টিভঙ্গির সামান্য পরিবর্তনের দ্বারা, আপনি দেখবেন এই শরীর হয়ে উঠবে অবিশ্বাস্য। আপনি যদি এই শরীরকে যন্ত্র প্রণালী হিসেবে দেখেন, এটা নিশ্চিত রূপে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবথেকে উন্নত যন্ত্র । পৃথিবীর সমস্ত সুপার কম্পিউটার একত্রেও এর বরাবর হতে পারে না। এটা বলা হয় যে সব থেকে জটিল কম্পিউটারের থেকেও ডি.এন.এর একটি অণু অনেক বেশি কার্য সম্পাদন করতে পারে। ডি.এন.এর একটি অণুর মধ্যে এতোসব কার্যক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, শরীরই হলো সব থেকে ভালো যন্ত্র।

শুধুমাত্র সঠিক খাদ্য, সঠিক অভ্যাস আর দৃষ্টিভঙ্গির সামান্য পরিবর্তনের দ্বারা, আপনি দেখবেন এই শরীর হয়ে উঠবে অবিশ্বাস্য।

এটাই আপনাকে দেওয়া প্রথম উপহার। যিনিই আপনার সৃষ্টিকর্তা হোন না কেন, তিনি আপনাকে এই আশ্চর্য-সুন্দর শরীরটি দিয়েছেন। আপনাকে দেওয়া প্রথম উপহারটি শারীরিক, এবার যদি তিনি দেখেন যে আপনি এর ভীষণভাবে অপব্যবহার করছেন, আপনি যদি এর ঠিকমত দেখাশোনা করতে না জানেন, তাহলে তিনি জানবেন আপনার উপরে আরো অনেক উপহার বর্ষণের কোন মূল্য নেই। তাই আপনার শরীরকে স্বচ্ছন্দে ও আনন্দে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীর যদি উৎফুল্ল হয়, এটা আপনাকে আরো এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।

আপনাকে কোন মহান খেলোয়াড় বা সেরকম কিছু হতে হবে না, কিন্তু আপনি আপনার শরীরকে ভালো, সুস্থ, স্বাচ্ছন্দে এবং সুখী রাখতে পারেন। শরীরকে সুখী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় আপনি যেখানেই যেতে চান না কেন, সে আপনাকে খুব সহজেই ব্যর্থ করে দেবে। পার্থিব শরীরও খুশি থাকতে পারে, ঠিক সেইভাবে- যেমন এক পশলা বৃষ্টির পরে বাইরে বেরিয়ে তাকিয়ে দেখলে, সমস্ত গাছপালা গুলোকে খুশি মনে হয়। শুধুমাত্র ধোওয়া আর পরিষ্কার নয়, আপনি যদি সংবেদনশীল হন তাহলে দেখবেন তাদের মধ্যে থেকে যেন খুশি ঠিকরে বেরোচ্ছে।

বিশেষত শরীর খুশি থাকতে পারে, যদি তাকে সঠিক ভাবে রাখা হয়। আপনি যদি কিছু বিশেষ খাবার খান, আপনার শরীর খুশি থাকবে। আপনি যদি কিছু বিশেষ অন্য খাবার খান আপনার দেহ নিস্তেজ ও অলস হয়ে পড়বে, আপনার ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাবে। যদি আমরা প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে ঘুমাই, আর যদি আমরা ষাট বছর বাঁচি, তাহলে আমরা জীবনের কুড়ি বছর ঘুমিয়েছি- তার মানে জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কেটে গেছে। জীবনের বাকি 30-40 শতাংশ সময় কেটে যায় খাওয়া- দাওয়া, প্রসাধন এবং স্নান- শৌচাদি কর্মে, তাহলে জীবনের জন্য থাকল কি? সত্যিই আর কোন সময় পড়ে থাকে না।

 

কেউ তার নিদ্রাকে উপভোগ করতে পারেন না। ঘুমের মধ্যে আপনার অস্তিত্ব থাকে না। একমাত্র যেটা আপনি উপভোগ করতে পারেন, সেটা হল প্রশান্তি। শরীর ভালোভাবে বিশ্রাম পেয়েছে - সেটাই আপনি উপভোগ করেন। কিভাবে শরীরকে ভালোভাবে বিশ্রামে রাখা যায়? প্রথমত একে ক্লান্ত করাই বা কেন? বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে ক্লান্তি কাজকর্মের জন্য আসেনা। খাদ্য এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক, দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটাও আছে, কিন্তু খাদ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি ভুল ধরনের খাদ্য গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার শরীরকে টেনে টেনে নিয়ে চলতে হবে। আপনি যদি সঠিক ধরনের খাদ্য গ্রহণ করেন, শরীর আপনার আগে আগে চলবে, আর সেই ভাবেই শরীরকে বজায় রাখা উচিত।

Editor’s Note: Read all about the Body in Sadhguru’s book – Body the Greatest Gadget