প্রশ্ন: প্রণাম সদগুরু। জীবনের সমস্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা কি কর্মের কারনে ঘটছে নাকি কোনও কাকতালীয় বা আনুষঙ্গিক কারণে?

সদগুরু: একদিকে যেমন ব্যক্তিগত কর্ম আছে, তেমনি আবার সমষ্টিগত কর্মও আছে। একটা পরিবার হিসেবে, সম্প্রদায় হিসেবে, দেশ হিসেবে, মানবতা হিসেবে, আমরা নিজেদের মধ্যে কার্মিক স্মৃতি ভাগ করে নিই। হয়তো ব্যক্তিগতভাবে, আমরা কিছু করিনি। কিন্তু আমাদের সমাজ কিছু কাজ করছে। তার কারণে, কিছু ফলাফল বা পরিণতি থাকবে। কর্মকে একটি পুরস্কার আর শাস্তির ব্যবস্থা হিসেবে বুঝবেন না। এটা তা নয়। এটা কেবল জীবনের ভিত্তি। স্মৃতি বা মেমোরি ছাড়া, জীবন ঘটতে পারে না। স্মৃতির উপাদান ছাড়া, একটি এককোষী প্রাণী বা অ্যামিবা বা মানুষ, কোনওটাই বানানোর সম্ভাবনা নেই। জীবনকে পুনরাবৃত্ত হতে হলে, স্মৃতি বা মেমোরি প্রয়োজন। কর্ম হল জীবনের স্মৃতি। এই দেহটি এইভাবে গঠিত হয়েছে, তার কারণ এককোষী প্রাণী থেকে শুরু করে সমস্ত রূপের স্মৃতি এই জীবনের মধ্যে রয়েছে।

আপনার চারিপাশে যা কার্যকলাপ ঘটছে, তা আপনার উপর প্রভাব ফেলবে।

সামাজিক বাস্তবতা বা পৃথিবীর বাস্তবতার কারণে কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন আপনি হতে পারেন। এমন লক্ষ লক্ষ পরিস্থিতি আছে যেখানে প্রতিদিন মানুষরা মারা যাচ্ছেন এমন কারণে যা আসলে তাঁদের তৈরিই নয়। প্রচুর মানুষ নিজের চারপাশের কোনও ঘটনার সঙ্গে জড়িত না হয়েও, অনেক দুঃখকষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে থাকা – সেটা তাঁদেরই কর্ম।

আপনি কর্মকে এভাবে দেখছেন: “এটা কি আমার দোষ? আমি তো এটা করিনি। তাহলে এমন কেন হল আমার সাথে?” কর্ম এরকম ভাবে কাজ করে না। কর্ম শুধু একটা স্মৃতিতন্ত্র। এই স্মৃতি ছাড়া, কোনওরকম গঠন বা কাঠামো সম্ভব নয়। সমস্ত গঠন বা কাঠামো এবং বিশেষত জীবনের গঠনগুলি তৈরি হচ্ছে ও পুনরাবৃত্ত হতে পারছে, কারণ প্রত্যেকটি প্রাণে স্মৃতির একটি নিরাপদ ভাণ্ডার আছে। ধরা যাক, আমার সাথে এমন কিছু ঘটলো, যার কোনও স্মৃতি আমার নেই। কিন্তু আপনার চারপাশের সমাজের একটা স্মৃতি আছে, তাই সেইমতো পরিস্থিতিও ঘটবে। জগতের স্মৃতি আছে, তাই সেইমতো পরিস্থিতিও ঘটবে। এবং আপনার চারিপাশে যা কার্যকলাপ ঘটছে, তা আপনার উপর প্রভাব ফেলবে।

সমষ্টিগত কর্ম হয়তো কিছু নির্দিষ্ট বাইরের পরিণতি তৈরী করতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে আপনি জীবনকে কিভাবে অনুভব করছেন, সেটা কিন্তু আপনিই নির্ধারণ করবেন।

এখন, নিউ ইয়র্ক শহর দূষিত। আমি কোনও দূষণ করিনি, কিন্তু আমাকেও বিষাক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিতে হবে। এখন এই মুহূর্তে, আমি শ্বাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করছি, হয়তো মনোক্সাইড। আমি কোনও কর্ম করিনি। আমি তো এত গাছ লাগিয়েছি। কী করা যাবে? একবার যখন নিউ ইয়র্ক শহরে এসে পড়েছি, এতেই শ্বাস নিতে হবে। এর জন্য কি মূল্য চোকাতে হবে? অবশ্যই, যদি অনেক সময় ধরে এখানে থাকি, তবে চোকাতে হবে।

আপনার ব্যক্তিগত কর্ম যাই হোক, একটা সমষ্টিগত কর্ম আছেই। আপনার কর্ম মূলত আপনি জগৎকে কীভাবে অনুভব করবেন সেটা নির্ধারণ করছে, আপনি জগতে কোথায় আছেন বা কী করছেন সেটা নির্ধারণ করছে না। হয়তো আপনি প্রাসাদে জন্মালেন, কিন্তু আপনার কর্ম এমন যে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। হয়তো আপনি রাস্তায় জন্মালেন, কিন্তু আপনার কর্ম এমন যে আপনি একজন হাসি-খুশি মানুষ। পূর্ব-কর্ম একটা বাহ্যিক পরিণতি বা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেটা আপনি সঙ্গে সঙ্গে ১০০% বদলাতে পারবেন না, সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা পরিস্থিতিতে অনেক কিছু থাকে, শুধু আপনি একা নন। কিন্তু আপনার কর্ম এক মুহূর্তেই পাল্টানো সম্ভব।

আপনি এখনই আপনার কর্ম পাল্টাতে পারেন, যার অর্থ আপনি কীভাবে জীবনকে অনুভব করছেন সেটা এই মুহূর্তেই পাল্টাতে পারেন। এটাতে শুধু আপনারই হাত আছে, তাই আপনি চাইলে এক মুহূর্তেই পাল্টাতে পারেন। কিন্তু আপনি বা আমি চাইলেও, জগৎ হয়তো এখনই পাল্টাতে চাইবে না। তো সমষ্টিগত কর্ম হয়তো কিছু বাইরের পরিণতি তৈরি করছে, কিন্তু আপনি এই মুহূর্তে কীভাবে জীবনকে অনুভব করছেন, সেটার নির্ধারক তবুও আপনিই। 

সম্পাদকের নোট: শান্তি, প্রেম, স্বাস্থ্য আর সাফল্যের জন্য “সৃষ্টি করার শক্তি” ধ্যানগুলি (যাকে “চিৎ শক্তি” ও বলা হয়) আমাদের প্রত্যেককে নিজস্ব জাদুকর হতে সাহায্য করে, অনেক-দিনের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবে পরিণত করতে শক্তি জোগায়। এগুলি করে দেখুন!