Mahabharat All Episodes

প্রশ্নকর্তা: প্রণাম সদগুরু। আমার প্রশ্ন ধর্মের সেই দিকটা নিয়ে যেখানে কোন ব্যক্তি নিজের চূড়ান্ত মুক্তি সাধনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন - যেমন ভীষ্ম ব্রহ্মচর্যের সিদ্ধান্ত নেন, অথবা কর্ণ বন্ধুত্বের, এবং গান্ধারী অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নিজের চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছানোর এক উপায় হিসেবে।

সদগুরু: যখন ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি এটা করেন তার পিতার প্রতি অনুরক্তি ও সম্ভ্রম থেকে। কিন্তু একবার প্রতিজ্ঞা করার পর তিনি সেটাকে নিজের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করেন, কেননা একজন ক্ষত্রিয় হয়ে তিনি তার কথা ফিরিয়ে নিতে পারেন না। এরকম প্রতিজ্ঞা করাটা নিজের চূড়ান্ত কল্যাণ খোঁজের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় নয়। কিন্তু এবার যখন তিনি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ, তিনি এটাকে ব্যবহার করছেন তার চূড়ান্ত মঙ্গলের জন্য। গান্ধারী নিজের পছন্দে ধৃতরাষ্ট্রকে বিবাহ করেননি। হস্তিনাপুরে আসার পরেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার স্বামী অন্ধ। যখন তিনি সেটা বুঝতে পারলেন, তখন চোখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন অনেক কারণে। 

ধরুন একজন যুবতী হিসেবে আপনার বিবাহ স্থির হল এবং আপনি সেখানে গিয়ে বুঝতে পারলেন যে আপনার স্বামী অন্ধ। এটা একটা বিরাট আঘাত। সর্বোপরি যদি একটু পেছনে ফিরে দেখেন, তার জন্ম কুণ্ডলী বলছে, "যিনিই তাকে বিবাহ করবেন তিন মাসের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটবে"। যখন তার বাবা-মা এবং ভাইয়েরা জানতে পারলেন যে তারা তার বিবাহের আয়োজন করতে পারবেন না তখন তাকে অনেক রকম অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। আর বিশেষতঃ সেই রকম পরিবারে যেখানে শকুনির মত ভাই আছে, অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকবে। 

তারপর একটা ছাগলের সঙ্গে বিয়ের লজ্জা, তারপর নিজের "স্বামীকে" হত্যা করা, তারপর পরবর্তী স্বামীকে আগের বিয়ের ঘটনা না বলে ঠকানো, তারপর সেখানে গিয়ে বুঝতে পারা যে তার স্বামী প্রকৃতপক্ষে অন্ধ। এসব লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এইসব কিছু মনের উপর যে প্রভাব ফেলে - তা খুব ছোট একটা ব্যাপার নয়। আজকের সমাজে আপনি শিক্ষিত। আপনি বলতে পারেন, "গোল্লায় যাক এই বিয়ে - আমি চলে যাব, অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করব"। তখন পরিস্থিতি এরকম ছিল না। পাঁচ হাজার বছর আগে, হয় আপনি বিয়ে করে নিজের জীবন গড়লেন অথবা আপনার কোন জীবন নেই। 

সর্বোপরি একজন অন্ধ মানুষের সঙ্গে বাস করা মানে আপনাকে তার জন্য সমস্ত কিছু করে দিতে হবে। কিন্তু আপনি যদি অন্ধ হন, সবাই আপনার জন্য সবকিছু করে দেবে। মার্ক টোয়েন একথা বলেছিলেন, "কোন কিছু করতে কোনদিনই শিখবেন না: আপনি যদি না শেখেন তাহলে আপনি সবসময়ই অন্য কাউকে খুঁজে পাবেন আপনার জন্য কাজগুলো করে দিতে।" রাজরানী হওয়ার কারণে, গান্ধারীর সমস্ত কিছুর জন্য যত্ন এমনিতেই নেওয়া হয়। আমি পুরো ব্যাপারটাকে পরিহাস করতে চাইছি না। এরকম অনেককিছু বিষয় সম্বন্ধে তিনি ভেবেছিলেন। মানুষের মন সবকিছুই বিচার করে। এদিক থেকে কেউই নির্দোষ নন। 

আরেকটি দিক হল, যখন আপনি সচেতনভাবে অন্ধ থাকাটা বেছে নেন, তখন এর সাথে যে মহত্ত্ব জড়িয়ে থাকে তা অবিশ্বাস্য। কি অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার! আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লোকে বলবে, "বাহ্! কি বিস্ময়কর নারী! উনি স্বামীর জন্য অন্ধ হয়ে জীবন কাটান।" আপনি যদি একজন অনুভূতিশীল নারী হন এবং মানুষটিকে সত্যিই ভালোবাসেন, যদি আপনার মস্তিষ্কে অনুভূতি আর হৃদয়ে ভালোবাসা থাকে, তাহলে আপনারই তার চক্ষু হওয়া উচিত। কিন্তু তিনি অন্য পথটি নিয়েছিলেন, কারণ ত্যাগ স্বীকারের মধ্যে আত্মগৌরব আছে। প্রতিদিন সকালে উঠে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করার মধ্যে কোন আত্মগৌরব নেই। কিন্তু চোখে পট্টি বাঁধার মধ্যে একটা আত্মগৌরব আছে। এখন দুজনকেই সাহায্য করা প্রয়োজন। 

আর একবার যখন আপনি কোন সার্বজনিক প্রতিজ্ঞা করেন, আপনি আর সেটা ফিরিয়ে নিতে পারেন না। রানী হিসেবে এমনকি আপনার স্নানঘরেও আপনি চোখের পট্টি সরাতে পারবেন না, কেননা সহকারীরা সমস্ত জায়গায় আপনার জন্য অপেক্ষারত। আপনি যদি একজন একান্ত ব্যক্তি হতেন তাহলে অন্তত স্নানঘরে আপনি বন্ধনীটা খুলে নৃত্য করতে পারতেন। এইসব কিছু বিচার করেই তিনি ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। একবার যখন এরকম একটি পদক্ষেপ আপনি নিয়েছেন, সে যতই খারাপ হোক না কেন- শুরু শুরুতে আপনি ঘ্যান ঘ্যান করবেন; আপনি প্রাণপণ চেষ্টা করবেন; আপনি বিষন্নতায় ভুগবেন; আপনি লড়াই করবেন। কিন্তু একবার যখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে এর থেকে বেরোবার কোন রাস্তা নেই, তখন আপনি দেখবেন কিভাবে এই অবস্থার যথা সম্ভব সদ্ব্যবহার করা যায়। কারণ বুদ্ধিমত্তা সর্বদাই কাজ শুরু করে দেয় যে কোনও ভাবে অবস্থার যথাসম্ভব সদ্ব্যবহার করতে। 

তিনি ভাবলেন, "যাই হোক না কেন আমি অন্ধ হয়ে থাকা বেছে নিয়েছি - এখন আমি আমার অন্ধত্বকে ব্যবহার করতে চাই আমার নিজের মঙ্গলার্থে"। এটা এমন কি একটা ভাবনাও নয় - জীবন প্রকৃতিগতভাবেই সেই দিকে ধাবিত হয়। যদি প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে জীবনে পরস্পর বিরোধীতার মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপনের প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমত্তা না থাকতো, এতদিনে প্রতিটা মানুষেরই মন ভেঙে যেত। 

To be continued..

More Mahabharat Stories

Editor’s Note: A version of this article was originally published in the Forest Flower magazine, June 2019. To subscribe online, click here. The Mahabharat series is based on Sadhguru’s talks during the one-time Mahabharat program that took place in February 2012 at the Isha Yoga Center. Through the lives and stories of the varied characters, Sadhguru takes us on a mystical exploration into the wisdom of this immortal saga.