প্র: কে ছিলেন সেই প্রথম প্রকৃত চেতনাশীল মানুষ ? মনুষ্য চেতনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় কেমন ছিল পৃথিবীর পরিস্থিতি যখন তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন?

সদগুরু: যোগের পরম্পরা অনুযায়ী, শিবকে ভগবান বলে দেখা হয় না, বরং দেখা হয় আদিযোগী বা প্রথম যোগী হিসেবে এবং আদি গুরু বা প্রথম গুরু হিসেবে। তিনি যোগ-বিজ্ঞান তার সাত শিষ্য - সেই সপ্তঋষিগণের মধ্যে সঞ্চারিত করলেন - কান্তি সরোবরের তীরে, সেই হ্রদ যা হিমালয়ের কেদারনাথের কয়েক কিলোমিটার উপরে। সেটাই ছিল প্রথম যোগ কর্মশালা। কিছু লোকে বলেন এটা ঘটেছিল ৬০,০০০ বছর আগে। অন্যরা বলেন ৩০ বা ৩৫,০০০ বছর আগে। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত যে অন্তত ১৫,০০০ বছর আগে।

মানুষের পরম প্রকৃতির দিকে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, অগ্রসর হওয়াকে তিনি সম্ভব করেছিলেন।

আদিযোগীর আগে চেতনাশীল কেউই কি ছিলেন না? আমি নিশ্চিত কেউ না কেউ ছিলেন যিনি চেতনাশীল ছিলেন। কিন্তু সচেতন হওয়া এক জিনিস, জানা আরেক জিনিস, আর কী করে জানতে হয় তার এক সুসংগঠিত পদ্ধতি সৃষ্টি করা এক সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।

আদিযোগী শুধু এই জন্য তাৎপর্যপূর্ণ নন যে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, বরং এই কারণে যে তিনি সেই সম্ভাবনাকে তার তৈরি করা পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে সকলের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। মানুষের পরম প্রকৃতির দিকে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, অগ্রসর হওয়াকে তিনি সম্ভব করেছিলেন। অস্তিত্বের বিভিন্ন মাত্রাকে সুস্পষ্টভাবে অনুসন্ধান করে, একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি তৈরি করেন, যা কিনা মানব কল্যাণের এক শাস্ত্র বা এক বিজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ১১২টি মৌলিক উপায় ব্যাখ্যা করেন, এবং সেটির থেকে অনেক শাখা-প্রশাখা তৈরি হয়েছে যেগুলো আজ প্রচলিত। তার আগে, বা তার পরে আর কেউ এত স্পষ্ট ভাবে ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করেননি। সেই জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

সদা প্রস্তুত!

আদিযোগী যখন আবির্ভূত হয়েছিলেন তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল? যোগের লোককথা যে কেবলমাত্র তিনি যখন বসে আছেন সেই সময় ছাড়া আদিযোগী ভাব সবসময় “সদা প্রস্তুত”। তাঁকে বর্ণনা করা হয় এই ভাবে যে তাঁর হাতে এক অস্ত্র, আর তা-ই সেই সময়ের সমাজের প্রকৃতি বর্ণনা করে। আদিযোগী যে সময়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, আপনি যদি সেই সময়টার দিকে ফিরে তাকান তাহলে দেখবেন, স্পষ্টতই মানুষ পরিষ্কার ভাবে আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করা উপজাতি বা সামাজিক গোষ্ঠীর পরিচয় নিয়ে বসবাস করত। প্রকৃত পরিস্থিতি সম্বন্ধে আমাদের যা জানা আছে তা সামান্যই, কিন্তু আমরা জানি মানুষের মন কী ভাবে কাজ করে। আমরা অনুমান করতে পারি মানুষকে যদি এক বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে রেখে দেওয়া হয়, তারা এই রকম ভাবে কাজ করবে। আত্মরক্ষার সহজাত প্রবৃত্তি সেই সময় জোরাল ছিল। ধরে নেওয়া যায় এটাই স্বাভাবিক ছিল যে মানুষ যখন তার সীমানা পার করত, তখন তা মৃত্যুর কারণ হত। স্বাভাবিকভাবেই তখন লড়াই হত, আর আদিযোগী নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি যতটা স্থির হয়ে বসে থাকা এক যোগী ছিলেন, ততটাই এক যোদ্ধা ছিলেন।

ভয় পেয়ে মানুষ তার চারিপাশে জড় হন নি, তারা জড় হয়েছিল এই ভেবে যে তার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যেতে পারে, তাদের সাধারণ মানব সত্তার অতিরিক্ত কিছু।

কিন্তু, আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি জোরাল হলেও, তবুও সেই সংস্কৃতিতে কোথাও একটা অজানাকে জানার ব্যাকুলতা নিশ্চয়ই মানুষের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। যখন তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করলেন, বহু মানুষ - সেই সাত জন যাঁদের আজ আমরা সপ্তঋষি বলি তারাও - কৌতুহলের বশে জড় হলেন। তাদের মধ্যে যদি অজানাকে জানার প্রবৃত্তি না থাকত, তাহলে তারা আসতেন না। তারা নিশ্চই এটা বুঝেছিলেন যে আদিযোগী সেই ব্যাপারগুলো জানেন যেগুলো তারা খোঁজ করছেন।

নিজের পরম প্রকৃতিকে জানার আকুতি পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশেই প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে পায় নি, কিন্তু এই সমাজ-সংস্কৃতিতে পেয়েছিল। আমার মনে হয় সেই সময়কার সমাজ নিশ্চয়ই এক স্থিতিশীল সমাজ ছিল, যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পরিণত হয়ে উঠেছিল এবং বুঝেছিল যে বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি আমাদের সম্পূর্ণ করে না - আমাদের ভিতরকার অন্য মাত্রাগুলিকে (তাই) আমাদের শক্তি জোগাতে হবে যেগুলি সবসময় চাইছে অসীম হয়ে উঠতে আর বাধাহীনভাবে বেড়ে চলতে। আমরা জানি না ঠিক কতটা, কিন্তু আধ্যাত্মিক উপলব্ধি তখন অবশ্যই এসে গিয়েছিল। ভয় পেয়ে মানুষ তার চারিপাশে জড় হন নি, তারা জড় হয়েছিল এই ভেবে যে তার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যেতে পারে, তাদের সাধারণ মানব সত্তার অতিরিক্ত কিছু।