সুখী দাম্পত্যের পাঁচটি উপকরণ
সুখী, মধুর ও লাবণ্যময় দাম্পত্যের মৌলিক উপাদান কোনগুলি ? আলোচ্য নিবন্ধে রয়েছে বিবাহিত সম্পর্ককে অতীব উপাদেয় করে তোলার জন্য পাঁচটি আবশ্যক উপকরণ।
১) ভালবাসায় পরিপূর্ণ দুটি হৃদয় :
ইংরাজি অভিব্যক্তি “falling in love” অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, প্রেমে আরোহণ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়; ভালবাসায় উড়ে যাওয়া বা হাঁটাচলা করা বা উঠে দাঁড়ানো তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রেমজ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তোমার পতন অনিবার্য, তার কারণ, ভালবাসার সম্পর্কে তোমার নিজ ব্যক্তিত্বের কোনও একটি অংশ অদৃশ্য হয়ে যায়। তুমি যে অপর এক জনের জন্য নিজের আমি’র সামান্য একটু অংশও বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক থাকো, তার অর্থ হল সেই মুহূর্তে তোমার আমি’র চেয়ে অপর ব্যক্তিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তুমি যাকে ‘আমি’ বলো, সেই ‘আমি’টি বা তোমার ‘আমি’ বোধটি যখন লোপ পেয়ে যায়, তখনই তোমার ভিতর থেকে উৎসারিত হয় ভালবাসার অনাবিল অনুভূতি।
২) পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে উদারতা :
উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে, অপরকে বোঝার ক্ষেত্রে তোমাকে তত বেশী সচেষ্ট হতে হবে। বিপরীতে থাকা মানুষটিকে তুমি যত ভাল বুঝতে শিখবে, তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্কটিও তত বেশী ঘনিষ্ঠ ও মধুর হয়ে উঠবে। তোমার উল্টো দিকের মানুষটির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটবে। তোমাকে সে যত বেশী তোমার মতো করে বুঝবে, তত বেশী সে তোমার প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠবে। অপর ব্যক্তিটি শুধু তোমাকে বুঝবে, শুধু সেই তোমাকে সর্বদা মানিয়ে চলবে, তুমি তার আশা, চাহিদা, দক্ষতা বা সীমাবদ্ধতাকে এতটুকুও বোঝার চেষ্টা করবে না – এই যদি তোমার একান্ত ইচ্ছা হয়, সেক্ষেত্রে সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত বা বিবাদ অনিবার্য হয়ে উঠবে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু ভাল ও কিছু খারাপের মিশেল থাকে। তুমি যদি অপর ব্যক্তিটিকে ঠিক তার মতো করেই বুঝতে বা গ্রহণ করতে সক্ষম হও, তাহলে সম্পর্কটিকে তুমি তোমার মতো করেই উপভোগ করতে পারবে। কিন্তু তা না করে, সম্পর্ককে সুন্দর করে তোলার দায় যদি তুমি শুধু অন্যের বোধবুদ্ধির হাতে ছেড়ে দাও, তা হলে সম্পর্কটি দুর্ঘটনার মুখে পড়বেই পড়বে।
তোমার বিপরীতের ব্যক্তিটি যদি উদারচিত্তের মহানুভব হয়, সেক্ষেত্রে সম্পর্কটি তোমার জন্য সুখকর হলেও হতে পারে। কিন্তু তা যদি না হয়, সম্পর্কটি ভেঙ্গে যেতে বাধ্য। ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, অপর ব্যক্তিটি সম্পূর্ণ নির্বোধ বা পুরোপুরি তোমার বোধের অগম্য। তোমার কাজ হল, এমন একটি সুস্থ, সুন্দর বোঝাপড়ার পরিসর তৈরি করা যেখানে অপর ব্যক্তিটিও তোমাকে ঠিক তোমার মতো করেই বুঝতে সক্ষম হবে।
৩) সম্পর্ককে প্রাণবন্ত রাখা :
একবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তারপর সেটিকে সারাজীবনের জন্য ভুলে যাওয়া – বিবাহিত সম্পর্ককে এভাবে চূড়ান্ত স্থবির করে রাখা খুব কাজের কথা নয়। বিবাহিত জীবনে উভয়কেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়। দুটি সম্পূর্ণ পৃথক মানুষ পরস্পরের সান্নিধ্যে আনন্দঘন যৌথ জীবন উপভোগের সাধারণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুটি ভিন্ন মানুষের পরস্পরের সঙ্গে এক হতে চাওয়ার এই চাহিদাকে নান্দনিক সৌকর্যে মুড়ে রাখার জন্যই বিবাহের প্রয়োজন হয়।
আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিবাহের দিনটিকে বছরে একবার স্মরণ করার প্রথা বহুকাল ধরেই বহমান। উভয়ের উভয়ের প্রতি দায় ও দায়িত্বের কথা নতুন করে স্মরণের উদ্দেশ্যেই ওই নির্দিষ্ট দিনটির উদযাপনের প্রথা প্রচলিত। এক অর্থে এটি আরও একবার নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সামিল। সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যৌথ জীবনের শুরু হয়, বিবাহিত জীবনকে প্রাণবন্ত করে রাখার ক্ষেত্রেও সচেতন প্রয়াস জরুরি।
৪) আনন্দের অনুভূতি - উষ্ণতার উৎস :
দুটি মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া দাম্পত্য সম্পর্ককে মধুর, লাবণ্যময় করে তুলতে গেলে প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের অন্যের দিকে তাকানোর আগে আত্মবীক্ষণ বা নিজেকে গভীর ভাবে খুটিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। তুমি যদি নিজেই নিজেকে আনন্দের উৎসে পরিণত করতে সক্ষম হও, তোমার কাছে সম্পর্কের অর্থ নিজের আনন্দকে অন্যের সঙ্গে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হয় – জগতের যে কোনও মানুষের সঙ্গেই তোমার প্রীতিকর সম্পর্ক তৈরি হওয়া সম্ভব। তুমি যদি তোমার আনন্দকে ভাগ করে নিতে চাও অন্যের সঙ্গে, পৃথিবীর কোনও মানুষের কাছেই কি তুমি সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে ? না, একেবারেই নয়। যদি তুমি অপর একজন ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে নিবিড় ভাবে অনুভব করতে চাও, সেক্ষেত্রে কোনও ভাবেই তোমার বিবাহিত জীবন ‘তুমি’ কেন্দ্রিক বা তোমার ‘আমি’ কেন্দ্রিক হওয়া চলবে না, অপর মানুষটির গুরুত্বই সেখানে সর্বাধিক হওয়ার কথা। যদি তোমরা উভয়েই এই ভাবনা ও অনুভবের শরিক হও, তাহলে বিবাহিত সম্পর্কটি কৃত্রিম আয়োজনের সীমানা পেরিয়ে একাত্ম মিলনের দ্যোতক হয়ে ওঠে।
৫) অন্যের কাছে নিবেদন করো :
অসংখ্য চাহিদা পূরণ করার নামে অন্যের সুখ ছিনিয়ে নিয়ে তুমি সুখী হবে – এই যদি তোমার দাম্পত্যের নমুনা হয়, তোমার জীবনে স্বর্গসুখ কেউ এনে দিতে পারবে না, অনিবার্য নিয়মেই তুমি আশাহত হবে। অধিকাংশ মানুষ বিবাহিত জীবনকে নিজেরাই নরক গুলজারে পরিণত করে বলেই দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বর্গের অনুষঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। অন্যের জীবন থেকে কিছু না কিছু শুষে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইলে, যত চেষ্টাই তুমি করো না কেন, বিঘ্ন, বিপর্যয় তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকবে। এর পরিবর্তে, নিজের সুখ, শান্তি, হাসি, আনন্দের অনুভূতিকে অন্যের কাছে নিবেদন করে দেখো, বিবাহত জীবন মনোরম ও প্রীতিকর অভিজ্ঞতার আধার হয়ে উঠবে।।
Editor’s Note:আমরা আশা রাখি, উল্লিখিত পাঁচটি উপকরণ প্রতিটি বিবাহিত নরনারীর জীবনকে মধুর ও লাবণ্যময় করে তুলতে সাহায্য করবে।
For more of Sadhguru’s insights, follow him on Twitter or facebook. Or get the latest Isha Blog updates through rss or browser extensions.