একজন সাধক আধ্যাত্মিক পথে বিশেষ অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। যারা কোন "স্তরে" পৌঁছেছেন তা নিয়ে জানতে উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য সদগুরু উপদেশ দেন- উদ্বেগ এবং প্রত্যাশাকে পিছনে ছেড়ে দিন, কেবল সাধনাটি করে যান!

প্র: আমি বিগত দেড় বছর ধরে যোগা অভ্যাস করছি। আমি যতবেশি অপেক্ষা করি, এটি ততবেশি হতাশাজনক হয়ে যাচ্ছে। আমি কি করে জানব যে আমি আধ্যাত্মিক পথের কোথায় রয়েছি? আমি কোন স্তরে পৌঁছেছি?

সদগুরু: সমস্ত স্তরই আপেক্ষিক। আপনি অন্য কারও থেকে একধাপ উপরে যেতে চান যিনি মাত্র এক বছর আগে শুরু করেছিলেন? যতক্ষণ এই স্তরের-ব্যাপারটি আপনার মাথায় রয়েছে ততক্ষণ আধ্যাত্মিকতা নেই। যখন হতাশা পর্যাপ্ত মাত্রায় তৈরি হয়, যখন আপনি ভাবেন, "যোগা চুলোয় যাক, আমি এমনিতেও কোথাও যাচ্ছি না," কেবল এটি করে যান। পুরো যোগ প্রক্রিয়াটি এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যাতে সতর্কতা ছাড়া আপনি এটি না করতে পারেন। যেদিন আপনি কোথাও পৌঁছোতে আগ্রহী না হয়ে সতর্ক থাকবেন, যখন আপনি কেবল একটি সাধারণ প্রক্রিয়া করে যাবেন, তখন আপনার মধ্যে কিছুর বিস্ফোরণ ঘটবে। যতক্ষণ আপনি ভাবতে থাকবেন, "আমি কোন স্তরে রয়েছি? আমি কি অন্যের থেকে এগিয়ে আছি?" আপনি এখনও ইঁদুর দৌড়ে রয়েছেন - আপনি কোথাও পৌঁছোবেন না। কাজেই স্তরের কথা ভুলে যান।

বন্ধন নাকি মুক্তি?

যুক্ত থেকেও আটকে না থাকা হলো মূল কথা। সকালে কেবল আপনার যোগ-অনুশীলন করে যান। এবং সারাদিন আপনাকে অন্যান্য যেসব কথা শেখানো হয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আপনাকে এটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন আপনার জীবনের প্রতিটি দিকই যোগা হয়ে ওঠে। বসা, দাঁড়ানো, খাওয়া, ঘুমানো - সবকিছুই যোগা। যোগের অর্থ যা আপনাকে আপনার উচ্চতর প্রকৃতিতে পৌঁছোতে দেয়। হয় আপনি নিজের দেহ, মন, আবেগ এবং শক্তিকে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সমস্যা তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন, নয়তো আপনি এই চারটি বিষয়কেই নিজের মুক্তির জন্য ব্যাবহার করতে পারেন -আপনার মধ্যের পরমানন্দ এবং বিস্ময়ের উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তরে চলে যেতে। বন্ধন দশার যন্ত্র এবং মুক্তির যন্ত্র আলাদা নয়।

আপনাদের শরীর, মন, আবেগ এবং শক্তি সবই কাজ করছে, কিন্তু বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে। একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয়তো শরীর প্রভাবশালী, অন্যজনের ক্ষেত্রে মন প্রভাবশালী হতে পারে, আর একজনের হয়তো আবেগ প্রভাবশালী, অন্য কারো ক্ষেত্রে শক্তি প্রভাবশালী হতে পারে। এই মিশ্রণটির অনুপাত প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে অনন্য, তবে উপাদান চারটি একই। আপনি এই চারের সমাহার। যতক্ষন না আপনি এমন যোগা করেন- যা এই চারটি উপাদানকে আপনার জন্য উপযুক্ত অনুপাতে পরিচালনা করে ততক্ষন আপনি অগ্রসর হতে পারবেন না।

সাধনাকে উৎসর্গ করে তুলুন

প্রাথমিক অনুশীলনগুলি মৌলিক দিকগুলি খোলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় নেওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। সেই নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি একটি অঙ্গীকার করেছিলেন। শুধু সেটা করে যান। যদি আপনি কিভাবে এটি শুধুই করতে হয় তা না জানেন, তবে এটিকে অঞ্জলি অর্পণের মতো করে করুন। "এটা আমার জন্য নয়। আমি কেবল প্রতিদিন এই যোগা করে যাবো আমার গুরুর প্রতি উৎসর্গ করে।” আপনার মধ্যে এই ইঁদুর দৌড় সরানোর এটি একটি সহজ উপায়।

সাধনাকে উৎসর্গ করে তোলা, এই নিরর্থক ভাবনা বন্ধ করার এবং কেবলমাত্র এটি করে যাওয়ার একটি সহজ উপায়।

এটি একটি অন্তহীন চিন্তার প্রক্রিয়া হয়ে যাবে যদি আপনি প্রশ্ন করে যান "আমি কোন স্তরে আছি? আমার আগে বা পরে শুরু করেছে এমন কারও চেয়ে কি আমি ভাল?" সাধনাকে একটি উৎসর্গ করে তোলা এই নিরর্থক ভাবনা বন্ধ করার এবং কেবল এটি করে যাওয়ার একটি সহজ উপায়। এটি আধ্যাত্মিকতা বা অন্য যে কোনও বিষয়ই হোক না কেন, আপনি চাইছেন বলেই জীবন সেটা দেবে না। জীবন আপনাকে ফল দেয় কারণ আপনি নিজেকে উপযুক্ত করে তোলেন। এটা অর্থ, প্রেম বা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন, এই জগতের যে কোনও কিছুই আপনার কাছে আসে কারণ আপনি সঠিক কাজগুলি করেন, অন্যথায় সেটা হবে না।

এক দিন এক ব্যক্তি সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে যান, গলা অবধি নোংরা ঢেকে ছিল। তিনি মরিয়া হয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। কিছুক্ষণ পর তিনি চিৎকার শুরু করলেন, "আগুন, আগুন!" প্রতিবেশীরা আগুনের কথা শুনে ফায়ার ব্রিগেডকে ডাকেন - যারা তৎক্ষণাৎ ছুটে এসেছিল। তারা পুরো জায়গাটা দেখলেন- কোনো আগুন নেই। তারপরে তারা সেপটিক ট্যাঙ্কে এই লোকটিকে দেখতে পেলেন, তাকে টেনে বের করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি আগুন আগুন বলে কেন চিৎকার করছেন? আগুন কোথায়?" তখন লোকটি জবাব দেয়, "আমি যদি বলতাম ‘মল মল,’ আপনি কি আসতেন?" আপনাকে সঠিক জিনিসগুলি করতে হবে, অন্যথায় আপনার সাথে সঠিক জিনিসগুলি ঘটবে না।

Editor’s Note: Offering the rare possibility to go beyond all limitations, Sadhguru takes the seeker on a mystical journey towards ultimate liberation. In the ebook “A Guru Always Takes You For a Ride”, Sadhguru delivers rare insights into the Guru-shishya relationship. Name your price and download.

A version of this article was originally published in Isha Forest Flower June 2009.