রুদ্রাক্ষ কী?

রুদ্রাক্ষ হল 'এলাইওকার্পাস গণিট্রাস' গাছের বীজ এবং এটি আধ্যাত্মিক সাধকের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সদগুরু বিভিন্ন প্রকারের রুদ্রাক্ষ এবং তাদের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করছেন, যার মধ্যে একমুখী ও পঞ্চমুখীও রয়েছে।
সদগুরু: রুদ্রাক্ষ হল একটি বিশেষ প্রকার গাছের বীজ যা সাধারণত পাহাড়ের নির্দিষ্ট উচ্চতায় হয়ে থাকে - প্রধানত হিমালয় অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই গাছগুলির বেশিরভাগই রেললাইনের স্লিপার তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ভারতে এদের খুব কমই আর অবশিষ্ট রয়েছে। বর্তমানে এগুলি বেশিরভাগ নেপাল, বার্মা, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। এগুলো দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাটের কিছু অঞ্চলে রয়েছে কিন্তু সর্বোচ্চ মানের রুদ্রাক্ষ আসে হিমালয়ের একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে; কারণ কোনও না কোনওভাবে মাটি, আবহাওয়া এবং সবকিছু একে প্রভাবিত করে। এই বীজ গুলোর খুবই অনন্য এক স্পন্দন রয়েছে।

কোন রুদ্রাক্ষ আপনার পরা উচিত? একমুখী ও পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ এবং আরও অনেক কিছু

একটি বীজের এক থেকে একুশটি পর্যন্ত মুখ থাকতে পারে। এগুলি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, সুতরাং কেবল মাত্র দোকান থেকে কিছু একটা কিনে নেওয়া এবং এটি শরীরে ধারন করা অনুচিত হবে। ভুল প্রকারের রুদ্রাক্ষ ধারন করলে একজনের জীবনে বিশৃংখলা আসতে পারে। অনেক লোক একমুখি রুদ্রাক্ষ পরতে চান, যার কেবলমাত্র একটি মুখ আছে; কারণ এটি খুবই শক্তিশালী। আপনার নিজের অনেকগুলো চেহারা আছে। যখন আপনার নিজেরই অনেকগুলো চেহারা রয়েছে, যদি আপনি এক মুখী রুদ্রাক্ষ পরেন, আপনি নিজের বিপদ ডেকে আনছেন।

পাঁচ- মুখী বীজ অথবা পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ পুরুষ,মহিলা এবং শিশু- সকলের জন্য নিরাপদ এবং ভাল।

একথা বলা হয় যে যদি আপনি একমুখী রুদ্রাক্ষ পরেন, আপনি বারো দিনের ভেতর আপনার পরিবার ত্যাগ করবেন। আপনি পরিবার ত্যাগ করছেন কি করছেন না সেটা সমস্যা নয়, কেবলমাত্র এই যে এটি আপনার শক্তিকে এমনভাবে তৈরি করবে যে আপনি একা থাকতে চাইবেন। এটি আপনাকে অন্যদের সাথে স্বচ্ছন্দ থাকতে দেয় না। আপনার যদি অন্য রকমের বিশেষ ধরনের রুদ্রাক্ষ পরতে হয়, সবথেকে ভালো হবে এটি এমন একজনের থেকে গ্রহণ করা- যিনি এই ব্যাপারগুলো জানেন, শুধুমাত্র দোকান থেকে কিনে নিজে পরে ফেলা নয়।

পাঁচ-মুখী বীজ বা পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ পুরুষ, মহিলা এবং শিশু- সকলের জন্য নিরাপদ এবং ভালো। এটি সামগ্রিক কল্যাণ, স্বাস্থ্য এবং স্বাধীনতার জন্য। এটি আপনার রক্তচাপ কমায়, আপনার স্নায়ুগুলো শান্ত করে এবং আপনার স্নায়ুতন্ত্রে এক বিশেষ প্রশান্তি এবং সতর্কতা আনে। চোদ্দো বছরের কমবয়সী শিশুরা ছয়-মুখী রুদ্রাক্ষ পরতে পারে। এটি তাদের শান্ত হতে ও অধিক মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি তারা বড়দের থেকে সঠিক রকমের মনোযোগ পাবে।

'গৌরী-শংকর' একটি বিশেষ প্রকারের রুদ্রাক্ষ যা আপনার ঈড়া ও পিঙ্গলার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসে। সাধারণত লোকে বিশ্বাস করে যে এটি তাদের সমৃদ্ধি এনে দেবে। সমৃদ্ধি মানে যে একমাত্র অর্থই হবে, তা নয়। এটি বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে। আপনার নিজস্ব কিছু নাও থাকতে পারে কিন্তু তবুও আপনি আপনার জীবনে সমৃদ্ধ হতে পারেন। আপনি যদি একজন ভারসাম্য যুক্ত মানুষ হন এবং আপনি আপনার জীবনে সংবেদনশীল ভাবে কাজ করেন, তবে সমৃদ্ধি আসতেই পারে। এটি তখনই হয় যখন আপনার শক্তি গুলো ঠিকভাবে কাজ করে। 'গৌরী-শংকর' আপনার ঈড়া এবং পিংগলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং এদের সক্রিয় করে তোলে।

আপনি যদি আপনার জীবনকে পরিশুদ্ধ করতে চান, রুদ্রাক্ষ একটি ভাল সরঞ্জাম এবং সহায়তা, এই পথের একটি ছোট্ট অবলম্বন। যখন কেউ আধ্যাত্মিক পথে চলেন, তিনি নিজের উন্নতির জন্য প্রতিটি ছোট অবলম্বন ব্যবহার করতে চান এবং এটি অবশ্যই একটি ভালো অবলম্বন। একজন গুরু সাধারণত বিভিন্ন ধরনের মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাবে রুদ্রাক্ষে শক্তি সঞ্চার করেন। গৃহস্থী লোকেদের জন্য এটিতে একরকম ভাবে শক্তি সঞ্চার করা হয়। আপনি যদি একজন ব্রহ্মচারী বা সন্যাসী হতে চান, এটাতে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে শক্তি সঞ্চার করা হয়। গৃহস্থ লোকেদের এরকম বিশেষ ভাবে শক্তি সঞ্চার করা কিছু পরা উচিত নয়।

রুদ্রাক্ষ পরার উপকারিতা কী?

এমন একজন, যাকে সবসময় বাইরে যেতে হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় খেতে ও ঘুমোতে হয়, রুদ্রাক্ষ তাদের জন্য খুবই ভালো একটি অবলম্বন। কারণ এটি আপনার নিজের শক্তিরই একটি কোকুন বা খোল তৈরি করে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে যখন আপনি কোন নতুন জায়গায় যান, তখন কখনো কখনো আপনি খুব সহজে ঘুমিয়ে পড়েন, আবার অন্য কিছু জায়গায় আপনি শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকলেও ঘুমোতে পারেন না। এর কারণ হল যদি আপনার চারপাশের পরিস্থিতি আপনার শক্তির অনুকূল না হয়, তবে এটি আপনাকে স্থির হতে দেবে না। যেহেতু সাধু এবং সন্ন্যাসীরা নিরন্তর ভ্রমণ করেন, কোন স্থান ও পরিস্থিতি তাদের জন্য অসুবিধে সৃষ্টি করতে পারে। তাদের নিয়মের মধ্যে একটি ছিল যে একই জায়গায় তারা দুবার মাথা রাখতে পারবেন না। আজকাল আবার লোকজন তাদের ব্যবসায় বা পেশার কারণে বিভিন্ন জায়গায় খাওয়া এবং ঘুমোতে শুরু করেছেন, কাজেই একটি রুদ্রাক্ষ সহায়ক হতে পারে।

আরেকটি বিষয় হ'ল, সাধু বা সন্ন্যাসীরা যারা জঙ্গলে থাকেন তারা যে কোনও জলাশয় থেকে জল পান করতে পারেন না কারণ প্রকৃতিতে অনেক সময় জল কিছু বিশেষ গ্যাসের দ্বারা বিষাক্ত বা দূষিত হতে পারে। যদি তারা এটি পান করে ফেলেন, তবে এটা তাদের পঙ্গু করতে বা মেরে ফেলতে পারে। জলের উপরে যদি রুদ্রাক্ষ ধরা হয়, জল যদি ভালো এবং পানযোগ্য হয়, এটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরবে। যদি এটি বিষাক্ত হয়, এটা ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরবে। এটি খাবারের মান পরীক্ষা করারও একটি পদ্ধতি। আপনি যদি একে ধনাত্মক প্রাণিক বস্তুর উপর ধরেন, এটি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরবে। আপনি যদি একে ঋণাত্মক প্রাণিক বস্তুর ওপর ধরেন, এটি ঘড়ির -কাঁটার বিপরীতে ঘুরবে।

রুদ্রাক্ষ মালা ব্যবহারের নির্দেশিকা গুলো কি কি?

সাধারণত বীজগুলোকে মালার মত একসাথে গাঁথা হয়। পরম্পরা গত ভাবে তারা বিশ্বাস করেন বীজের সংখ্যা হবে ১০৮ যোগ ১। অতিরিক্ত বীজটি হলো বিন্দু। মালার সাথে সর্বদা একটি বিন্দু থাকতে হবে, অন্যথায় শক্তি চক্রাকারে পরিণত হয় এবং সংবেদনশীল লোকেরা চঞ্চল হয়ে উঠতে পারেন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৮৪ টি + একটি বিন্দু - এর কম সংখ্যক বীজের মালা পরা উচিত নয়। এর ওপরে যে কোন সংখ্যা ঠিক আছে।

যদি আপনি ঠান্ডা জলে স্নান করেন এবং কোন রাসায়নিক সাবান ব্যবহার না করেন, এটির উপর দিয়ে জল গড়িয়ে এলে আপনার শরীরের জন্য এটি বিশেষভাবে ভালো।

যখন আপনি ওগুলোকে গাঁথেন, ওগুলো সিল্ক অথবা কটনের সুতো দিয়ে গাঁথা সবথেকে ভালো। আপনি যদি এটিকে সুতো দিয়ে পরেন তাহলে প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর সুতো বদলানোর ব্যাপারে যত্ন নেওয়া ভালো। নাহলে একদিন সুতো ছিঁড়ে গিয়ে আপনার ১০৮ টি বীজ চারিদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। যদি আপনি তামা, রুপো অথবা সোনা ব্যবহার করতে চান সেটাও ভালো, কিন্তু অধিকাংশ সময়ে কি হয়, আপনি এটিকে বানাতে জহুরীর কাছে নিয়ে যান। যখন জহুরী সোনার তার অথবা অন্য কিছু দিয়ে গিঁট বাঁধেন, সাধারণত তারা এটিকে খুব শক্ত করে কষে বাঁধেন এবং রুদ্রাক্ষের ভেতরটা ফেটে যায়। আমি দেখেছি, লোকেদের এই কথা গুলো জহুরীকে বলতে বলা সত্ত্বেও, যখন তারা এটি তৈরি করে আমার কাছে পুনরায় নিয়ে আসেন, প্রায় ৩০-৪০% সময় এটা ভাঙা থাকে। এটা ভীষণ জরুরী যে আপনি সুনিশ্চিত করেন যাতে এটি আলগা থাকে। এটাকে খুব আঁটসাঁট করা উচিত নয়, কারণ ভিতরটা যদি চাপে টুকরো হয়ে যায়, সেটা ভালো নয়।

মালা সবসময় পরা যেতে পারে। এমনকি আপনি স্নানের সময়েও এটা পরতে পারেন। আপনি যদি ঠান্ডা জলে স্নান করেন এবং কোন রাসায়নিক সাবান ব্যবহার না করেন, এটার উপর দিয়ে জল গড়িয়ে এলে আপনার শরীরের জন্য এটি বিশেষভাবে ভালো। কিন্তু যদি আপনি রাসায়নিক সাবান এবং গরম জল ব্যবহার করেন, এটি ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ফেটে যায়, তাই এরকম ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার না করাই সবচেয়ে ভালো।

আসল রুদ্রাক্ষ মালা কীভাবে খুঁজে পাবেন?

পরম্পরাগত ভাবে, রুদ্রাক্ষ মালা এমন লোকের দ্বারা কেনা-বেচা হতো যারা তাদের জীবনে এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করতেন। বংশ-পরম্পরায়, তারা কেবল এটাই করতেন। তারা এ থেকে জীবিকা নির্বাহও করতেন, কিন্তু মৌলিকভাবে মানুষকে এটি প্রদান করা, পবিত্র দায়িত্বের মতো ছিল। কিন্তু একবার যখন চাহিদা প্রচুর বেড়ে যায়, তখন ব্যবসা ঢুকে পড়ে। ভারতে আজকাল, বদরাক্ষ নামে আরও একটি বীজ রয়েছে যা একটি বিষাক্ত বীজ, যা উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং ঐসব অঞ্চলে ব্যাপকভাবে জন্মায়। দেখলে পরে, দুটো বীজকে একই রকম দেখায়। আপনি তফাৎ বুঝতে পারবেন না। একমাত্র যদি আপনি এটাকে আপনার হাতের মধ্যে নেন এবং আপনি যদি সংবেদনশীল হন, আপনি পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। এটি শরীরে পরা উচিত নয়, কিন্তু এগুলিকে অনেক জায়গায় খাঁটি বীজ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। কাজেই এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার মালা বিশ্বস্ত জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন।

রুদ্রাক্ষ: নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে একটি ঢাল

এটি নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে এক ধরণের ঢালের মতো। কিছু লোকের পক্ষে অন্য কারো ক্ষতি করার জন্য নেতিবাচক শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব।

এটি নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে এক ধরনের ঢালের মতো। কিছু লোকের পক্ষে অন্য কারো ক্ষতি করার জন্য নেতিবাচক শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব। এটি নিজেই একটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। একটি বেদ, অথর্ব বেদ, পুরোটাই এই নিয়ে যে নিজের লাভের জন্য এবং অন্য কারো ক্ষতি করার জন্য কিভাবে শক্তি ব্যবহার করা যায়। এই বিষয়ে দক্ষতা আছে এমন কেউ যদি এটি ব্যবহার করতে চায়, তবে অনেক কিছুই - চরম যন্ত্রণা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

রুদ্রাক্ষ এসবের বিরুদ্ধে এক ধরণের ঢাল। আপনি ভাবতে পারেন যে কেউ আপনার সাথে নেতিবাচক কাজ করবে না, কিন্তু এটা জরুরী নয় যে এটা আপনাকে লক্ষ্য করেই করা হবে। ধরুন আপনার পাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটির সাথে এটা কেউ করেছিল, কিন্তু সে এটার প্রতি গ্রহনশীল নয় । এখন আপনি যেহেতু ঠিক তার পাশে বসে আছেন, আপনার উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এটা ঠিক এই রকম যখন দু'জন লোক রাস্তায় একে অপরকে গুলি করে, তারা আপনাকে গুলি করতে চায় না, কিন্তু আপনি গুলিবিদ্ধ হতে পারেন। একইভাবে এই জিনিসগুলিও ঘটতে পারে। এটা আপনার উদ্দেশ্যে করা হয়নি, কিন্তু আপনি যদি ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় থাকেন তবে এটা ঘটতে পারে। এইসব ব্যাপার নিয়ে বিরাট কিছু ভয়ের প্রয়োজন নেই, তবে মালা এসবের থেকে এক ধরণের সুরক্ষা।

Read in Other Languages: रुद्राक्ष, రుద్రాక్ష, રુદ્રાક્ષ

 

Editor's Note: Rudraksha malas available at Isha Shoppe are prepared with great care and are consecrated and energized for maximum benefit.