মানুষের জীবনে কি একটিমাত্র সম্পর্ক থাকা উচিত এবং একটি আন্তরিক ও একনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাই কি শ্রেয়- এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সদগুরু।

প্রশ্নকর্তা:: ভগবানের কি এটাই ইচ্ছে যে মানুষের জীবন কালে তাদের কেবলমাত্র একটিই সঙ্গী থাকবে? একজন মানুষের পক্ষে একটি সুন্দর এবং একনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাই কি বেশি ভালো?

সদগুরু: ভগবানের আপনার জন্য কোন ইচ্ছে নাও থাকতে পারে। প্রশ্নটা হল, কোন কাজটা করা আপনার জন্য বিচক্ষণ হবে? এর দুটো দিক আছে - একটা হল সামাজিক। সাধারণত বলা হত "এক পুরুষ - এক স্ত্রী" সমাজের স্থিরতা বজায় রাখার জন্য। বিশ্বের যেসব জায়গায় বলা হত "এক পুরুষ - কয়েকজন স্ত্রী",সেখানে সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে অনেক বেশি শক্ত হাতে শাসন করতে হতো। আমি এ ব্যাপারে আর গভীরে যাব না।

অন্য দিকটি হলো সৃষ্টির সমস্ত কিছুরই স্মৃতি আছে। লক্ষ কোটি বছর আগে কি ঘটেছিল- আপনার শরীর এখনো সেটা সক্রিয়ভাবে স্মরণ রাখে। জেনেটিক্স বা বংশানুক্রম পুরোটাই স্মৃতি। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই শারীরিক স্মৃতিকেই বলা হয় ঋনানুবন্ধ । আপনার স্মৃতিই আপনার চারপাশে সব কিছুর সঙ্গে আপনাকে বেঁধে রাখে। ধরুন আপনি বাড়ি গেলেন আর ভুলে গেলেন কে আপনার বাবা এবং মা, তখন আপনি কি করবেন? আপনার রক্ত বা ভালোবাসা নয়, আপনার স্মৃতিই আপনাকে বলে দেয় এই ব্যক্তিটি আপনার মা, না বাবা। একমাত্র স্মৃতিই আপনার সম্পর্ক এবং বন্ধন -এর প্রসার ঘটায়। আপনি যদি আপনার স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন, সবাইকে আপনার একেবারে অচেনা বলে মনে হবে।

মনে করবেন না যে 'ব্রেন' হল মনের ব্যাপার - ব্রেন হল শরীর।

আপনার শরীরের স্মৃতির তুলনায় আপনার মনের স্মৃতি কণা মাত্র। আপনি যদি কোন কিছুকে বা কাউকে শুধুমাত্র একবার স্পর্শ করেন, মন সেটা ভুলে যেতে পারে, কিন্তু শরীরে সেটার স্মৃতি চিরকালের জন্য থেকে যায়। মানুষেরা যখন একে অপরের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করে, মন হয়তো সেটা ভুলে যেতে পারে কিন্তু শরীর কখনও ভোলে না। যদি আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে যতই ঘৃণা করুন না কেন - তবুও আপনি যন্ত্রণা ভোগ করবেন কেননা শরীরের স্মৃতি কখনোই হারিয়ে যায় না।

এমনকি আপনি যদি শুধু কারো হাতটা কিছু সময়ের জন্য অন্তরঙ্গভাবে ধরে থাকেন- সেটাও শরীরের স্মৃতিতে চিরদিন থেকে যাবে, কেননা আপনার হাতের তালু এবং পায়ের পাতা অত্যন্ত কার্যকরী গ্রাহক। যখনই আপনি এমন কাউকে দেখেন যার সঙ্গে আপনি জড়িয়ে পড়তে চান না, তখন শুধুমাত্র "নমস্কার" করুন, কেননা যখন আপনি দুহাত একসঙ্গে করেন (অথবা পায়ের দুটো বুড়ো আঙুল একসঙ্গে করেন), এটা আপনার শরীরকে স্মৃতি জড়ো করতে দেয়না।

চিন্তাধারাটা হল শারীরিক স্মৃতিকে ন্যূনতম রাখা, কারণ তা নাহলে আপনাকে উপলব্ধির অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যাওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়ে। যারা অতিরিক্ত আমোদ-প্রমোদে ডুবে থাকেন, তাদের মুখে একটা আত্ম -অহংকারের হাসি থাকে; তবে তাদের মধ্যে কোন আনন্দ নেই। এসবের থেকে মুক্ত হতে হলে অনেক বেশি কাজ করতে হয়, কারণ শারীরিক স্মৃতি আপনাকে এমন ভাবে জড়িয়ে রাখে যে মন এসবের কোন হদিসই পায় না। সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি নিজের শরীরকে অন্য কিছুর সংস্পর্শে আসতে দেবেন, সে ব্যাপারে আপনি সচেতন থাকবেন।

যে মূল্য আপনাকে দিতে হবে

সর্বত্র যথেচ্ছাচারী অন্তরঙ্গতার একটা মূল্য দিতে হয় - যদি না আপনার জানা থাকে কিভাবে আপনার নিজের কাছ থেকে নিজের শরীরকে দূরে রাখতে হয়। এইরকম ব্যক্তির জন্য তিনি কি করেন সেটা কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু এই রকম ব্যক্তির এইসব কাজে কোন প্রবৃত্তি নেই। শরীরের সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা দ্বারা তিনি নিয়ন্ত্রিত নন - তিনি শরীরকে একটা সাধন হিসেবে ব্যবহার করছেন। অন্যথায় অন্তরঙ্গতা একটা ন্যূনতম মাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখাই সর্বোত্তম। এই জন্যই আমরা বলেছি একজনের জন্য একজন, যদি না একজনের মৃত্যু হয় এবং অন্যজন পুনর্বিবাহ করেন। কিন্তু এখন আপনার 25 বছর হওয়ার আগেই আপনার 25 টি সঙ্গী থাকছে - মানুষেরা ইতিমধ্যেই তার খেসারত দিচ্ছে - আমেরিকান জনসংখ্যার শতকরা 10 জনকে মানসিক অবসাদের জন্য ওষুধ নিতে হয়। এর একটি অন্যতম বড় কারণ হল- তারা জানেন না তাদের অবস্থান কোথায়, কারণ তাদের শরীর বিভ্রান্ত।

শরীরের প্রয়োজন স্থিতিশীল স্মৃতি - লোকে এটা বুঝতে পারে। তাদের স্বামী বা স্ত্রী চেহারার দিক থেকে অথবা বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে হয়তো সেরা না হতে পারে, বাহ্যিকভাবে হয়তো তারা ঝগড়া-বিবাদ করছে, তবুও তারা এক সঙ্গে থাকবার জন্য অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পারে , কারণ তারা একটা কোথাও বোঝে যে এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে স্বস্তির ও কল্যাণের। এটা এই কারণে যে আপনার শারীরিক স্মৃতি আপনার জীবনকে মানসিক স্মৃতির থেকে অনেক অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি এই মুহূর্তে ঠিক যেভাবে আছেন, এটা আপনার শারীরিক স্মৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, মানসিক স্মৃতি দ্বারা নয়। আপনি চাইলে কাল সকালেই মানসিক স্মৃতিকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন, কিন্তু আপনি শারীরিক স্মৃতিকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। তার জন্য আপনার ভেতরে এক সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রার আধ্যাত্মিক বিবর্তনের প্রয়োজন।

শারীরিক স্মৃতিকে যথাসম্ভব কম করা

আধুনিক বিজ্ঞান এটা বলছে, আর যৌগিক প্রক্রিয়ায় আমরা এটা সবসময়ই জানি: পঞ্চভূত - জল, বায়ু, মাটি আরো সব - এদের সকলের একটা প্রবল স্মৃতি-বোধ আছে। আমি যদি এমন কোন জায়গায় যাই, যেটা শক্তির মাত্রাগত ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, তাহলে আমি তার সম্বন্ধে কাউকে জিজ্ঞাসা করি না - আমি শুধু একটা পাথরের উপর আমার হাত রাখি। এর সংস্পর্শ থেকেই আমি ওই জায়গার সম্পূর্ণ কাহিনী জানতে পারব। গাছের চক্র যেমন কোন জায়গার পরিবেশ সংক্রান্ত ইতিহাস বলে দেয়, সেরকমই পাথরের স্মৃতি তার থেকেও ভালো।.

সাধারণত যে বস্তু যত বেশি ঘনীভূত, তার স্মৃতি ধারণের ক্ষমতাও তত বেশি, আর জড়বস্তুর স্মৃতি সজীব প্রানের থেকে অনেক বেশি। আজকের প্রযুক্তিবিদ্যা তার প্রমাণ - আপনার কম্পিউটারের স্মৃতি আপনার থেকে অনেক বেশি। মানুষের মন স্মরণের জন্য নয় - উপলব্ধির জন্য। জড় বস্তুর উপলব্ধি ক্ষমতা নেই - তার শুধু স্মরণ ক্ষমতা আছে। দেব দেবী এবং অন্যান্য প্রানপ্রতিষ্ঠিত বস্তুর সৃষ্টি এই জন্যই যে তারা স্মৃতির শক্তিশালী অবয়ব।

ভারতবর্ষে এমন একটা সময় ছিল যখন কোন শিব মন্দিরে শুধুমাত্র নগ্ন শরীরেই প্রবেশ করা যেতো। শুধুমাত্র ব্রিটিশরা এ দেশে আসার পর এসব নিষিদ্ধ করতে শুরু করলো, আর তখন থেকেই আমরা রুচিবাগীশ হয়ে পড়লাম। নগ্ন শরীরে মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দিব্যের স্মৃতিকে নিজের শরীরে গ্রহণ করা। আপনাকে একটা ডুব দিতে হবে আর তারপর মেঝেতে ভেজা শরীরে শুয়ে থাকতে হবে, যাতে করে শরীর দিব্যের স্মৃতিতে নিমজ্জিত থাকে। মন অন্য লোকজনদের দিকে দেখতে থাকে- যা সব ঘটে চলেছে, কিন্তু শরীর সেই জায়গাটার শক্তি শুষে নিতে থাকে।

ধ্যানলিঙ্গ এবং লিঙ্গ ভৈরবী- দুটির প্রবেশমুখেই সাষ্টাঙ্গে শায়িত ভক্তের ভাস্কর্য আছে। এটা আপনাদের বোঝানোর জন্য যে শরীর মনের থেকে অনেক ভালোভাবে দিব্য স্মৃতিতে নিমজ্জিত হতে পারে। শুধুমাত্র এই যে এখন আর মানুষ কোথাও নগ্ন শরীরে যেতে পারে না, কারণ আমরা এখন এতটাই সভ্য হয়ে উঠেছি - আমরা এত বেশি জামাকাপড় চাপাই শরীরের উপর যে শরীর আছে কিনা সেটাই বোঝা যায় না। শুধুমাত্র যৌন আকাঙ্খা দেখা দিলে মানুষ বুঝতে পারে যে তার শরীর আছে।

শারীরিক স্মৃতিকে মুছে ফেলা

আপনি আপনার শারীরিক স্মৃতিকে মুছে ফেলতে পারেন- গভীর ভক্তির মাধ্যমে বা অন্যান্য কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ায়। আমি বেশ কয়েকজন ভক্তকে এরকম দেখেছি, কিন্তু এক ব্যক্তি কে আমার সত্যি বিশেষভাবে মনে আছে। একজন মহিলা ছিলেন, যিনি দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এসেছিলেন; যেটা ভারতবর্ষের দক্ষিণের প্রান্তভূমি। আমরা জানি না তিনি ঠিক কোথা থেকে এসেছিলেন, তবে তার মুখ দেখে মনে হয় সম্ভবত নেপাল থেকে। তিনি শুধু হেঁটে বেড়াতেন, কখনও একটা শব্দও উচ্চারণ করেন নি, আর এক পাল কুকুর সব সময় তার পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াতো। এমনকি এই কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর জন্য তিনি খাবার চুরিও করতেন আর সেই জন্য তিনি অনেক সময় মারও খেয়েছেন। কিন্তু তারপর কোন কোন সময় লোকেরা তাকে ঢেউয়ের উপর ভেসে থাকতে দেখতেন। এটা একটা উপকূলবর্তী শহর যেখানে তিনটি মহাসমুদ্র এক জায়গায় মিলেছে। তিনি সমুদ্র তটে যেতেন এবং আড়াআড়ি পা মুড়ে জলের উপরে বসে ভাসতেন। তখন লোকেরা তাকে পূজো করতে শুরু করল। যখন তিনি আসতেন, তারা খাবার আগলে রাখলেও এখন আর তাঁকে মারধোর করতে পারত না, কারণ তিনি আরও বড়ো কিছু ছিলেন।

তাঁর সারাটা জীবন তিনি ঘরের বাইরেই কাটিয়েছেন। কোন রকম আশ্রয় ছাড়াই তিনি হয় সমুদ্রতটে ঘুমোতেন নয়তো রাস্তায়। মুখটা ছিল সম্পূর্ণরূপে রোদ- ঝড়- জলে পোড় খাওয়া - আমেরিকার বৃদ্ধ আদিম অধিবাসীদের যে ছবি আপনি দেখেছেন, অনেকটা তাদের মতন। জীবনের শেষের দিকে- তার যখন 70 এর উপর বয়স, এক বিখ্যাত দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ তাঁকে দেখেন এবং তাঁর ভক্ত হন। তিনি তাঁকে তামিলনাড়ুর সালেমে নিয়ে আসেন এবং তাঁর জন্য একটা ছোট্ট বাড়ি বানিয়ে দেন এবং কয়েকজন ভক্ত তাঁর সঙ্গে সেখানে জড়ো হন।

প্রায় 15-16 বছর আগে, ঘটনাচক্রে আমি সালেমের কাছে এক পাহাড়ি শহরে ছিলাম। সেখানে কেউ আমাকে এই মহিলাটির সম্বন্ধে বলেন - যার নাম ছিল মায়াম্মা। তিনি তখন পরলোকবাসী হয়েছেন। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত্রি, আর আমাকে জানানো হল- মায়াম্মার সমাধিতে পুজো হবে। আমি স্ত্রী এবং মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে গেলাম সন্ধ্যেটা সেখানে কাটাতে; মেয়ের বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। এটা ছিল একেবারেই আকর্ষণহীন একটা ছোট্ট জায়গা - একটা কংক্রিটের সমাধি। আমি যখন সেখানে এলাম, ঠিক যেন আমার মুখের ওপর সোজা আঘাত করল- সেইজায়গাটার শক্তি যেন একটা বিস্ফোরণের মতন। ওখানে বসে থাকতে থাকতে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেল। পরে বিনামূল্যে রাতের খাবার ছিল। তার একজন ভক্ত আমাদের খাবার পরিবেশন করছিলেন। আমি এই ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকালাম আর এটা বিশ্বাস করতে পারিনি - এই ব্যক্তি কে দেখতে হুবুহু তাঁর মতন! তিনি একজন দক্ষীণ ভারতীয় ব্যক্তি কিন্তু তাকে দেখতে লাগছিল এক নেপালি মহিলার মত। ভক্তির বশে তার মুখমন্ডল প্রায় মায়াম্মার মত হয়ে গেছে।

সর্বত্র যথেচ্ছাচারী অন্তরঙ্গতার একটা মূল্য দিতে হয় - যদি না আপনার জানা থাকে কিভাবে আপনার নিজের কাছ থেকে নিজের শরীরকে দূরে রাখতে হয়।

আপনি যদি আপনার শারীরিক স্মৃতি মুছে ফেলেন- আপনার শরীর সেরকমই হয়ে উঠবে যেটা আপনার কাছে সবথেকে বেশি মহত্বপূর্ণ। আপনার মধ্যেকার সবকিছুর আকৃতি বদলে যাবে। তার মানে আপনি আপনার বংশানুক্রমিক বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। যখন কেউ সন্ন্যাস নেন, প্রথমেই যেটা করতে হয় সেটা হল মাতা- পিতা এবং পূর্বপুরুষদের জন্য একটা বিশেষ প্রক্রিয়া। সাধারণত আমরা এই প্রক্রিয়াটা করি মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য, কিন্তু সন্ন্যাসীদের জন্য এই প্রক্রিয়া করা হয় এমনকি বাবা-মা বেঁচে থাকলেও। এমন নয় যে আমরা তাদের মৃত্যুর কামনা করি - এর উদ্দেশ্য হল নিজের শারীরিক স্মৃতিগুলো ধুয়ে মুছে ফেলা।

আপনার বয়স যখন 18 ছিল, আপনি হয়তো আপনার বাবা এবং মায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতেন, কিন্তু আপনার বয়স 45 হতেই- আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক, আপনি তাদের মতই কথা বলতে ও কাজ করতে শুরু করেন। শুধুমাত্র আপনার বাবা-মা নন, আপনার পূর্বপুরুষেরাও- এই মুহূর্তে আপনার মধ্যে দিয়েই সক্রিয় আছেন। আপনার ব্যবহার তাদের দ্বারাই তৈরী এবং তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। সেইজন্যই আপনি যদি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হন, তাহলে আপনাকে আপনার বংশানুক্রমিক স্মৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে। এটা না করলে আপনি আপনার পূর্বপুরুষের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। তারা আপনার মধ্যে বেঁচে থাকবেন এবং অনেক ভাবে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন।

শরীরের স্মৃতি আপনাকে যখন এতদূর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে, তখন এটাকে এই জীবনকালে যতদূর সম্ভব কম রাখাটাই শ্রেয়। সর্বোপরি, আপনাকে আপনার পূর্বপুরুষদের লক্ষ-কোটি বছরের স্মৃতি থেকে মুক্ত হতে হবে। আপনার মস্তিষ্কে 'সরীসৃপ ব্রেন' রয়েছে - বুকে হাঁটা সাপ ও টিকটিকি, এবং এমন কি বিছেও আপনার মধ্যে বেঁচে থাকবে। ব্রেনকে মন বলে ভাববেন না - ব্রেন হল শরীর। অন্ততপক্ষে এই জীবদ্দশায়, আপনি চাইবেন এই প্রভাবগুলোকে সীমিত রাখতে- যাতে আপনার শরীর বিভ্রান্ত হয়ে না পড়ে।

সেই সব জ্ঞানী মানুষেরা, যাঁরা এই প্রসঙ্গ সম্বন্ধে অবগত ছিলেন, তাঁরা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াগুলো এমনভাবে তৈরি করেছেন যে শরীর সবথেকে বেশি সহায়ক হয়ে উঠে। পৃথিবীর সর্বত্র এটা বিদিত যে কেউ যদি নিজের আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিশেষভাবে আন্তরিক হন, তাহলে প্রথমেই তিনি যা করেন তা হল সব রকম সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখা, কারণ তিনি যদি কোন রকম দৈহিক সম্পর্ক তৈরি করেন, স্বাভাবিকভাবেই সেটা অনেক কিছু জটিল করে তুলবে। একমাত্র যদি তিনি এমনভাবে ইন্দ্রিয়বশীভূত হন যে এটা তার বিশেষ প্রয়োজন, আর তাকে আপনি এই মুহূর্তে এর বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না, অথবা তিনি এতটাই মুক্ত যে তিনি শরীরের সঙ্গে নিজেকে চিহ্নিত করেন না, সেসব ক্ষেত্রে আমরা তাকে তার মত ছেড়ে দিই - অন্যথায় আমরা সাধারণত 'না' বলি। কিন্তু আপনাকে সম্পর্ক যদি করতেই হয়, তাহলে অন্ততপক্ষে শুধু একটা শরীরের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখূন, কেন না খুব বেশি সংখ্যক হলে শারীরিক প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করবে।

Editor’s Note: You can find more of Sadhguru’s insights about relationships in the ebook “Compulsiveness to Consciousness.”

This article is based on an excerpt from the October 2014 issue of Forest Flower. Pay what you want and download. (set ‘0’ for free). Print subscriptions are also available.