বেদব্যাস একটি অতিপরিচিত নাম এবং ভারতীয় ঐতিহ্যর একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারত, যেটি দীর্ঘতম লিখিত কবিতা - তিনি এর রচয়িতা। তবে এতে তাঁরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই কুরু বংশ সমৃদ্ধি লাভ করে। ব্যাসদেবের পিতা পরাশর মুনি, ওনার গুরুও ছিলেন এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে বেদব্যাস তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। এই অভাবনীয় ব্যক্তিত্বকে নিয়েই এই গল্প।

Read in Telugu: మనకు తెలిసిన మహాభారత కథ గణపతి రచించినది కాదు..!!

সদগুরু: বেশ কয়েক হাজার বছর আগে পরাশর নামে একজন মহান ঋষি ছিলেন। তিনি মহর্ষি পরাশর নামে পরিচিত ছিলেন- অগাধ জ্ঞান এবং আত্মজ্ঞানী এক সত্তা। তাঁর সময়ে সমাজে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যেখানে রাজারা ক্ষমতায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন এবং পুরোহিত শ্রেণীর ধর্মকে আর সম্মান দিতেন না। সেই সময় ব্রাহ্মণরাও নানাভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে এবং দুঃসময়ে পড়ে তাদের এককালীন সামাজিক মান- সন্মান হারিয়েছিলেন। এই দ্বন্দ্বের কারণে সমাজে প্রচুর বিভেদ দেখা দিয়েছিল।

পরাশর পুরোহিত শ্রেণির ধর্ম 'ব্রহ্মতেজ' এবং শাসক শ্রেণীর ধর্ম 'ক্ষত্রিয়তেজে'র মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজ নিজের হাতে নিয়েছিলেন। তিনি পরিভ্রমণ কালীন দেশজুড়ে শত শত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং তৎকালীন রাজাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে কিছুটা সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করেন। যেহেতু তিনি এই বিশাল কাজটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সকলে তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখতেন। স্বাভাবিকভাবে একই সাথে তাঁর কিছু শত্রুও তৈরী হয়- যারা তাঁর আন্দোলনের বিরোধিতা করতেন।

পরাশর পুরোহিত শ্রেণির ধর্ম ব্রহ্মতেজ এবং শাসক শ্রেণীর ধর্ম ক্ষত্রিয়তেজের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

একবার পরাশরের আশ্রম আক্রমণ করা হয় এবং তাঁর পায়ে খুবই গুরুতর চোট লাগে। তিনি কোনওভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং অনেক চেষ্টায় একটি নৌকায় উঠে একটি ছোট্ট দ্বীপে যাত্রা করেন যেখানে কিছু জেলে সম্প্রদায় বাস করত। তাঁর অবস্থা দেখে জেলেরা তাঁকে নিজেদের সাথে নিয়ে যায়। তাঁকে উপজাতির প্রধানের কন্যা মৎস্যগন্ধির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। মৎস্যগন্ধির অর্থ "যার গায়ে মাছের মতো গন্ধ।"

মৎস্যগন্ধি, যিনি সেই সময় সবেমাত্র একজন তরুণী, তিনি পরাশরের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেন। পরাশর অগাধ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এমনই এক বিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে স্বভাবতই মেয়েটি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরাশর এক বছরেরও বেশি সময় জেলেদের কাছে থাকা কালীন তাঁর গুরুতর ক্ষত সেরে ওঠে। আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও তিনি আর কখনও সোজা হয়ে হাঁটতে পারতেন না।

ব্যাসদেবের জন্ম

পরাশর ও মৎস্যগন্ধির মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তাদের একটি সন্তানের জন্ম হয়। তবে ততক্ষণে পরাশর অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন এবং নিজের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে যান। যে সন্তানের জন্ম হয়েছিল তাঁর নাম রাখা হল কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ। কৃষ্ণ তখনও একটি প্রচলিত নাম ছিল। "কৃষ্ণ" শব্দের আক্ষরিক অর্থ "যে টানে" বা "যে আকর্ষণ করে"। “দ্বৈপায়ণ” এর অর্থ “দ্বীপের জন্ম।” তিনি যমুনা নদীর একটি দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই এই নামকরণ করা হয়েছিল। এই শিশুটিই বড় হয়ে মহান ঋষি ব্যাস নামে পরিচিত হয়েছিলেন - তিনিই মহাভারতের রচয়িতা।

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন যখন বড় হচ্ছিলেন, যখন থেকে তিনি কথা বলতে এবং বুঝতে শেখেন, উনি উনার মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, "কে আমার বাবা?" তার মা তাকে পরাশরের ব্যাপারে চমৎকার সব গল্প বলতেন এবং বলতেন তিনি কত মহান ছিলেন। তার সরল উপায়ে, উনি চেষ্টা করেছিলেন যে শিশুটি যেন সেখানে বসবাসকারী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষদের দ্বারা শুধু প্রভাবিত না হয়ে সে যেন তার পিতার থাকা গভীর এবং বিস্তৃত জ্ঞান দ্বারাও প্রভাবিত হয়।

শিশুটি তাঁর না দেখা বাবার প্রতি প্রচন্ড শ্রদ্ধা ও বিস্ময় নিয়ে বড়ো হতে থাকে। দ্বৈপায়ণ সর্বক্ষণ তাঁর মাকে জিজ্ঞাসা করতো, "বাবা আমাদের সাথে কেন নেই?" মা তাঁর সন্তানকে বাবা যেসব মহান কাজ করেছিলেন এবং তাঁকে যে সারা দেশের মানুষ চাইতেন তাঁর জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা বিতরনের জন্য - একথা শিশুটিকে বলতেন। তখন ছেলেটি জিজ্ঞাসা করত, "যদি উনি আমাদের সাথে থাকতে না পারেন তবে আমরা কেন তাঁর কাছে যেতে পারি না?" মা উত্তর দিতেন, "তিনি আমাদের সঙ্গে নিতে পারবেন না কারণ তিনি বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন এবং নিয়মিত ভ্রমণ করেন।

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ তাঁর বাবার মহানতার এত গল্প শুনেছিলেন যে তিনি তাঁর বাবার সাথে ভ্রমণ করার তীব্র এক তাগিদ নিয়ে বড় হয়েছিল। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাঁর বাবার সাথে যাওয়া।

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ তাঁর বাবার মহানতার এত গল্প শুনেছিলেন যে তিনি তাঁর বাবার সাথে ভ্রমণ করার তীব্র এক তাগিদ নিয়ে বড় হয়েছিল। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাঁর বাবার কাছে যাওয়া। তিনি তাঁর গ্রামের বাচ্চাদের বলত, "আমার বাবা তারাদের চেনেন, তিনি সূর্যকে জানেন, তিনি চাঁদও জানেন। এমন কিছুই নেই যা তিনি জানেন না।" তিনি তেমন কিছু বাড়িয়ে বলেননি, কারণ পরাশর সেই ধরণের মানুষই ছিলেন।

অতঃপর দ্বৈপায়ণের বয়স যখন ছয় বছর, তখন পরাশর পুনরায় সেই গ্রামে এলেন। ছেলেটির কাছে এটা ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো! ছ'বছরের ছেলেটি সেই রাতে চোখের পাতা এক করেনি। তিনি কেবল তাঁর বাবার কাছে বসে থাকতে চেয়েছিলেন আর তাঁর বাবা যাকিছু জানতেন তাঁর সবটাই জানতে চেয়েছিলেন; কারণ তাঁর বাবা সব জানতেন এবং তিনিও তাঁর প্রতিটি বিষয় জানতে চান। তিনি তাঁর বাবাকে অজস্র প্রশ্ন করেছিলেন এবং তাঁর বাবা যা যা বলেছিলেন দ্বৈপায়ণ সবকিছুই স্পঞ্জের মতো শুষে নিয়েছিলেন।তাঁর শেখার এবং উপলব্ধি করার ক্ষমতা এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে একবার কোনকিছু উচ্চারণ করা হলে, জীবনে আর কখনও তাঁর কাছে সেটা পুনরাবৃত্তি করতে হতো না। একবার যদি তাঁকে কিছু বলা হত, তাহলেই হয়ে যেতো! ছেলের ক্ষমতা দেখে পরাশর মুগ্ধ হয়ে গেলেন।

পরাশরের যাওয়ার সময় এলে দ্বৈপায়ণ বললেন, “আমি আপনার সাথে যেতে চাই।"

পরাশর বললেন, “তোমার বয়স মাত্র ছয়। তুমি একটি অসাধারণ বালক, কিন্তু তোমার বয়স মাত্র ছয়। তুমি আমার সাথে যেতে পারবে না।

দ্বৈপায়ণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বেশ, দু'বছর পর আমি এমন কী করতে পারবো, যা এখন করতে পারি না? আমাকে বলুন।"

পরাশর যখন ছেলেটির দিকে তাকালেন, তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। কারণ বুদ্ধিমত্তায় ছেলেটির ক্ষমতা একজন ত্রিশ বছরের মানুষের চেয়ে বেশি।

তখন পরাশর বললেন, “তুমি আমার সন্তান হিসাবে আমার সাথে যেতে পারবে না। আমি আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বভ্রমন করতে পারি না। আমার শিষ্যরাই কেবল আমার সাথে যেতে পারে। আমার সন্তান নয়।”

দ্বৈপায়ণ জবাবে বলল, "আমাকে তাহলে আপনার শিষ্য করে নিন।"

পরাশর আবার বললেন, “তুমি এখনও ছেলেমানুষ। মাত্র ছ' বছরের বালক। মায়ের সাথে আরও কিছুটা সময় কাটাও।

কিন্তু দ্বৈপায়ণ নাছোড়বান্দা, “কিচ্ছু জানি না, আমি যেতে চাই। আপনি এখনই আমাকে আপনার শিষ্য হিসাবে দীক্ষা দিন। আমি আপনার সাথেই যাবো।"

কাজেই পরাশরের আর কোনও বিকল্প থাকল না। তিনি ছয় বছরের ছেলেটিকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দিলেন এবং তাঁকে নিজের শিষ্য করে নিলেন। নেড়া মাথা ও একটি ভিক্ষার পাত্র নিয়ে এই ছোট্ট ছেলেটি তাঁর বাবাকে অনুসরণ করতে লাগলো, যিনি এখন তাঁর গুরু।

ব্যাসের ব্রহ্মচর্য

ব্রহ্মচর্যের প্রথম দিনে দ্বৈপায়ণ তাঁর খাবার ভিক্ষা করতে বেরোলেন। এই ছয় বছরের বাচ্চা ছেলেটি নেড়া মাথা ও গাছের ছাল পরে তাঁর শিশুসুলভ কণ্ঠে "ভিক্ষাং দেহি" বলে ভিক্ষা করতে লাগলো। লোকজন এই মিষ্টি ছেলেটিকে দেখলো এবং তাঁকে প্রচুর পরিমাণে খাবার দিল। তারা তাদের সাধ্যমতো সেরা জিনিসগুলো দিয়েছিল, কারণ তারা এই ছোট্ট ছেলেটির মধ্যে এক শক্তি দেখেছিল- রাস্তায় একা হাঁটছে এবং নিজের ও তাঁর গুরুর জন্য খাবার ভিক্ষা করছে।‌

এত খাবার তাঁর কাছে জমা হল যে তিনি সব নিয়ে যেতে পারলেন না। কিন্তু যখন তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন, রাস্তায় অনেকগুলি শিশুকে দেখতে পেলেন- যাদের মুখ দেখে তাঁর মনে হল অনেক দিন ধরে ভাল করে খায়নি। তিনি সমস্ত খাবার তাদের দিয়ে দিলেন এবং খালি পাত্র নিয়ে তাঁর গুরুর কাছে ফিরে এলেন।

পরাশর খালি বাটি হাতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ব্যাপার? তুমি ভিক্ষা করোনি? নাকি কেউ তোমাকে কিছু দেয়নি? তুমি খালি পাত্র নিয়ে এসেছ কেন?” দ্বৈপায়ণ বললেন, "তারা আমাকে খাবার দিয়েছিলেন কিন্তু আমি কিছু ছোট ছেলেদের দেখলাম যারা না খেয়ে ছিল, তাই আমি সমস্ত খাবার তাদের দিয়ে দিয়েছি।" পরাশর তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আচ্ছা, ঠিক আছে।" কাজেই দ্বৈপায়ণ সেদিন ক্ষুধার্তই থেকে গেল।

ব্যাস যখন তাঁর পিতার অভিভাবকত্বে বেড়ে উঠছিল, তিনি এক অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছিলেন।

ক্ষুধার্ত অবস্থাতেও এই ছয় বছরের ছেলেটি একনিষ্ঠ হয়ে বসে এবং তাঁর পঠন-পাঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। দিনের পর দিন এরকম চলছিল, ছেলেটি কিছু খেত না। জীবনের পরবর্তী সময়েও ব্যাস এটিকে তাঁর অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন - আশপাশে সকলের খাওয়া না হলে তিনি কখনও খেতেন না। তিনি সর্বদা নিশ্চিত করতেন যে সকলে খেয়েছে এবং যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তবেই তিনি খেতেন। অন্যথায় তিনি খেতেন না।

পরাশর যখন এই ছেলেটির ক্ষমতা দেখলেন- ছয় বছরের বালক, তিন-চারদিন না খেয়েও তাঁর সমস্ত কাজকর্ম এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে - তিনি তাঁর ভিতর এক অসাধারণ সম্ভাবনা দেখতে পেলেন এবং নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে ঢেলে দিলেন। যেসব শিক্ষা তিনি কাউকে একশো বছর ধরে দিতেন তা তিনি খুব কম সময়েই এই বালকটিকে ঢেলে দিলেন।

ব্যাস যখন তাঁর পিতার অভিভাবকত্বে বেড়ে উঠছিলেন, তিনি এক অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁর শিক্ষা এমন হয়ে উঠল, পরাশর লক্ষ্য করলেন যে তিনি দ্বৈপায়নকে কোন একটি জিনিস শিখিয়ে দিলে দ্বৈপায়ন তার সাথে যুক্ত দশটি জিনিস বুঝতে পেরে যেতেন। পিতার কাছ থেকে বিষয়গুলি উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাঁর এতখানি প্রবল হয়ে উঠেছিল; তার কারণ তিনি পিতার প্রতি এতটাই একমুখী ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই দ্বৈপায়ণ এক উচ্চকোটির বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর যখন ষোলো বছর বয়স- তিনি এতটাই শিক্ষিত হয়েছিলেন যে কোথাও তাঁর বরাবর কেউ ছিল না।

বেদ ব্যাস

এই ব্যাসই মহাথর্বন নামের অন্য এক মহান ৠষির সাথে মিলিত ভাবে চতুর্থ বেদ- অথর্ব বেদকে অন্য তিনটি বেদের সমান পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পন্ডিত সম্প্রদায়কে রাজি করেছিলেন। অথর্ব বেদ হল গুপ্তবিদ্যা বা তন্ত্রবিদ্যা - যা শক্তিতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে জাগতিক কার্যসিদ্ধির বিজ্ঞান। বৈদিক ঐতিহ্য এটিকে নাকচ করে দিয়েছিল এবং অথর্ব বেদকে পবিত্র চতু্র্বেদের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি ছিল না। কেবল তিনটি বেদ ছিল এবং লোকজন অথর্ববেদের অপব্যবহার করত বলে বৃহত্তর সম্প্রদায় এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের নিজস্ব কোন ত্রুটি ছিল না। কীভাবে এর ব্যবহার করা হচ্ছে সেটিই হল আসল ব্যাপার। ব্যাস বলেছিলেন যে কিছু লোক এর অপব্যবহার করেছে বলে বিজ্ঞানকে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। এইরকম চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে অন্য তিনটি বেদের মত, যা ইতিমধ্যেই পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, অথর্ববেদকেও সমান মর্যাদা দেওয়া হোক।

ব্যাস কীভাবে বেদ সংকলন করেছিলেন

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন কেবলমাত্র মহাভারত রচনাই করেন নি, বেদগুলির সংকলনও করেছিলেন। বেদ মৌখিকভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছিল। লোকজন শব্দের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বুঝতেন বলে এটি লিখতে অস্বীকার করেছিলেন। আমরা যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করি সেগুলির মধ্যে পদার্থগত ভাবে সূক্ষ্মতম রূপটি হল শব্দ। এর পরবর্তী স্তর- যা আপনার মস্তিস্কে ঘটে, তা হল তড়িৎচুম্বকীয়। তারা চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং অন্য কোনও বিষয়কে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি, কিন্তু শব্দকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হতো; কারণ এটি পদার্থগত ভাবে সূক্ষ্মতম রূপ এবং এটিকে ব্যবহার করে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব।

বেদগুলি মৌখিক পরম্পরা হিসাবেই চলে আসছিল - কিন্তু একসময় উর্বর গাঙ্গেয় সমভূমি ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। কথিত আছে যে এতগুলো বছর এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। ফসল শুকিয়ে গেছিল এবং তখনকার সভ্যতা- সংস্কৃতি হারিয়ে গেছিল। লোকজন বেদের চর্চা করতে ভুলে গিয়েছিল কারণ তারা সামান্য কিছু খাবারের খোঁজে ব্যস্ত ছিল। তারা তাদের ঐতিহ্য সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেছিল। যখন আবার বৃষ্টি এল এবং বেদ হারানোর ফলে সভ্যতার কি ক্ষতি হয়েছে তা ব্যাস দেখলেন, তিনি ভাবলেন সেগুলি লিখে ফেলাই ভালো। এগুলি ঋক বেদ, অথর্ব বেদ, সাম বেদ ও যজুর্বেদ নামে চারটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। এটি হ'ল পারম্পরিক ধারা, যা লোকজন আজকাল ব্যবহার করেন না। আজও এই চারটি বেদ মানব সভ্যতার সৃষ্ট সর্বত্তম গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়।

মহাভারতকে আমরা আজকে যেভাবে জানি - সেটি কেবল বৈশম্পায়নের মনে থাকা অংশটুকুই, গণপতি যেভাবে লিখেছিলেন সেটা নয়।

পরবর্তী যে কাজটি তিনি করতে চেয়েছিলেন তা হলো একটি মহান, চিরন্তন গল্প সংকলন করা যা চিরকালের জন্য মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হতে পারে। তিনি একথা দুজন মানুষকে জানিয়েছিলেন - একজন ছিলেন তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়ন, যিনি অবাক বিস্ময়ে শুনেছিলেন। তবে শিষ্যরা বিষয়গুলিকে বিকৃত করতে পারেন। মানুষের স্মৃতির মাধ্যমে মৌখিক সঞ্চারণের পদ্ধতি সত্যযুগে কাজ করত- যখন মানুষজন একটি বিশেষ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। কলিযুগ নিকটবর্তী হতেই মানুষের মনের ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেল। ব্যাস কোনও ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো বিবেচনা করেছিলেন, তাই তিনি বেদ রচনার জন্য একজন দেবতা - গণপতিকে নিযুক্ত করেছিলেন।

একজন লিখে চলেছেন এবং আরেকজন (বৈশম্পায়ন) মন দিয়ে শুনছেন। তবে লিখিত দলিলটি এতটাই আকর্ষণীয় ছিল- এটি এমনই একটি অসাধারণ সাহিত্যের নমুনা ছিল যে দুর্ভাগ্যক্রমে দেবতারা এসে সেটি চুরি করে নিয়ে যান। মহাভারত আজকে যেভাবে আমরা জানি- সেটি কেবল বৈশম্পায়নের মনে থাকা অংশটুকুই, গণপতি যেভাবে লিখেছিলেন সেটা নয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বৈশম্পায়ন হস্তিনাপুরের সম্রাট জনমেজয়কে গল্পটি বলেছিলেন, যিনি যুধিষ্ঠিরের দ্বিতীয় উত্তরসূরি। আমরা আজ যা জানি তা ব্যাস যে কথা বলেছিলেন তার একটি অংশমাত্র।

Editor’s Note: Several mystical aspects of Mahabharat are covered by Sadhguru in the DVDs Karna – The Fate’s Child, and Yugas: the tides of time.

A version of this article was originally published in Isha Forest Flower April 2015. Download as PDF on a “name your price, no minimum” basis or subscribe to the print version.