তুচ্ছ বা পবিত্র - এসব আপনার তৈরী
একজন সাধক ছোটখাটো আশা-আকাঙ্ক্ষায় ভারাক্রান্ত হয়ে তাঁর হতাশা প্রকাশ করছেন। সদগুরু বলছেন, সমস্যাটি হল এই যে, আমরা তাৎক্ষণিক এবং চূড়ান্তকে পৃথক করার চেষ্টা করছি। তিনি ব্যাখ্যা করে বলছেন যে, আমাদের আশেপাশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসটি থেকে সবচেয়ে বড় জিনিসটি পর্যন্ত সবকিছুর সাথেই সৃষ্টির উৎস সমানভাবে জড়িত।
প্র: প্রণাম সদগুরু। প্রশ্নটা সত্যিই আমায় কুরে কুরে খাচ্ছে। ছোটখাটো আশা-আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি পরমের প্রতি আকাঙ্ক্ষা আমার ছিলই। এখন আমি দ্বিধায় পড়েছি কারণ সেই ছোটখাটো বাসনাগুলো এখনও রয়েছে। আমি ভাবছি, চূড়ান্ত বাসনাটিকে মাথায় রেখে এই ছোটখাটো কামনা-বাসনাগুলো নিয়ে আমি আদৌ কি কোথাও পৌঁছোতে পারবো? অতিক্রম করা মানে যে কি আমি ঠিক বুঝি না। কীভাবে জীবনের এই ছোটখাটো সুখগুলোকে অতিক্রম করে পরিপূর্ণ বোধ নিয়ে পরমের দিকে চাইবো যাতে আমার পথটি আরো দ্রুত হয়ে ওঠে?
সদগুরু: তো আপনি ছোটখাটো আশা-আকাঙ্ক্ষায় জলছেন। গোড়ার গলদটা হল আমরা চেষ্টা করছি চূড়ান্ত এবং তাৎক্ষণিককে আলাদা করার চেষ্টা করছি। আপনি পারবেন না আলাদা করতে। এই শহরে সম্ভবত অনেক সাম্পাঙ্গি গাছ রয়েছে। যদি রাস্তার দিকে এই ছোট্ট ফুলটি ফোটে, যদিও এটি এত সুগন্ধি এবং সুন্দর, আপনি সম্ভবত এটি উপেক্ষা করতে পছন্দ করবেন। এই ছোট্ট ফুলটি যাকে আপনি উপেক্ষা করতে সক্ষম, যদি একে ফুটতে হয় তবে সৃষ্টির উৎস অবশ্যই এর মধ্যে কাজ করছে। আপনি কি মনে করেন এটি আপনার মধ্যেও কাজ করছে? একটা পিঁপড়ের ক্ষেত্রে? আপনি যদি একটি পিঁপড়েকে পর্যবেক্ষণ করেন, তার ছয় পায়ে চলার দক্ষতা এত দুর্দান্ত। এটি কত সূক্ষ্ম এক প্রক্রিয়া। সৃষ্টির উৎস অবশ্যই জড়িত, এবং পিঁপড়ের সাথে যতটা জড়িত ততটাই অন্যসব কিছুর সাথে জড়িত।
গভীর মনোযোগ প্রদান
ক্ষুদ্রতম জিনিসটি থেকে শুরু করে বৃহত্তম জিনিসটি অবধি, প্রতি মুহূর্তে তাতে দৈব হাতের সক্রিয় পরশ ছাড়া কিছুই ঘটছে না। আপনার সবচেয়ে সামান্য চিন্তা, খুব বড় চিন্তা, জাগতিক চিন্তা, স্বর্গীয় চিন্তা - এই সবকিছুর নেপথ্যে একই শক্তি খেলা করছে। আপনার ভাবনা যতই অলীক বা ভাসা-ভাসা হোক না কেন, আপনি যদি তাতে গভীরভাবে মনোযোগ দেন, এটা একটা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে। আপনার কড়ে আঙুলকে সরানোর মত সহজ কিছু - একদম মনোযোগ সহকারে কড়ে আঙুলটি সরান - এটা আপনার আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে।
কোনটা তুচ্ছ আর কোনটা পবিত্র - আপনার বানানো। অস্তিত্বের দিক দিয়ে এটা সত্য নয়। কোনো কিছুর প্রকৃতির কারণে যে তুচ্ছ আর পবিত্রের অস্তিত্ব আছে এমনটা নয় বরং আপনি এতে কী ধরণের মনোযোগ দেন, সেই কারণেই এর অস্তিত্ব আছে। আপনি যদি সবকিছুতে একই ধরণের মনোযোগ দেন, আপনি দেখবেন, সবকিছুই পবিত্র হয়ে উঠবে। এটাই হল ভারত। এটাই ভারতের সৌন্দর্য।
আজকে, আপনি যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, আপনি হয়তো কয়েকটা পাথর পড়ে আছে এমন কোনো বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন।কাল যদি কেউ এসে এই পাথরগুলোর একটাতে একটা ফুল আর একটু বিভূতি বা সিঁদুর লেপে দিয়ে যায়, পরের বার থেকে যেই আপনি সেই পাথরটার পাশ দিয়ে যাবেন, আপনি স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি মাথা নত করবেন। এটা আপনি এর প্রতি যেই মনোযোগটি দিচ্ছেন সেটাই তৎক্ষণাৎ একে পবিত্র করে তুলছে। এটা যা ছিল তাই ছিল সবসময় কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছিলেন না। এখন যেহেতু কেউ একটা চিহ্ন দিয়ে গেছে, আপনি দেখতে পেয়েছেন।
এই কারণেই, যেসব জিনিস আপনি দেবতাকে পরান সেসব কিছু আপনি নিজেও পরেন। আপনি সিঁদুর পরান দেবতাকে, আপনি নিজেও পরেন সিঁদুর; আপনি বিভূতি পরান দেবতাকে, আপনি নিজেও পরেন বিভূতি; কারণ প্রতিটি মানুষের প্রতি সমানরকম মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি মন্দিরে আপনার দেবতার সামনে যেভাবে দাঁড়ান, যদি সেই একইরকমভাবে আপনি আরেকজন মানুষের সামনে দাঁড়ান, আপনি দেখবেন একই জিনিস হচ্ছে।
আপনি যদি একটাকে পবিত্র আর একটাকে অপবিত্র হিসেবে দেখেন, তাহলে আপনি শেষ। কেবল দুটিই উপায় আছে জীবনকে দেখার। সবকিছু - আপনার নিজেকে, আপনার মা, বাবা, দেবতা - সবকিছুকে অপবিত্র হিসেবে দেখা। আপনি লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। এটা খুব কঠিন কিন্তু তাড়াতাড়ি যাওয়ার রাস্তা অথবা আপনি সবকিছুকে পবিত্র হিসেবে দেখতে পারেন। এতেও আপনি লক্ষ্যে পৌঁছোবেন। এটা মনোরম পথ। যেটা মানানসই হয় আপনার ক্ষেত্রে, সেটাই করুন।
Editor's Note: Find out more about the incredible potential every human being carries, in the free ebook, “From Creation to Creator”.