মেলামেশার ক্ষেত্রে উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠার উপায়
কোনও আচেনা ব্যক্তির সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে অনেকেই এক ধরনের “সামাজিক উদ্বেগের” শিকার হয়। জনৈক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল, কীভাবে এই সামাজিক উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠা যায় ? উত্তরে সদগুরু যা বললেন –
![How To Deal With Anxiety When Meeting People? How To Deal With Anxiety When Meeting People?](https://static.sadhguru.org/d/46272/1633490537-1633490536612.jpg)
প্রশ্ন: কোনও অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে মেশার সময় এমন এক উদ্বেগ কাজ করে যা কিছুতেই আমাকে সেই পরিস্থিতিতে সহজ হতে দেয় না। এটা কী কোনও মানসিক সমস্যা না কি আমি সমাজে মেশার অযোগ্য ? কী করা উচিত আমার ?
সদগুরু: তুমি নিশ্চয়ই “যোগ” বলে একটি শব্দের নাম শুনেছো। যখন আমি “যোগ” শব্দটি উচ্চারণ করি, মানুষ তখনই বিভিন্ন ভঙ্গিতে শরীরের কসরতের কথা চিন্তা করে। না, যোগ শব্দের অর্থ হল “সংযুক্তিকরণ”। তোমার জীবনের অনুভব হল তুমি একটি ব্যক্তি সত্তা হিসেবে আছো এবং তাছাড়া রয়েছে সমগ্র পৃথিবী। প্রকৃত পক্ষে এটা হল, তুমি এবং তোমার বিরুদ্ধে রয়েছে মহাবিশ্ব। এই এই মহাবিশ্বের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নামা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। এই প্রতিযোগিতায় জেতার কি কোনও সম্ভাবনা তোমার আছে বলে মনে হয় ? মহাবিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমো না।
এই কারণেই আমরা একটি পন্থা অবলম্বন করি যার নাম যোগ। যোগ বা এই সংযুক্তিকরণের অর্থ হল, সচেতন ভাবে তোমার ব্যক্তির সীমানাগুলি মুছে ফেলা, যাতে তুমি এবং মহাবিশ্ব বলে কোনও দুটি পৃথক অস্তিত্ব না থাকে – সবটাই যেন এক বলে অনুভূত হয়। তোমার সামান্য কিছু যোগ অভ্যাস করা উচিত, তা না হলে, তোমার মন সর্বদাই নানা রকম চিন্তা, আবেগ ও অভিমতের জালে জড়িয়ে পেঁচিয়ে যাবে।
যদি তুমি নিজেকে সামান্য একটু প্রসারিত করতে পারো, যদি তুমি নিজের ব্যক্তিত্বের সীমানাগুলি মুছে ফেলতে পারো, তাহলে তুমি শুধুমাত্র এখানে বসেই অপর মানুষটিকে খুব সহজেই তোমার সত্তার অংশ বলে মনে করতে পারবে। অন্যজন পুরুষ না মহিলা না শিশু না কি পশু, তা নিয়ে তোমার কোনও মাথাব্যথাই থাকবে না। তুমি সকলের সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারবে, কারণ ইতিমধ্যেই তোমার ব্যক্তিত্বের সীমানাকে তুমি উন্মুক্ত করে ফেলেছো। যখন তোমার ব্যক্তির সীমানাগুলি পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সমস্যা তৈরি হতে থাকে। সামনের ব্যক্তিটি পুরুষ হলে এক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আবার সামনের মানুষটি মহিলা হলে অন্য ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
এখন সময় হল, তোমার নিজেকে সহজ করে তোলা – শুধু অন্য মানুষের কাছেই নয়, জীবনে কাছে সহজ হয়ে ওঠা প্রয়োজন। জীবন স্বরূপ যে তুমি, সেটির সহজ হয়ে ওঠা অবশ্যই জরুরী। যদি তুমি সহজ হয়ে উঠতে না পারো, কখনই তুমি তোমার সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে অনুভব করতে পারবে না।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই নির্দিষ্ট কিছু প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। কিন্তু নিরানব্বই শতাংশ মানুষই আমৃত্যু তাদের অন্তর্নিহিত প্রতিভাকে উন্মুক্ত করতে পারে না। নিজের মধ্যে থাকা প্রকৃত সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হলে সর্বাগ্রে জীবনকে সহজ করে তুলতে হবে।
যোগ নামের যে সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রয়েছে, তা তোমাকে শরীর, রসায়ন, মানসিক টানাপোড়েন ও শক্তিকে সামলানোর উপযোগী করে তুলতে সক্ষম। যদি তুমি একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত এটিকে নিজের ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে পারো, সামনে তখন যেই আসুক, তুমি সহজই থাকবে। উত্তেজিত হয়ে থাকলে, সব কিছুই বিকৃত হয়ে ওঠে। সুতরাং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সহজ হয়ে থাকা, নতুবা জীবনকে ঠিক তার মতো করে অনুভব করতে পারবে না।
সম্পাদকের কথা : সদগুরুর সান্নিধ্যে ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং পরিসমাপ্তি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বেঙ্গালুরুতে, তারিখ ডিসেম্বর ১৫-১৬, ২০১৮। সদগুরুর কাছে জীবন রূপান্তরের উপযোগী শম্ভাবী মহামুদ্রা ক্রিয়া শেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। আগে আসার ছাড় সহ রেজিস্ট্রেশন করা যাবে ২০ অক্টোবর, ২০১৮ পর্যন্ত।