প্রশ্ন: যোগ কি আমার ডায়াবেটিস উপশমে সহায়ক হতে পারে? 

সদগুরু: যে কোনও দূরারোগ্য রোগ- তা সে যে ধরনের রোগই হোক না কেন, সর্বদাই তার মূল কারণ নিহিত আছে তেজোময় শরীরে। আমাদের তেজোময় শরীর যে এইভাবে কাজ করে তার বিভিন্ন কারণ আছে। এটা হতে পারে আপনারা যে ধরনের পরিবেশে বাস করেন তার উপর, আপনারা কি ধরনের খাদ্য গ্রহণ করেন, আপনারা কি ধরনের পারস্পরিক সম্পর্ক রাখেন তার উপর, অথবা আপনাদের আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা এবং মতামতের কারণে। তবে এটা এই কারণেও হতে পারে যখন কোন বাইরের শক্তি পরিস্থিতি আপনার ভেতরের শক্তিকে বিঘ্নিত করে। কোনওভাবে আপনার অন্তর- শক্তি বিঘ্নিত হলে, স্বভাবতই তার প্রকাশ ঘটবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে। যখন শরীরের এই স্তরটি- প্রাণময় শরীর বিঘ্নিত হয়, তখন মনোময় শরীর এবং অন্নময় শরীর বিঘ্নিত হতে বাধ্য। আসলে এটা চিকিৎসকের চিন্তার কারণ হয় শুধুমাত্র তখনই যখন এটা চিকিৎসা সম্বন্ধীয় সমস্যায় পরিণত হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত এটা চিকিৎসকের দুশ্চিন্তা নয় কেননা এখানে তার কোন শারীরিক প্রকাশ নেই।

দুর্ভাগ্যবশত চিকিৎসা বিজ্ঞান শুধুমাত্র রোগ বোঝে। স্বাস্থ্যের মূল কি তা সে বোঝেনা, যেমন কোথায় তার উৎপত্তি এবং স্বাস্থ্যের ভিত্তি কি এইসব। আপনি যদি ডায়াবেটিক হন চিনি আপনার সমস্যা নয়। ব্যাপারটা শুধুই এই যে আপনার অগ্ন্যাশয় ঠিকমতো কাজ করছে না। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে আপনি আপনার চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেন কেননা এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা মতে আপনার অগ্ন্যাশয়কে পুনর্জীবিত করার অন্য কোন উপায় নেই, তাই তারা আপনাকে একটিমাত্র উপায় শিখিয়েছেন - "প্রত্যেকদিন আপনার সুগার মাপুন এবং আরেকটু বেশি ইনসুলিন নিন"। এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি উপসর্গ-ভিত্তিক; চিকিৎসক আপনার উপসর্গ দেখেন এবং সেই মত চিকিৎসা করেন। 

যোগ এই মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যে যদি তেজোময় শরীর পরিপূর্ণরূপে প্রবাহমান আর সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে তাহলে শারীরিক অথবা মানসিক স্তরে কোন রকমের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হতে পারে না

যে কোনো রকমের সংক্রমণের জন্য এ্যালোপ্যাথিক এক চমৎকার পদ্ধতি। আমি অ্যালোপ্যাথিকে সবথেকে ভালো হিসেবে দেখি শরীরের মধ্যে বাইরে থেকে আসা যে কোন কিছুর জন্য। কিন্তু এটা সাধারণ অসুখের কোন সুরাহা করতে পারেনা যে রোগ গুলো মানুষ নিজেরাই তাদের ভেতরে তৈরি করে- যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র শুধুমাত্র বিভিন্ন রোগকে সামলাতে পারে কিন্তু এই রোগ গুলো থেকে আপনাকে মুক্ত করবার কথা কখনো বলে না। ওষুধের নানা ব্যবস্থা পদ্ধতি রয়েছে, কাজেই বিভিন্ন রোগ একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। অনেক অর্থ ও সময় ব্যয় হয় এই অসুখগুলো কে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এটা ঠিক যেরকম মানুষ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কথা বলে। মানুষ তার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এটা খুবই হাস্যকর। এই নির্বুদ্ধিতা এসেছে শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা তাদের নিজেদের জীবনীশক্তি কিভাবে কাজ করে তার মূলনীতিটাই বোঝেন না।   

যোগাতে ডায়াবেটিস হলে সেটাকে একেবারে ভিত্তিগত বিশৃঙ্খলা হিসেবে দেখা হয়। রোগ হিসেবে ডায়াবেটিসকে হালকাভাবে নেওয়া হয় না। আমরা মূল শরীরের ভিত্তিগত গঠনে বিঘ্ন ঘঠতে দেখি। ডায়াবেটিস হওয়ার এটাই কারণ। এবং এটা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য পৃথক। প্রতিটি ব্যক্তির জন্য তাদের শরীরে এই বিশৃংখলার মাত্রা আর বিশৃংখলার প্রকৃতি একেবারেই ভিন্ন। সুতরাং এটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। যাই হোক না কেন রোগ নির্বিশেষে যোগের একমাত্র লক্ষ্য তেজোময় শরীরের সাম্যতা বজায় রাখা, এটিকে সঞ্জীবিত করা বা সক্রিয় করে তোলা। যোগ এই মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যে যদি তেজোময় শরীর পরিপূর্ণরূপে প্রবাহমান আর সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে তাহলে শারীরিক বা মানসিক কোন স্তরেই কোন রকমের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হতে পারে না। আমরা সেভাবে রোগের চিকিৎসা করিনা, আমরা রোগকে শুধুমাত্র তেজোময় শরীরে যে বিশৃঙ্খলা গুলো রয়েছে তার প্রকাশ হিসেবে দেখি।

যদি মানুষ তাদের তেজোময় শরীরের সাম্যতা বজায় রাখতে এবং এটিকে সক্রিয় করতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সাধনা করতে আগ্রহী হন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধিগুলোর থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

 

Editor’s Note: Isha Rejuvenation offers a Diabetes Management Program which is an exclusive therapeutic program designed by Sadhguru to enable people with diabetes to create a basis for holistic management of their condition.