সদগুরু: আজকাল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষজন, বিশেষত যুব প্রজন্ম, আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে একরকম বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এর কারণ আধ্যাত্মিকতাকে বিশ্রী ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন আধ্যাত্মিকতার অর্থ ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া না করা, রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করা। মানুষের ধারণা হয়েছে আধ্যাত্মিকতার অর্থ শোচনীয় ভাবে জীবনযাপন করা‌, নিজেকে কষ্ট দেওয়া এবং সর্বোপরি জীবন-পরিপন্থী হওয়া - কোনরকমেই আপনার জীবন উপভোগ করা চলবে না এবং অবশ্যই সবরকম ভাবে কষ্ট ভোগ করতে হবে।  

আধ্যাত্মিকতার সাথে আপনার বাহ্যিক পরিস্থিতির কোন সম্পর্ক নেই। আপনি কুঁড়েঘর বা রাজপ্রাসাদ যেকোনো জায়গাতে থেকেই আধ্যাত্মিক হতে পারেন। কুঁড়েঘর বা রাজপ্রাসাদে বসবাস হয়তো আপনার পছন্দ অথবা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা। আপনার আধ্যাত্মিকতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।  

আধ্যাত্মিকতার সাথে আপনার বাহ্যিক পরিস্থিতির কোন সম্পর্ক নেই। আপনি কুঁড়েঘর বা রাজপ্রাসাদ যেকোনো জায়গাতে থেকেই আধ্যাত্মিক হতে পারেন।

আধ্যাত্মিকতার অর্থ হল অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করা, " আমার আনন্দের উৎস আমি নিজে।" বর্তমানে আপনি ভাবছেন যে, কোন জিনিস অথবা অন্য কেউ আপনার আনন্দের উৎস, তাই আপনি সর্বদা তাদের অনুগ্রহের পাত্র। যদি আপনি উপলব্ধি করেন এবং নিজ অভিজ্ঞতা থেকে জানেন যে আপনিই আপনার আনন্দের উৎস, আপনি কি সর্বদাই উৎফুল্ল থাকবেন না? এমনকি এটা কোন বিকল্পও নয়। জীবন নিজেই পরমানন্দে থাকতে চায়। যদি আপনি আপনার জীবনের দিকে তাকান - আপনি নিজেকে শিক্ষিত করেন, আপনি অর্থ চান, একটি বাড়ি, একটি পরিবার, সন্তান - আপনি এসবকিছুই চান কারণ আপনার আশা যে কোনদিন এগুলো আপনার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসবে। কিন্তু এখন আপনি অনেক জিনিস জমিয়ে ফেলেছেন এবং আনন্দই একমাত্র জিনিস যা ভুলে গেছেন।  

মানুষের এরকম শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী জীবন সম্পর্কে তাদের গভীর ভ্রান্ত ধারণা। "না ! কিন্তু আমার স্বামী, আমার স্ত্রী, আমার শাশুড়ি….।" হ্যাঁ, তারা সবাই আছেন, কিন্তু আপনি নিজেই যন্ত্রণার পথ বেছে নেন কারণ আপনি কষ্ট-তেই বিনিয়োগ করেছেন। আপনি মনে করেন যে দুঃখিত হয়ে আপনি কিছু পাবেন। ধরা যাক, আপনার পরিবারের কেউ এমন কিছু করতে শুরু করলেন যা আপনি চান না, তারা করুন। আপনি নিজেকে কষ্টের দিকে ঠেলে দেবেন এবং বিষন্ন মুখ করে তাদের সামনে ঘুরে বেড়াবেন, এই আশায় যে এর থেকে কিছু ফল পাবেন। আপনি কোনকিছু পাওয়ার আশায় নিজের মধ্যে কষ্টদায়ক অবস্থা তৈরি করতে ইচ্ছুক। যখন আপনি দুঃখিত, হাতে স্বর্গ পেলেও আপনার সেটা কি কাজে লাগবে? কিন্তু আপনি যদি আনন্দিত মানুষ হন, আপনার হাতে যদি কিছু নাও থাকে, কি এসে যায়? আপনি যদি সত্যিকারের আনন্দিত হন, আপনার কি আছে বা নেই, আপনার কেউ আছে কি নেই, তার কি কোন মূল্য আছে? দয়া করে বুঝুন, এটা বা সেটা পাওয়ার জন্য আপনার যত্ন এবং ভালোবাসা, আপনার আকাঙ্খা এবং চাহিদা, সবই এই আশায় যে সেটা আপনাকে আনন্দ এনে দেবে।  

মানুষ সর্বদা আমাকে এই প্রশ্নটা করে, "একজন আধ্যাত্মিক মানুষ এবং একজন বৈষয়িক ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য কি?" ঠাট্টা করে আমি তাদের বলি, একজন বৈষয়িক ব্যক্তি শুধুমাত্র তার খাদ্য উপার্জন করেন। অন্য সবকিছুর জন্য - আনন্দ, শান্তি, ভালোবাসা - তাকে ভিক্ষা করতে হয়। একজন আধ্যাত্মিক মানুষ সবকিছু নিজেই অর্জন করেন - তার ভালোবাসা, তার শান্তি, তার আনন্দ। তিনি শুধুমাত্র তার খাবারের জন্য ভিক্ষা করেন এবং যদি তিনি ইচ্ছা করেন, সেটাও তিনি উপার্জন করতে পারেন। 

 

Editor’s Note: Sadhguru looks at what for many people, is a looming question in their life, “Why Suffering”? The ebook is available on a “name your price” basis. Enter “0” to download for free.