সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন, যোগার মতে এই শরীরটিকে পবিত্র হিসাবে মানা হয়। তিনি প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে সচেতনতা নিয়ে আসা এবং এই অচেতন মাংসপিন্ডকে এক দৈব শরীরে রূপান্তরিত করার সম্ভবনার কথা আলোচনা করছেন।

সদগুরু: যোগের একটি দিক হলো, আমাদের মধ্যে যেসব অনৈচ্ছিক কাজকর্ম চলে, সেগুলোকে আমাদের সচেতন বা ঐচ্ছিক কর্মের আওতায় নিয়ে আসা। আপনার নিশ্বাস-প্রশ্বাস, আপনার হৃদস্পন্দন, আপনার যকৃতের কর্মকান্ড - এগুলো সবই অনৈচ্ছিক বা অমোঘ কাজকর্ম। শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই অনৈচ্ছিক বা অমোঘ, কারণ প্রকৃতি আপনাকে ভরসা করেনি। যদি আপনার শরীরের অত্যাবশ্যকীয় কোনো অঙ্গ ঐচ্ছিক প্রক্রিয়ায় চলত, আপনি হয়তো উদ্ভট কিছু করে বসতেন!

যখন আপনি আরও সচেতন হয়ে উঠবেন, শরীরের ওই সব প্রক্রিয়াগুলো যেগুলি এখন অনৈচ্ছিক ভাবে চলে, সেগুলো স্বাভাবিকভাবে আপনার ইচ্ছাধীন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে।

আপনি কি এরকম লোকজন দেখেছেন যাদের মানসিক কাজকর্ম অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলতে থাকে? তাদের হাত এবং আঙুলগুলোও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি অনেক বেশি করে ঘটছে। তাদের হাত অনুমতি ছাড়াই নিজে থেকে চলতে থাকে।

অন্যদিকে, আপনি যখন আরও সচেতন হয়ে ওঠেন শরীরের ওই সমস্ত দিকগুলো যেগুলো এখন অনৈচ্ছিক ভাবে চলে, স্বাভাবিকভাবেই আপনার ইচ্ছাধীন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে; কারণ যখন আপনি আরও সচেতন হয়ে ওঠেন প্রকৃতি আপনাকে ভরসা করে: "ও যথেষ্ট সচেতন। আমরা ওকে একটু বেশি দায়িত্ব দিতে পারি।” একবার যখন কিছু আপনার ইচ্ছাধীন, আপনি সেটা নিজের ইচ্ছামতো চালাতে পারবেন।

অনৈচ্ছিক থেকে ঐচ্ছিক

অনৈচ্ছিক কাজকর্ম এক ধরনের অসহায় অবস্থা। আপনার শরীর, বিশেষ করে মস্তিষ্ক মূলত ঐচ্ছিক ভাবে চলা উচিত। এগুলো যদি আপনার ইচ্ছামতো চলে তাহলে আপনার জীবন তৈরী। এটাই হলো অনৈচ্ছিক থেকে ঐচ্ছিক হওয়ার যাত্রা।

মানুষ যে নিজেদের ব্যাপারে কোনোকিছু অনুধাবন করতে পারে না তার কারণ তাদের শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমানে অকারণ অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ড চলতে থাকে।

আপনি কি একজন স্বেচ্ছাসেবী? তার মানেটা হলো এই - আপনি সমস্তকিছু সচেতনভাবে করেন, স্বেচ্ছায় করেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে নয়। যা প্রয়োজন আপনি সেটাই করেন। আপনার বসার নির্দিষ্ট কোনো ধরন নেই। আপনার কাজ করারও কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, তা সে অভ্যন্তরীন হোক কি বাহ্যিক, আপনি সেভাবেই কোনো কিছু করবেন যেভাবে সেইমুহূর্তে সেটি করা প্রয়োজন। সেটাই কার্যকরী কর্মপদ্ধতি। বাকি সবই অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড।

ধরুন আমি একটা পাহাড়ে উঠছি। আমার হৃদযন্ত্রকে একটি নির্দিষ্ট ভাবে কাজ করতে হবে। আমি যদি শুধু বসে থাকি তাহলে ওটাকে অন্যভাবে চলতে হবে। কিন্তু আমি যদি এখানে বসে থাকি আর ওটা পাহাড়ে চড়ার মতো চলতে থাকে, তাহলে সেটা কার্যশক্তির অপচয় হবে। আপনি যখন আপনার মস্তিষ্কে, আপনার হৃৎপিণ্ডে, আপনার শরীরে বা অন্য সবকিছুতে কার্যশক্তির অপচয় করতে শুরু করেন, আপনি একজন অপব্যায়ী মানুষে পরিণত হন।

যেকারণে মানুষ তাদের নিজেদের ব্যাপারে কোনোকিছু অনুধাবন করতে পারে না তার একমাত্র কারণ অতিরিক্ত পরিমানে অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম, খুব বেশি অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ড চলে শরীরের মধ্যে। আপনি যদি শরীরের মধ্যে কোনোকিছু অনুধাবন করতে না পারেন তাহলে কোন "যোগা" হচ্ছে না। সমগ্র যোগা পদ্ধতি কোনো স্বর্গ থেকে আসেনি বা কোনো মহাকাব্য বা কোনো ধর্মীয় শিক্ষা থেকে নয়। এটা এসেছে মানব শরীরের অত্যন্ত গভীর উপলব্ধি ও পর্যবেক্ষণ থেকে।   

অঙ্গের রাজা

যোগার মতে পুরো শরীরটাই ঐশ্বরিক। শিবের একটা দিক হলো যে তিনি হলেন অঙ্গরাজ। অঙ্গরাজ মানে হলো অঙ্গের রাজা। আপনারা হয়তো 'অঙ্গমর্দন' করছেন যেটা অঙ্গের উপর দখল আনার একরকমের পদ্ধতি। শিব অঙ্গের রাজা কারণ তিনি সেগুলোকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেছেন এবং তাঁর শরীরটাই ঐশ্বরিক হয়ে উঠেছে। যদি এই দেহতন্ত্রটা, অচেতনতা থেকে সচেতনতার দিকে অগ্রসর হতে হতে ১০০% সচেতন হয়ে ওঠে; এমনকি যদি ভৌতিক শরীরটাও সম্পূর্ণভাবে সচেতন হয়ে ওঠে, তাহলে সেটা একটা দৈব শরীর। ঠিক সেটাই বোঝায় যখন আমরা বলি শিব হলেন অঙ্গরাজ। এই অঙ্গগুলো অচেতন মাংসপিন্ড হতে পারে অথবা সেগুলো এতটা সচেতন হয়ে উঠতে পারে যে সেটা একটা দিব্য শরীরে পরিণত হয়। এটা একটা মাংসপিন্ডকে দৈবমূর্তিতে রূপান্তরিত করার ব্যাপার।

এই বিজ্ঞান থেকেই দেবতা প্রতিষ্ঠা করা হয়। একটা বিশেষ 'যন্ত্র' বা অবয়ব তৈরী করে এবং সেই বিশেষ অবয়বের মধ্যে শক্তি সঞ্চালন করে একটা পাথরকেও একটা দিব্য শক্তিতে পরিণত করা যায়। যদি একটা পাথরকে দিব্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় তাহলে রক্তমাংসকে কেন করা যাবে না? এটা নিশ্চিতভাবেই করা সম্ভব।

Editor’s Note: Hatha Yoga is the science of shaping the body into a receptacle for the divine. Isha Hatha Yoga programs are offered regularly in various locations around the globe. Find a program near you.