আমরা এমন এক আধুনিক সময়ে এসে পৌঁছেছি যেখানে,দিন হোক বা রাত,আলো আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে।এমনকি যদি পূর্ণিমাও হয়, আমার মনে হয় যারা আজকাল শহরের দিকে থাকে তাদের অধিকাংশ খেয়ালও অবধি করবে না। পূর্ণ চন্দ্রকে কি করে খেয়াল না করে থাকেন? এটা যথেষ্ট বড়, যথেষ্ট উজ্জ্বল।

চাঁদের প্রতিটি দশাই আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করতে পারেন অথবা আপনি যদি নিজের শরীরতন্ত্রে এক নির্দিষ্ট সচেতনতা ও বোধ নিয়ে আসেন যে কেবল নিজের শরীরটা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, প্রতিটি আলাদা দশায় শরীর কিঞ্চিৎ আলাদারকম আচরণ করে। পুরুষ এবং নারী উভয় শরীরেই এটা ভীষণরকম আছে তবে নারী শরীরে বেশি প্রকট। যেমন আপনি জানেন যে, একজন মহিলার মধ্যে বংশবৃদ্ধির মৌলিক প্রক্রিয়াটি চাঁদের চক্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেই সময় ধরে চাঁদ গ্রহের চারপাশে ঘুরপাক খায় এবং যে চক্রে মানুষেরা নিজেদের ভিতরে ভিতরে ঘুরে চলে আর মানুষের জন্মের প্রক্রিয়া - এই শরীরটা সৃষ্টির প্রক্রিয়া - খুবই গভীরভাবে জড়িত।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চাঁদের একটা বড় প্রভাব আছে, সেইজন্যই প্রাচ্য সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে ভারতে, আমরা দু'রকম পঞ্জিকা বানিয়েছি।সাংসারিক বিষয়ের জন্য আছে সৌর পঞ্জিকা। জীবনের আর সব আত্মবাদী আঙ্গিক যা কোনো তথ্য বা কোনো কৌশল নয় বরং একেবারে জীবন্ত বিষয়, তার জন্য আছে চান্দ্র পঞ্জিকা। সবসময় এমনই হয়ে আসছে যে, যুক্তির অতীত যেকোনো আঙ্গিক সবসময় চাঁদের সাথেই যুক্ত।

যেই কেউ যুক্তিবাদী মনের হিসেবনিকেশ থেকে সরে গিয়ে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে জীবনকে দেখতে শুরু করে, চাঁদ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।চাঁদের প্রভাবকে সাধারণত অযৌক্তিক বলে গণ্য করা হয়। পাশ্চাত্যে, অযৌক্তিক কোনো কিছুকে পাগলামি বা উন্মাদনা আখ্যা দেওয়া হয়। ইংরাজী ভাষায় চাঁদকে লুনার বলে নির্দেশ করা হয়। এর এক ধাপ এগোলে লুন্যাটিক। কিন্তু প্রাচ্য সংস্কৃতিতে, আমরা সবসময়েই যুক্তির সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছি। আপনার মধ্যে একটা যুক্তির ব্যাপার আছে যেটা আপনাকে আপনার জীবনের নানা বৈষয়িক দিককে সামলাতে সাহায্য করে তবে যুক্তির অতীত এমন এক মাত্রা আছে যেটা ছাড়া আত্মবাদী মাত্রার নাগাল কখনোই পাওয়া যেতে পারে না।

মানুষের বোধ হল এক প্রতিফলন। আপনি যদি এই প্রতিফলন ছাড়া অন্য কিছু দেখে থাকেন তার মানে আপনি সত্যটা দেখছেন না।যেকোনো বোধ আসলেই একটা প্রতিফলন। চাঁদও একটা প্রতিফলন; সে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করছে বলেই আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন। তো চাঁদকে সবসময় জীবনের গভীর বোধের প্রতীকীস্বরূপ দেখা হয়। পৃথিবীর সমস্ত জায়গাতেই জ্যোৎস্না এবং অতীন্দ্রিয়বাদ পরস্পর ভীষণভাবে যুক্ত। এই যোগসূত্রের প্রতীক হিসেবেই শিব নিজের মাথায় ধারণ করেছিলেন এক ফালি চাঁদ, তাঁর ভূষণ হল চন্দ্র।

যোগ বিজ্ঞান এবং যোগের পথও এভাবেই নির্মিত। প্রাথমিক কয়েকটা ধাপ ১০০% যৌক্তিক তবে আপনি যেই আরো ওপরে ওঠেন, যুক্তি থেকে সরে এমন জায়গায় গিয়ে পড়ে যা পুরোপুরিই অযৌক্তিক। যুক্তিকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে কারণ জীবন ও সৃষ্টি এভাবেই রচিত। তো চাঁদ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একমাত্র এভাবেই কোনো বিজ্ঞান ঘটতে পারে।আপনি যদি আধুনিক বিজ্ঞানের দিকে তাকান, যেটা আসলে এখনো শিশু পর্যায়েই আছে, এই একই জিনিস হচ্ছে। শুরুর দিকে ছিল ১০০% যুক্তিবাদী; কয়েক পা বাড়িয়েই, ধীরে ধীরে অযৌক্তিক হয়ে উঠছে। পদার্থবিদরা প্রায় অতীন্দ্রিয়বাদীদের মতই কথা বলছেন। তাঁরা একই সুরে কথা বলা শুরু করছেন কারণ সৃষ্টির প্রকৃতি এমনই। আপনি যদি সৃষ্টিকে অন্বেষণ করেন, এমনটাই দেখা যাবে।

Editor’s Note: Stay in touch with important days in the year and the lunar month with Isha's Calendar, available as rss feed, ical, html (view in your browser), or embed the calendar on your site.