সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন ঠিক কী কারণে যোগ আজ এত জনপ্রিয় এবং কেনই বা অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে যোগই একমাত্র কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

সদগুরু: যোগের জনপ্রিয় হওয়ার অনেকগুলি কারণ আছে। তার মধ্যে একটি হল, এটি আপনাকে নিজের সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য জানতে এবং বুঝতে সাহায্য করে। একবার এক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে, একজন শিক্ষক ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন, "আমি যদি মাথায় ভর করে দাঁড়াই, তবে দেখবে আমার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে কারণ আমার মাথায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু যখন আমি আমার পায়ের উপর দাঁড়াই তখন তা হয় না। কেন? "একটা ছোট্ট ছেলে বলল," কারণ পায়ে খালি জায়গা নেই।"

যোগই হল একমাত্র সেই পদ্ধতি যা ১৫,000 বছরেরও বেশি সময় ধরে কোন ধর্মীয় শাসন বা বলপ্রয়োগ ছাড়াই বেঁচে রয়েছে।

আপনার শরীর একটি ব্যারোমিটারের মত। এটি কিভাবে দেখতে হয় তা যদি আপনি জানেন তবে এটি আপনার সম্পর্কে সবকিছুই জানিয়ে দেবে। নিজের সম্পর্কে আপনার কাল্পনিক ধারনাগুলি নয়, আপনার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্যগুলি। মন অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। প্রতিদিনই আপনার মন আপনার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে। যদি আপনি জানেন শরীরকে কীভাবে পড়তে হয়, তবে শরীরই আপনাকে সঠিক ভাবে বলে দেবে সবকিছু - এক অর্থে , আপনার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ । সেইজন্যই প্রাথমিক ভাবে যোগ শরীর থেকেই শুরু হয় ।

অন্য অনেককিছুই চলতি হাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে এসেছে আর চলেও গেছে, কিন্তু যোগ হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে এবং এখনও তার ঊর্ধ্বগতি ধরে রেখেছে। যদিও হয়তো বহু ক্ষেত্রেই খুবই অপরিণতভাবে এর শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে এবং অনেক সময় হয়ত বিকৃতভাবেও শেখান হয়েছে, তবু এটা রয়ে গেছে । একমাত্র যোগই হল সেই পদ্ধতি যা ১৫,000 বছরেরও বেশি সময় ধরে কোন ধর্মীয় শাসন বা বলপ্রয়োগ ছাড়াই টিকে রয়েছে । মানবতার ইতিহাসে কোথাও এমন ঘটেনি যে কেউ কারও ঘাড়ে তরবারি ঠেকিয়ে বলেছে, "আপনাকে যোগ করতেই হবে ।" এটি টিকে গেছে এবং এখনও টিকে আছে কারণ সুস্থ্য থাকার প্রক্রিয়া হিসেবে এটি যেভাবে কাজ করেছে তেমনভাবে অন্য কোন কিছু করেনি ।

বিশ্বে বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগ এবং কার্যকলাপ আরও শক্তিশালী হয়ে গেলে, সময়ের সাথে সাথে আরও বেশি লোক যোগের শরণাপন্ন হবে এবং মানুষের কল্যানের খোঁজে এটিই সবথেকে জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠবে ।

আরেকটি বিষয় হল, পৃথিবীতে এখন মানুষ - তা সে যুবকই হোক বা বৃদ্ধ - আগেকার তুলনায় অনেক বেশি মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। এখন লোকেরা সবসময়ই উদ্বিগ্ন এবং স্নায়ুরোগগ্রস্ত । আর ভিতরের অস্থিরতার মোকাবিলা করার জন্য যে পদ্ধতিই তারা কাজে লাগাতে চেয়েছেন - ডিস্কোতে গিয়ে বা গাড়ি চালিয়ে বা পর্বতারোহণ করে - সেগুলো কিছুটা কাজ দিয়েছে, কিন্তু কোন সমাধান দেয়নি। সুতরাং, যোগের দিকে ঝোঁকাটা একটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণ হল শিক্ষার বহুল প্রসার । এই গ্রহে বুদ্ধিমত্তার হার আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি । তাই, স্বাভাবিকভাবেই বুদ্ধি যত ধারাল হয়েছে মানুষ সবকিছুর যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান খুঁজছেন । তারা যত বেশি যুক্তি-নির্ভর হচ্ছেন , বিজ্ঞানের উপরও তত বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন । আর বিজ্ঞানের ফলাফলই হচ্ছে প্রযুক্তি। বিশ্বে বুদ্ধির প্রয়োগ এবং কাজকর্ম যত জোরাল হবে, সময়ের সাথে সাথে মানুষ তত বেশি করে যোগের শরণাপন্ন হবে এবং মানুষের কল্যানের খোঁজে এটি সবথেকে জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠবে।

যোগ কোন ব্যায়াম নয়

আজ, বিশ্বের বেশিরভাগ স্থানেই যেভাবে যোগ করানো হচ্ছে, তা একটি মৃত শিশুর জন্ম দেওয়ার মতো । মৃত শিশু জন্ম দেওয়ার থেকে সন্তানসম্ভবা না হওয়াই ভাল নয় কি ? যদি আপনি সিক্স-প্যাক বা আরও কম বা বেশি সংখ্যক পেশী চান তবে আমি বলব পাহাড়ে চড়ুন অথবা টেনিস খেলুন। যোগ কোনও ব্যায়াম নয়, এর সাথে জুড়ে আছে একটা অন্য ডাইমেনশন, একটা অন্য দিগন্ত। । সুস্বাস্থ্যের এক অন্য মাত্রা - এতে আপনি সুস্বাস্থ্য পেতে পারেন, কিন্তু সিক্স-প্যাক নয়।

যোগাভ্যাস খুব সূক্ষ্ম এবং মৃদুভাবে করা উচিত, জোর করে পেশী তৈরি করার ব্যায়ামের মত নয় । কারণ এটা শরীরচর্চার ব্যাপার নয় ।

পশ্চিমের দেশগুলিতে যোগের প্রবেশ এবং সেটার জনপ্রিয় হওয়ার দীর্ঘ কুড়ি বছর পর অবশেষে চিকিৎসা জগতের লোকেরা এগিয়ে আসছেন এবং গবেষনা করে বলছেন, " যোগের উপকারিতা আছে ।” যদিও যোগকে খুবই লঘু ভাবে শেখানো হয়, তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এর যে উপকারিতা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যদি ভুল এবং বিকৃত ধরনের যোগাভ্যাস ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে, দশ পনের বছরের মধ্যেই বৈজ্ঞানিক গবেষনায় বেরিয়ে আসবে কতভাবে মানুষের জন্য এটা ক্ষতিকর, আর তখনই এর পতন হবে ।

যোগাভ্যাস খুব সূক্ষ্ম এবং মৃদুভাবে করা উচিত প্রচণ্ড পেশী তৈরির করার মত জোর খাটিয়ে নয়, কারণ এটি শরীরচর্চার বিষয় নয়। ভৌত শরীরের একটি পরিপূর্ণ স্মৃতির কাঠামো আছে। যদি আপনার এই ভৌত শরীরটিকে পড়ার আগ্রহ থাকে, তাহলে দেখতে পাবেন, কিভাবে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়ে বর্তমান রূপ পেল, সে সব কিছু এই শরীরের মধ্যেই লেখা রয়েছে। যোগ হল সেই স্মৃতির লিখনকে ক্রমশ উন্মুক্ত করে জীবনকে এক চূড়ান্ত সম্ভাবনার জন্য পুনর্নির্মান করার উপায়। এটি একটি খুবই সূক্ষ্ম এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।