প্রশ্নকর্তা: কিভাবে আমি আমার সামনে আসা প্রত্যেকটি সুযোগ, এমনকি প্রত্যেকটি কঠিন পরিস্থিতিকে আমার উন্নতির জন্য সোপান হিসেবে ব্যবহার করতে পারি?

সদগুরু: আপনার বিকাশের জন্য কিভাবে প্রত্যেকটি জিনিস এবং প্রত্যেককে ব্যবহার করা যায়? প্রথমত, আপনি কৃতজ্ঞতায় বড় হোন, দয়াশীলতায় নয়। আমি চাইনা আপনি দয়াশীল হোন। আমি চাই আপনি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ থাকুন। দয়াপরবশ মানুষ, কিছু সময় পর, বেপরোয়া লোক হয়ে যান। গৌতম বুদ্ধ একটি সূত্র দিয়েছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন, "এটা বোঝা কঠিন আপনার খাবার অন্য কাউকে দিয়ে, আপনি শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, দুর্বল নয়।" কিভাবে আপনি আপনার খাবার বিলিয়ে দিয়ে শক্তিশালী হবেন? আপনার কাছে যেসব জিনিস প্রচুর পরিমাণে আছে সেগুলো বিলিয়ে দিলেন, এটা সে ব্যাপারে নয়। কারোর কাছে যেটা সবচেয়ে জরুরি, কারোর বাচার সম্বলটাই বিলিয়ে দেওয়া, সেটাই আপনাকে দৈবের কাছে নিয়ে যায়।

কারোর কাছে যেটা সবচেয়ে জরুরি, কারোর বাচার সম্বলটাই বিলিয়ে দেওয়া, সেটাই আপনাকে দৈবের কাছে নিয়ে যায়।

একজন সন্ন্যাসী বেশিরভাগ সময় ক্ষুধার্ত থাকেন। তিনি দিনে মাত্র একবার তাঁর খাবারের জন্য ভিক্ষা করেন এবং খাবার গ্রহণ করেন। আজ, কেউ হয়ত সামান্য কিছু দিলেন। অন্য দিন তিনি হয়ত আরও অনেক কম পেতে পারেন। তিনি যাই সংগ্রহ করুন, রীতি এটাই ছিল যে তিনি একদিনে কেবলমাত্র একটি বাড়িতেই ভিক্ষা করতে পারবেন এবং এমন সময় আসত যেদিন তিনি কিছুই পেতেন না। সময়ের সাথে সাথে, তারা এই "একটি বাড়ি" নিয়মটি শিথিল করেছিলেন এবং তিনটি বাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন কারণ লোকজন দানের ব্যাপারে আরও সতর্ক হয়ে উঠেছিলেন। সুতরাং সন্ন্যাসীগণ ক্রমাগতভাবে ক্ষুধার্ত থাকতেন, আর গৌতম বলছেন যে যদি আপনি আপনার নিজের খাদ্য দান করে দেন, আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, আরও দুর্বল নয়। এটা অনুধাবন করা কঠিন, কিন্তু এটাই সত্য।


 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক কাহিনী

একটি দারুণ সত্য গল্প আছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কুখ্যাত জার্মান রাজনৈতিক বন্দী শিবির (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প), অসচিৎস্ -এ সংঘটিত হয়েছিল। নম্বর ধরে ডাকা হচ্ছিল এবং লোকজনকে মৃত্যুদন্ডের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এলোমেলোভাবে নম্বর ধরে ডাকা হচ্ছিল, অথবা দুর্বল এবং বৃদ্ধ যারা কাজ করতে পারতেন না তাদের বাছাই করা হয়েছিল। যদি আপনার নম্বর ডাকা হয়, তার মানে আপনি আপনার মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন।

একজন লোকের নম্বর ডাকা হয়েছিল এবং তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মরতে চাননি। তার পাশে একজন খ্রিষ্টান মিশনারি ছিলেন, যার নম্বর ডাকা হয়নি। লোকটির ভয় দেখে, তিনি বলেছিলেন, "ভয় পাবেন না। আমি আপনার জায়গা নেব।" লোকটি লজ্জিত হলেন, কিন্তু একই সাথে তিনি প্রস্তাবটি ফেলতেও পারলেন না। তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন। মিশনারিটি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

পরবর্তী কালে, জার্মানরা যুদ্ধে হেরে যায় এবং আমাদের লোকটি মুক্ত হন। অনেক বছর ধরে তিনি পরাজয় এবং লজ্জার অনুভূতি নিয়ে বেঁচেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তার জীবদ্দশায় এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে সাধারনভাবে এই বাঁচার কোন অর্থই নেই, কারণ তার জীবনটাই ছিল অন্য কারোর দান। অন্য একজন মানুষের উদারতার জন্য তিনি বেঁচে ছিলেন। অন্যথায়, ওই দিনই তিনি মারা যেতেন - ওটা ওনার নম্বর ছিল।

যদি আপনি আপনার জীবন স্বর্গের প্রস্তাব ছাড়াই চালাতে পারেন, আপনি সঠিক পথে আছেন। কিন্তু যদি প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এবং এরকম কারবার করেও আপনি সঠিক দিকে যেতে পারেন, এগিয়ে যান এবং করে ফেলুন।

মিশনারি তাকে চিনতেন না - তিনি একজন বন্ধু, একজন পিতা, একজন পুত্র অথবা কোন কিছুই ছিলেন না। শুধুমাত্র তার ভয় এবং কষ্ট কম করার জন্য, তিনি আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। সেই লোকটি জীবনকে জানবে - সেই লোকটি যিনি গিয়েছিলেন, সেই লোকটি নন যিনি পেছনে পড়ে রইলেন। একমাত্র তিনিই নিজের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের শক্তি ও ক্ষমতা অনুভব করতে পারেন যা যিনি নিজেকে রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন কখনও উপলব্ধি করতে পারবেন না।

এর অর্থ এটা নয় যে আপনি নিজেকে উৎসর্গ করে দেবেন অথবা এই রকম অর্থহীন কিছু। যে লোকটি মৃত্যু বরণ করেছিলেন তিনি উৎসর্গের ব্যাপারে ভাবছিলেন না। তিনি অন্য কারোর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে বসেন নি। সেই মূহূর্তে, তিনি দেখেছিলেন কি করা প্রয়োজন এবং দ্বিতীয় কোন চিন্তা ছাড়াই সেটা করেছিলেন। সেটা চমৎকার। কিন্তু যদি আপনি শক্তি প্রাপ্ত হবেন বলে, অথবা আপনি স্বর্গে যাবেন বলে নিজেকে উৎসর্গ করার চেষ্টা করেন, এটা তা নয়।

যদি আপনি আপনার জীবন স্বর্গের প্রস্তাব ছাড়াই চালাতে পারেন, আপনি সঠিক পথে আছেন। কিন্তু যদি প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এবং এরকম কারবার করেও আপনি সঠিক দিকে যেতে পারেন, এগিয়ে যান এবং করে ফেলুন। যদি এইরকম পরিণত আপনি হয়ে থাকেন যে আপনার বিনিময়ে কিছুই প্রয়োজন নেই এবং তা সত্ত্বেও আপনি এটা করতে পারেন, সেটা ভালো। কোন কিছু করার বিনিময়ে আপনাকে কিছু পেতে হবে যদি আপনি এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেন, যেখানে কোন মুনাফার প্রয়োজন নেই এবং তাও আপনি অতিরিক্ত সময় কাজ করতে রাজি, তখন আপনার এক ভিন্ন রকম শক্তি থাকবে। যে লোকটি কেবলমাত্র যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু করেন তিনি সেইটুকুই পান। সে সারা জীবন ধরে ভিক্ষুক হয়েই থাকবে। শক্তি কী সে কখনও জানবে না, সে কখনও দেবত্ব জানবে না, কারণ স্বাভাবিকভাবেই দেবত্ব উদ্দেশ্য ছাড়াই সবকিছু করে। শুধু দেখুন! সবকিছুই উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

Editor’s Note: Excerpted from Mystic’s Musings. Not for the faint-hearted, this book deftly guides us with answers about reality that transcend our fears, angers, hopes, and struggles. Sadhguru keeps us teetering on the edge of logic and captivates us with his answers to questions relating to life, death, rebirth, suffering, karma, and the journey of the Self. Download the sample pdf or purchase the ebook.