আর্টিকেল 18  আগস্ট, 2021

শত শত মানুষের উপস্থিতিতে শ্রীমতী বিজয়কুমারী মহাসমাধি লাভ করেন। মহাসমাধি হল একজন আধ্যাত্মিক সাধকের চূড়ান্ত লক্ষ্য, এবং এইরকম লক্ষ্য অর্জনকারী যোগীদের গল্পে এই সংস্কৃতি পরিপূর্ণ। পূর্ণ সচেতনতার সাথে দেহ ছেড়ে যাওয়ার বারো ঘন্টা পর, 2000 জনেরও বেশি মানুষের উপস্থিতিতে তাঁর শব দাহ করা হয়েছিল।

যখন আধ্যাত্মিক পথ এবং এর প্রক্রিয়াগুলির প্রসঙ্গ আসে, তখন ইংরেজি ভাষাতে এতটুকুই ব্যাখা করা যায়। একটা সীমার পর , আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া,  এর অভিজ্ঞতা এবং এর বিস্ময় ব্যাখ্যা করার মতো পরিভাষা নেই। এই কারণেই অভ্যন্তরীণ মাত্রার অনেক অভিজ্ঞতাই অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। যাঁদের  এই অভিজ্ঞতা হয় শুধু তাঁরাই জানেন এর সত্যতা । যাঁরা তা অনুভব করতে পারেন না তাঁরা এই জাতীয় ঘটনাকে নিজের যুক্তিবোধে খাপ খাইয়ে তুলতে পারেন না। কারণ কিছু জিনিস আছে যা যুক্তির উর্দ্ধে। মহাসমাধি তার মধ্যে অন্যতম।

মহাসমাধি স্বয়ং হিন্দু সংস্কৃতির মতোই প্রাচীন। এমন অসংখ্য যোগী এবং অতীন্দ্রিয়বাদী ছিলেন যাঁরা প্রাচীনকাল থেকে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্তও সচেতনভাবে তাঁদের দেহ ত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক কয়েকটি নামের  উদাহরণ দিলে : বিংশ শতাব্দীতে পরমহংস যোগানন্দ, অন্যতম সুপরিচিত ভারতীয় যোগী, 1952 সালে মহাসমাধি লাভ করেন এবং স্বামী নির্মলানন্দ 1997 সালের মতো সাম্প্রতিক সময়ে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর দেহ ত্যাগ করেছেন।

"সাধারণত, মানুষ বিশ্বাস করেন যে প্রাচীনকালের মুনি-ঋষিদের সাথেই এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ‘আধ্যাত্মিকতা’ তার সর্বোচ্চ সম্ভাবনায় এখনও প্রবল ভাবে জীবিত," 1997 সালের জানুয়ারী মাসে ভিজ্জি মায়ের মহাসমাধির কয়েকদিন পরে সদগুরু এক বক্তৃতায় একথা বলেন।  "মানুষকে জানতে দিন যে এই ধরণের সুযোগও মানুষের জন্য উপলব্ধ রয়েছে, যে একজন মানুষ তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুর গোটা প্রক্রিয়াকেই নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন। এটা ঠিক না ভুল তা আমার বা অন্য কারও জিজ্ঞাসা করার কথাই নয়।”

যদিও ভিজ্জি মায়ের চলে যাওয়াতে ঈশা যোগ সেন্টারের সকলেই ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তবে এটি সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিতও ছিল না। আমাদের প্রিয় কাউকে হারানোর কখনই উপযুক্ত সময় হয় না আর সেই শোকের জন্য কখনই প্রস্তুত থাকা যায় না। সদগুরু বলেন, “ওনার ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের কাছে, তিনি এই বিষয়ে অনেকবারই কথা বলেছিলেন। কোনও রকম আসক্তি ছাড়াই, পূর্ণ সচেতনতায় নিজের শরীর ছেড়ে যাওয়ার তাঁর এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা তিনি প্রকাশ করছিলেন। "আমি চলে যেতে চাই" – আমার সাথেও তাঁর সর্বক্ষণের মন্ত্র ছিল এটাই" ।

আমাদের সময়ের একটা দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হল এই, যে এমনকি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাও, কিছু ইচ্ছাকৃত সমস্যা সৃষ্টিকারীরা ছিনিয়ে নেয় – সেই বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে কোনও ধারনা ছাড়াই । ভিজ্জি মায়ের মহাসমাধির আট মাস পরে কিছু মানুষ একে হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ঈশা অবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা এর পূর্ণ তদন্তকে স্বাগত জানায় – যদিও তা  ছিল সবচেয়ে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে অন্যতম যা মানব শালীনতার প্রতিটি সীমাকে লঙ্ঘন করে যায় । ভিজ্জি মায়ের মহাসমাধির তদন্তে সন্দেহজনক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং মামলাটি শেষ পর্যন্ত 1999 সালে আদালত খারিজ করে দেন।

সদগুরু ভিজি মায়ের মহাসমাধিকে উল্লেখ করে বলেছিলেন, "এমনকি আধ্যাত্মিক সাধনায় জীবন অতিবাহিত করা দক্ষ যোগীদেরকেও কষ্ট করতে হয় এটা অর্জন করতে"। "শরীরকে আঘাত না করেই এই অন্তরের জীবনটাকে শরীরের বাইরে ছুড়ে ফেলতে একেবারেই অন্য কিছুর প্রয়োজন হয়।" এটি প্রত্যেক আধ্যাত্মিক অন্বেষকের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং যাঁরা তা অর্জন করেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয় কারণ এর জন্য এক অসাধারণ স্তরের শৃঙ্খলা এবং ভক্তির প্রয়োজন হয়।