সদগুরু: পুরো বিশ্বই এক বিশেষ ধরণের বাতিকে ভোগেন যা আগে ছিল না। এটার কারণ কেবল এই, যে আধুনিক মানুষ তার শরীরের ব্যবহার অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে। অতীতে, আপনি যখন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িত রাখতেন, তখন আপনার বাতিক রোগের কোন সমস্যা হত না। আপনার স্নায়বিক শক্তি ঠিক মতো ব্যয় হত। আমি অনেক মানুষকে, বিশেষত তরুণদের, জানি যাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা ছিল। তারা প্রতিদিন সাঁতার কাটা বা কোনও একটা খেলাধুলা শুরু করে এবং তারপরে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমানে শারীরিক ক্রিয়াকলাপের কারণে, স্নায়বিক শক্তি ব্যয় হয়ে যায়।

এখন, মানুষ আগের থেকে শারীরিক দিক দিয়ে অনেক বেশী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অতীতে মানুষের শারীরিকভাবে এত নিষ্ক্রিয় হওয়ার উপায় ছিল না, কেবল বেঁচে থাকার জন্যই তাকে অনেক শারীরিক পরিশ্রম করতে হত। তাই এখন সে অতীতের চেয়ে অনেক বেশি বাতিকগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। সাধারণত, স্নায়ুরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আগেও ছিল তবে এই সংখ্যায় নয়। আজ, সমাজে এটা এমন একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রত্যেকেই বাতিকগ্রস্ততার কোন না কোন স্তরে রয়েছে। এর কেবলমাত্র কারণ হল আপনার শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে চালিত হচ্ছে না। রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি আপনার উন্মাদনাকে অতিক্রম করতে পারেননি, এবং একই সঙ্গে আপনি এটার ব্যবহারও করছেন না। কোন রকম চিকিৎসাও নেই। যদি আপনি বাইরে গিয়ে সারাদিন কাঠ কাটেন - যদি আপনি দিনে একশটা গাছের গুঁড়ি কাটতে পারেন - আপনার প্রচুর শক্তি ব্যয় হবে এবং জীবন হবে শান্তিপূর্ণ। তবে আজকাল আর এমনটা হয় না। আপনি অতীতে নিজের দেহকে যেভাবে ব্যবহার করতেন, সেভাবে ব্যবহার করছেন না, তাই আপনি আগে কখনও হয়নি এমন সমস্ত রোগের উৎপাদন করে চলেছেন।

সময়ের সাথে সাথে এটা আপনার দেহতন্ত্রে জমতে থাকে । তখন আপনার এই শারীরিক এবং মানসিক শক্তির কোন বহির্গমন পথের প্রয়োজন। এইভাবেই বার, ক্লাব এবং ডিস্কোথেকগুলো স্থান পেয়েছে। মানুষদের কোথাও না কোথাও, যেকোনো ভাবে তাদের স্নায়বিক শক্তিকে ব্যয় করতে হবে। এই ডিস্কোগুলি দেখে পাগলামো মনে হয়, ভিতরে এমনকি আপনি শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারবেন না। ধোঁয়া এবং ঘামে ভর্তি, কিন্তু লোকেরা তার মধ্যেই মেতে উঠছে । আপনি এমনকি নাচ করতেও পারবেন না, প্রত্যেকেরই প্রত্যেকের সঙ্গে ধাক্কা লাগছে , তবে তাতে কিছু যায় আসে না, আপনাকে আপনার ভিতরের আটকে থাকা শক্তিকে ব্যয় করতে হবে। না হলে আপনি পাগল হয়ে যাবেন। তাই শনিবার, আপনি সারা সপ্তাহের জমা হওয়া শক্তিটা খরচ করতে যান। তারপরে আবার সেটা জমতে থাকে, এবং আরও একবার আসে শনিবার রাতের উন্মাদনা।

লালসা থেকে প্রেমের দিকে গমন করা

আপনি যখন ভালোবাসেন, আপনি স্থিরতা পান, তখন আর কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। আপনি এইভাবেই এখানে আজীবন বসে থাকতে পারেন। লালসা নিয়ে আপনি কোথাও স্থির হতে পারবেন না। আপনাকে হয় কোন উন্মাদ কার্যকলাপের অংশ হতে হবে, নয়ত আপনি পাগল হতে বাধ্য।

এই উন্মাদনাটা বন্ধ করে এগিয়ে চলার আরও একটা উপায় রয়েছে - একে পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করে এগোনো যাতে আপনি কোন ভাবেই আর এর অংশ না থাকেন। এটাই হল ধ্যান। এখন, আপনি যদি নাচেন, আপনি কেবলমাত্র আনন্দে নাচবেন, কিছুর থেকে রেহাই পাত্তয়ার জন্যে নয়। আপনি যদি কিছুর থেকে রেহাই পাত্তয়ার জন্য নাচেন তবে সেটা কার্যকারী হতে পারে। সেটা একটা ভাল থেরাপি হতে পারে, তবে এর মধ্যে কিছুটা কদর্যতা রয়েছে। এটা অভিলাষ। আপনি প্রেমে নাচতে পারবেন না। আপনি কেবল লালসার জন্য নাচতে পারবেন।

আপনি কি ভালবাসা এবং লালসার মধ্যে পার্থক্য জানেন? লালসা একটা শক্তিশালী চাহিদা । প্রেম কোনও চাহিদা নয়। আপনি যখন ভালবাসেন, আপনি স্থির হন, তখন আর কিছুই প্রয়োজন হয় না। আপনি এখানেই আজীবন বসে থাকতে পারেন। লালসার সাথে আপনি কোথাও স্থির হয়ে বসতে পারবেন না। আপনি হয় কোন উন্মাদ কার্যকলাপের অংশ হতে হবে, নয়ত আপনি পাগল হতে বাধ্য। যখন কোন নির্দিষ্ট বাতিক থাকে, নিজের মধ্যে এক ধরণের উন্মাদনা, তখন আপনি কেবল লালসাগ্রস্থ হতে পারেন। আপনার লালসা যৌনতার জন্য, খাবারের জন্য বা কোনও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ বা কোন বিশেষ শখের জন্য হতে পারে; কী তা বিবেচ্য নয়, তবে আপনি নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের জন্য লালসা গড়ে তোলেন। সেই লালসাটি ছাড়া আপনি বাঁচতে পারেন না। এমনকি আপনার কাজও আপনার সেই লালসাটিকে ত্যাগ করার একটা কার্যকর উপায়। এটা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত উপায়, তাই আজ মানুষ কেবল কাজ, কাজ আর কাজ করে। তারা যে চমৎকার কিছু সৃষ্টি করছে তা নয়, কিন্তু তাদের কেবল কাজই করে যেতে হবে। অন্যথায় তারা নিজেদের নিয়ে কী করবেন, সেটাই তারা জানেন না।

আপনাকে এই উন্মাদনাকে সতর্কতার সঙ্গে পাহারা দিতে হবে। কেউ কখনও যেন না জানে যে আপনার মধ্যে এটা রয়েছে এবং আপনি নিজেও এটা ভুলে যেতে চান। এটা ভুলে যাওয়ার জন্য আপনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। পৃথিবীর সমস্ত বিনোদন রয়েছে আপনার এই উন্মাদনাকে লুকিয়ে রাখার জন্য। আপনি যদি সম্পূর্ণভাবে সুস্থমস্তিষ্কের হতেন, তবে আপনার বিনোদনের প্রয়োজন হত না। আপনার এই উন্মাদনাকে ঢাকতে আপনার বিনোদনের প্রয়োজন হয়। আমরা যদি আপনার বিনোদন সরিয়ে নিই তবে আপনি পাগল হয়ে যাবেন। মানুষের কেবল উন্মাদনা লুকানোর জন্যই বিনোদনের প্রয়োজন হয়। সে যদি পুরোপুরি সুস্থমস্তিষ্কের হত, তবে তার বিনোদনের দরকার পড়ত না। সে কেবল বসে বসেই বাঁশের বেড়ে ওঠা দেখতে পারত। সত্যিই তার বিনোদনের দরকার পড়ত না।