সদগুরু দেখিয়েছেন পঞ্চভূতকে আয়ত্ত করা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, আর সৃষ্টির উৎস কে উপলব্ধি করার উপায় দুটি ব্যাখ্যা করেছেন।

সদগুরু: প্রায় 15 হাজার বছর আগে আদিযোগী পাঁচটি উপাদান বা "পঞ্চভূতের" ব্যাপারে বলেছিলেন। তিনি তাঁর প্রথম সাতজন শিষ্যকে দেখিয়েছিলেন যে সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কেবল পাঁচটি উপাদানেরই খেলা এবং এটি আমাদের দেহের মধ্যে কি অনুপাতে রয়েছে এবং যদি কেউ এইগুলি আয়ত্তে আনতে পারে তবে কিভাবে সে সৃষ্টির উপরেও একধরনের কতৃত্ব অর্জন করতে সক্ষম। সৃষ্টির কেবল একটিমাত্র উপাদান আয়ত্তে থাকলেও, আপনার কাছে সেই জিনিসটির চাবিকাঠি আছে যা আসলে সৃষ্টির উৎস। যখন এই বিজ্ঞানটি বিস্তৃতভাবে এবং সকল প্রকারের প্রকাশ সহ ব্যাখ্যা করা হয়েছিল- সপ্তঋষি, যাঁরা সেখানে শিষ্য হিসেবে বসেছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী পার্বতী, যিনি এই সমস্ত কিছুরই সাক্ষী ছিলেন, সকলে বিস্মিত হয়ে উঠেছিলেন। এতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তারা এটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে সমগ্র অস্তিত্ব শুধুমাত্র পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি - তার মধ্যে একটি আবার কিছুই নয়, কাজেই মাত্র চারটি জিনিস দিয়ে।

আদিযোগী এর পেছনের বুদ্ধিমত্তার ব্যাখ্যা করে চললেন: কেবলমাত্র চারটি উপাদান দিয়ে আপনি সেই মিশ্রনটি বানাতে পারেন যাকে আমরা আজকে "মহাবিশ্ব" বলি।

আদিযোগী এর পেছনের বুদ্ধিমত্তার ব্যাখ্যা করে চললেন: কেবল মাত্র চারটি উপাদান দিয়ে আপনি সেই মিশ্রনটি বানাতে পারেন যাকে আমরা আজকে "মহাবিশ্ব" বলি। ভৌতিক যা কিছু আছে তা মূলত চারটি উপাদান দিয়ে তৈরি। বেশিরভাগ সময়েই আপনি পঞ্চমটিকে অনুভব করতে পারেন না। আমি যদি আপনাকে কেবল চারটি জিনিস দিই, তাই দিয়ে কি আপনি সাধারণ সাম্বারও বানাতে পারবেন? এমনকি সাম্বার বানাতে গেলেও আপনার পঁচিশটি উপাদান লাগবে। যদি কেউ চারটি উপাদানের দিয়ে একটি সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব রচনা করতে পারেন তবে তা এক বিস্ময়কর প্রতিভা।

আদিযোগী এই মৌলিক উপাদানগুলির উপর দক্ষতা অর্জনের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে বর্ণনা দিতে থাকলেন। এই সাতজন এবং আরও একজন, যারা এসব শুনছিলেন এবং ওনার করা প্রদর্শনী দেখছিলেন, সম্পূর্ণ রূপে মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি বললেন, "হয় আপনি এই সমস্ত বিষয় আয়ত্ত করতে পারবেন অথবা আপনি কেবল এই বুদ্ধিমত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারেন- এবং এটি আপনার হবে।" সেই সাতজন পুরুষ একে আয়ত্ত করতে উৎসাহী ছিলেন। পার্বতী, একজন নারী হিসেবে- আত্মসমর্পণ করে এটিকে নিজের অংশ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।

কাজেই সেই সাতজনকে কর্মযজ্ঞে পাঠিয়ে দেওয়া হল। পার্বতীকে সেখানে রাখা হয়েছিল কারণ তিনি বুদ্ধিমত্তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং এটি তার অংশে পরিণত হয়েছিল। এই সাতজনকে বলা হলো ঋষি। তিনি (পার্বতী) দেবীতে পরিণত হলেন। আমি আলোচনা করছি কিভাবে নিজেকে প্রসারিত করা যায়! আপনি যদি লক্ষ বছরও বেঁচে থাকেন এবং কীভাবে সমস্ত কিছু প্রকাশ পেয়েছে তার নিগূঢ় তত্ব কেবল অধ্যয়নই করতে থাকেন - তবে এটি একটি অন্তহীন প্রক্রিয়া হবে। এটি রোমাঞ্চকর, তবে এটি একটি অন্তহীন প্রক্রিয়া। অথবা, আপনি এই অন্তহীন প্রক্রিয়াটিকে একপাশে সরিয়ে রাখুন এবং এই সমস্ত কিছুর উৎস যে মাত্রা তাকে স্পর্শ করুন। আপনি যদি এই খেলাটি খেলতে চান তবে আপনি নিজেকে সৃষ্টির উপাদানগুলির সাথে জড়িত রাখুন। আর আপনি যদি এই খেলাটি খেলতে না চান, আপনি যদি কোনও ম্যাচ-ফিক্সার হন এবং কেবল জিততে চান - আপনি খেলাটির প্রতি আগ্রহী নন, আপনি কেবল খেলায় উত্তীর্ণ হতে চান এবং এগিয়ে যেতে চান - তবে আপনি কেবল সেটিকে স্পর্শ করুন, যা সৃষ্টির উৎস। আপনাকে উপাদানগুলির মধ্যে হারিয়ে যেতে হবে না।

আপনি খেলাটি খেলুন নইলে খেলাটি আপনাকে নিয়ে খেলবে।

কিন্তু আপনি যদি খেলাটি না খেলেন তবে খেলাটিই আপনাকে নিয়ে খেলতে পারে। জীবনের পুরো খেলাটিকে একপাশে সরিয়ে রেখে কেবলমাত্র সৃষ্টির উৎসের সাথে এক হয়ে যাওয়ার জন্য একাগ্রচিত্তে মনোনিবেশ করা- সবচেয়ে সহজ ব্যাপার বলে মনে হয়। যদি আপনার মধ্যে "আমিত্বের" অনুভূতি না থাকে, আপনার নিজের শরীর, মন, চিন্তা, আবেগ এবং সমস্ত কিছু সম্পর্কে যদি সেরকম মাত্রায় বৈরাগ্য থাকে, তবে এটি স্বাভাবিক ভাবেই আসে। অন্যথায় এটি সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। আপনিই যখন আপনার জীবনের নায়ক, তখন কি "আপনাকে" সরিয়ে রাখা সম্ভব? আপনি নিজেই যখন প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, তখন "আপনাকে" পাশে সরিয়ে রাখা এত সহজ হয় না। তবে এটাই সবচেয়ে সরল এবং শ্রেষ্ঠ উপায়। অন্যথায় একটি বড় খেলা খেলতে হবে - একরকম অন্তহীন এক খেলা। আপনি যদি এই খেলাটি খেলতে চান তবে আপনি এটি দক্ষতার সাথে আরও ভালভাবে খেলুন। একজন অপটু খেলোয়াড়কে সবাই অপছন্দ করে।

ভূতশুদ্ধি অথবা মৌলিক উপাদান গুলির উপর দক্ষতা অর্জন করা সচেতনভাবে জয় করার একটি পদ্ধতি। কারণ আপনি যা করছেন তার উপর দক্ষতা না থাকলে আপনার সাফল্য আকস্মিক হয়ে পড়বে।

একবার যখন আপনি খেলাটি খেলবেন বলে বেছে নিয়েছেন, উপাদানগুলির উপর কিছুটা অন্তত দক্ষতা অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে জীবনের খেলায় আপনি এক অপটু খেলোয়াড় হবেন। লোকেরা যদি সফল হন তবে এর অর্থ, জ্ঞানত অথবা অজ্ঞানত কোনও ভাবে কিছুটা কর্তৃত্ব আছেই। অন্যথায় কোনও কিছুতেই সাফল্য আসবে না। হতে পারে তারা অন্য কোথাও এর জন্য কাজ করেছেন বা তারা এখানেই এটির জন্য কাজ করছেন, তবে কোনও কিছুর উপরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দক্ষতা ছাড়া জীবনে কোনও সাফল্য আসবে না।

আপনি যদি কর্ম বেছে নিয়ে থাকেন তাহলে সাফল্য হল মানব জীবনের মধুরতম অনুভূতি। কিছু মানুষ আছেন যারা এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণা ছড়ান - যেটাকে জীবন দর্শন বলা হয়- "হার বা জিৎ কোনোটাতেই কিছু যায় আসে না, সবই ঠিক"। জীবনে এমন কোন অর্থহীন ধারণা হয় না। আপনি যখন কোন খেলা খেলেন - আপনি জিততে চাইবেন। খেলা শেষ হবার পর যদি আপনি হেরে যান, হ্যাঁ ঠিক আছে আপনি হেরে গেছেন, কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগেই যদি আপনি ভাবেন হেরে গেলেও ঠিক আছে, আপনি জানেনই না খেলা কি জিনিস। একবার যখন আপনি খেলতে নেমেছেন- তা সে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিবাহ, জীবন বা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া যাই হোক আপনার অবশ্যই জেতা উচিত। অনেক সময় এটি দলগত খেলাও হতে পারে। আপনি ভুলে যেতে পারেন যে আপনার জয় মানে আপনার সাথে যারা আছেন তাদেরও জিততে হবে। আপনি যদি বিবাহিত হন এবং আপনি যদি ভাবেন যে আপনারই কেবল জেতা উচিত, আপনার সঙ্গী আপনার জীবন দুর্বিষহ করে তুলবেন।

ভূতশুদ্ধি অথবা মৌলিক উপাদান গুলির উপর দক্ষতা অর্জন করা সচেতনভাবে জয়ের একটি পদ্ধতি। কারণ আপনি যা করছেন তার উপর দক্ষতা না থাকলে আপনার সাফল্য আকস্মিক হয়ে পড়বে। আপনার প্রতিপক্ষ অপদার্থ হলে আপনি জিতেও যেতে পারেন। এর কোনো গুরুত্ব নেই। যে কোনো ভাবেই হোক, আপনি আপনার ক্ষমতা এবং তার বাইরে গিয়েও নিজের সেরাটা খেলুন। যখন আমরা হঠযোগের জন্য কোন নির্দেশ দিই, আমরা বলি, "যতটা পারেন নিজেকে প্রসারিত করুন এবং আরেকটু বেশি"। এই আরেকটু বেশি টাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানেই জীবনের সারমর্ম। এটিই হলো জয়-পরাজয়ের ভিতর পার্থক্য- একজন একটু বেশি করছে এবং অন্যজন নয়।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।

সত্তরের দশকে কেনি রবার্টস পর পর তিনবার বিশ্ব মোটরসাইকেল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। এটি সহজ নয় কারণ এগুলি ট্র্যাকের সেরা মেশিন এবং এর চালকেরা এই গ্রহের সবচেয়ে উচ্চক্রমের, তাই আপনি এক সেকেন্ডের শতভাগে জিততে পারেন। যদি আপনাকে কোনও চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে হয় তবে আপনাকে কোনও মরসুমে বারো, পনেরটি রেস জিততে হবে এবং একাধারে টানা তিনবার জেতা প্রায় অসম্ভব। তাই লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, "আপনি এটি কীভাবে করেন?" তিনি বলেছিলেন, "আমি নিয়ন্ত্রণের সাথে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই”। নিয়ন্ত্রণের এই রেখাটি অতিক্রম করার সাহস এবং খুব বেশি দূরে না যাওয়ার বুদ্ধি।

যারা এসব নিয়ে কোনও সাধনা করতে রাজি নন, তাদের জন্য আমরা 'পঞ্চভূত আরাধনা' আয়োজন করি যাতে অন্তত সেখানে উপস্থিত হয়ে আপনি উপকৃত হন।

আপনার যদি কিছু করার সাহস করতে হয় তবে আপনার কিছু সামর্থ্যও থাকতে হবে। অন্যথায় সাহস বিপর্যয়ে পরিণত হবে। আপনি যদি এটি সফলভাবে করেন তবে লোকে বলবে আপনি খুব সাহসী। আপনি যদি অসফল হন, লোকে আপনাকে বোকা বলবে। মাঝের এই রেখাটি খুবই সূক্ষ্ম এবং সেই রেখা অতিক্রম করার ক্ষমতা, এই লাইনটি পার হবার ক্ষমতা আরও অনেক বেড়ে যাবে যদি আপনি আপনার অস্তিত্বের মৌলিক বিষয়গুলির উপর আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করেন।

যারা এসব নিয়ে কোনও সাধনা করতে রাজি নন, তাদের জন্য আমরা 'পঞ্চভূত আরাধনা' আয়োজন করি যাতে অন্তত সেখানে উপস্থিত হয়ে আপনি উপকৃত হন। এটিই একটি অনুষ্ঠানের তাৎপর্য। কোনো আচার- অনুষ্ঠান মূলত তাদের জন্য, যারা এটি নিজেরা করতে পারে না - জনসাধারণের সাধনা। হাজার জন মানুষ সেখানে বসে এটি থেকে উপকৃত হতে পারেন। তবে আপনি যদি সাধনা করেন, তা কেবল আপনারই। সাধনা অবশ্যই উচ্চমানের তবে আচার- অনুষ্ঠান বৃহত্তর উপকারের জন্য ।

Editor’s Note: Every month, during the Pancha Bhuta Aradhana, Sadhguru opens up a unique opportunity for devotees to benefit from this deep yogic science which would otherwise require intense sadhana.

On the 14th day of every lunar month, known as Shivaratri, and especially on Mahashivarathri , there will be an opportunity to experience the Pancha Bhuta Aradhana at the Dhyanalinga between 5:40 pm and 6:10 pm.

For more information, check the schedule of upcoming events or contact: Tel: 0422-2515345, Email: pba@ishafoundation.org