...এবার যোগ

সদগুরু : অনেক সময় লোকজন তাদের অর্থ চলে গেলে- সেই মুহূর্তে ভাবেন যে তাদের বুঝি জীবনটাই হারিয়ে গেছে এবং তারা নিজেদের মেরে ফেলতে চান, তাই না? না, আপনি যদি টাকা- পয়সা সব হারিয়েছেন তবে এটিই যোগ করার সময়!

সেই জন্যই পতঞ্জলি যোগসুত্রগুলি- যা জীবনের এক অসাধারণ দলিল, শুরু করেছিলেন আধখানা বাক্য দিয়ে। আপনি যদি এখনও বিশ্বাস করেন যে বিবাহ করে বা না করে, আপনার জীবন পূর্ণ হয়ে যাবে - যোগের জন্য এখনও সময় হয়নি; যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনি কিছু অর্থ বা সম্পদ পেলে আপনার জীবন স্থিতিশীল হয়ে যাবে - যোগের জন্য এখনও সময় হয়নি; যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে একটি নতুন বাড়ি তৈরি করলে বা একটি নতুন গাড়ি কিনলে জীবন পূর্ণ হয়ে যাবে - যোগের জন্য এখনও সময় হয়নি; যদি আপনি বুঝতে পারেন যে এই সমস্ত জিনিস আমাদের জীবনে কিছুটা সুবিধা করে দেয় তবে বাস্তবে কোনভাবেই আমাদের রূপান্তরিত করবে না - যদি আপনি এই একটি জিনিস বুঝতে পারেন - "তবে এবার যোগ।"

কাজেই চীনের সময় এসে গেছে - "এবার তবে যোগ।" কারণ সবকিছু বলা এবং সম্পাদন করা হয়ে গেছে, চীন একমাত্র সমাজ যা মাত্র পঞ্চাশ বছরে - দুই প্রজন্মের মধ্যে, একশ কোটি মানুষকে চরম, কঠোর দারিদ্র্য থেকে তুলে এনে মোটামুটি একটা ভালো জীবন দিতে পেরেছে। এরকম আর কোথাও ঘটেনি। এই মুহূর্তে ভারত এমনই একটি সম্ভাবনার দোরগোড়ায় বসে আছে। চীন প্রচন্ড শক্তি দিয়ে যা করেছে, ভারত গণতান্ত্রিকভাবে তা করতে পারে - তবে আমরা এখনও দোরগোড়ায় বসে আছি; আমাদের এখনও এই দূরত্ব পেরোতে হবে।

আমরা অনেক কিছুর বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি - বাকস্বাধীনতা, যোগের স্বাধীনতা, নিজের লক্ষ্য পূরণের স্বাধীনতা এবং এই রকম অনেক কিছু, তবে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে কারোর শক্তিশালী সংকল্পের ফলেই চীনা জনগণের বর্তমান উন্নতি ঘটেছে। তাহলে কি এখনও এটাই জীবনযাত্রার উপায় ? যখন তারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ছিল, তখন এই ভাবেই ধাক্কা দেওয়ার দরকার ছিল - ঠিক বা ভুল যাই হোক, এটা সমাধান হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের অবশ্যই এটির প্রশংসা করতে হবে কারণ এটা ঘটেছে। কারণ জোর করে কয়েকটি কাজ করানোর চেয়ে একটা পুরো প্রজন্মের মানুষকে কঠোর দারিদ্র্যের মধ্যে রাখাটা আরও জঘন্য অপরাধ। শক্তিশালী জিনিস নিষ্ঠুর এবং ব্যথার সৃষ্টি করে, কখনও কখনও মানুষের জীবন নিয়ে নেয়, তবে একটা পুরো প্রজন্মকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে রাখা অনেক বড় অপরাধ - কারণ মানুষের সম্ভাবনাগুলো কেড়ে নেওয়া এবং মানুষকে কোনওভাবে বাঁচিয়ে রাখা আসলে কোনও সমাধানই নয়।

যোগ জনগণের আফিম নয়

চীনের জন্য, যোগ করার সময় এসেছে। মোচড়ানো, ঘোরানো যোগ নয়- যা সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তবে প্রকৃত যোগ! যোগ মানে আপনার স্বকীয়তার সীমানা মুছে ফেলা। চীনের মতো একটি দেশ, যা জাতির প্রতি দৃঢ় সংকল্প- "আমরা এই এই করব" - এই তীব্র বোধের জন্যই উন্নতি করেছে। এখন যেহেতু লক্ষ্যগুলি পূরণ হয়ে গেছে, এবার ধীরে ধীরে এটা শিথিল হওয়া দরকার - আমার মনে হয় তারা এটা করছেন, তবে হয়তো এই প্রজন্মকে উপকৃত করার মতো পর্যাপ্ত দ্রুত নয়। এটি হওয়া দরকার, তবে প্রতিবাদ করে বা তারা জাতির জন্য যে স্থিতিশীল বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে - তাকে বিপন্ন করে নয়। সেটা নষ্ট করে আপনি কোথাও পৌঁছোতে পারবেন না। 

অতীতের ধর্মগুলিকে আফিম হিসাবে বর্ণনা করা হতো - কারণ তারা সেরকমই ছিল। তারা মানুষকে ঘুমপাড়িয়ে রাখতো। যোগব্যায়াম বা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া অনুসরণ - এগুলো অতীতের আফিমের মতো জনগনকে ঘুমপাড়ানোর জন্য কাজ করবে না, বরং একটি অদম্য শক্তি হিসাবে কাজ করবে - যারা এই জাতিকে পরিচালনা করেন তাদের অবশ্যই এটা উপলব্ধিতে আনতে হবে। এটাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা।

iecs-newsletter-banner