মন্দির - গ্রহণ করার জায়গা, চাওয়ার নয়

কঙ্গনা রানাওয়াত: সদগুরুজী, আমি দেখছিলাম কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে আপনি কেমনভাবে ছিলেন - আপনি সেখানে বসেছিলেন এবং আমি জানি না আপনি ধ্যানমগ্ন ছিলেন, নাকি এমনিই সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আমি জানি এর মধ্যে একটি গভীর বিজ্ঞান রয়েছে, সেটা বাস্তুশাস্ত্র হোক বা গর্ভস্থান। আমিও একটি মন্দির নির্মাণে সাহায্য করেছিলাম, তাই আমি জানি সমগ্র বিষয়টি খুবই বিজ্ঞানভিত্তিক। তো যখন কোন সাধারণ মানুষ সেখানে যাবেন, তারা কিভাবে সেখানে সময়ের পরিপূর্ণ সদব্যবহার করবেন? আমরা এই শক্তিকেন্দ্রগুলিকে কীভাবে শ্রেষ্ঠ উপায়ে কাজে লাগাতে পারি? 

সদগুরু: ভারতীয় মন্দিরগুলিতে যাওয়ার জন্য কিছু প্রাথমিক নির্দেশাবলী আছে। দক্ষিণভারতে আজও সেই নির্দেশাবলী জীবিত আছে। এমনকি বর্তমান যুগেও মানুষ জানেন - মন্দিরে গেলে তাদের প্রার্থনা, তাদের আর্জির কোন গুরুত্ব নেই। তাদের সেখানে কিছু সময়ের জন্য কেবল শান্ত হয়ে বসে থাকা আবশ্যক, কারণ একটি মন্দির একটা ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জায়গার মতো। আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের মন্দির নির্মাণ করেছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান যুগে বেশীরভাগ মানুষই মন্দিরগুলোকে প্রার্থনাকেন্দ্র হিসাবে ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। Tমন্দির প্রার্থনার জায়গা নয় - আপনার সেখানে কেবল দর্শন করার কথা। দর্শনের অর্থ "দেখা ", কারণ অবয়বটিকে নির্মাণ করা হয়েছে এক বিশেষ জ্যামিতিক আকারে এবং অন্যান্য ধরনের পরিপূর্ণতার ভিত্তিতে। 

ধারনাটি হলো সেখানে বসা এবং দর্শন করা, যার অর্থ আপনি সেই অবয়বের একটা ছাপ নিজের মধ্যে গ্রহন করছেন। এটি একটি শক্তিশালী অবয়ব এবং এটিকে এক বিশেষ বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এবং শক্তির কিছু বিশেষ মাত্রার অনুসরণে নির্মাণ করা হয়েছে। আপনি যদি এই অবয়বটিকে অন্তরে গ্রহন করেন, এটা আপনার অন্তরে বেঁচে থাকবে এবং বাড়তে থাকবে, এবং এটাই মন্দিরে যাওয়ার তাৎপর্য- সেখানে বসা এবং ওই শক্তিকে নিজের মধ্যে নেওয়া।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজকের যুগে মানুষের ধারণা হয়েছে -তাদের সেখানে খালি যাওয়া উচিত আর তাদের কি কি চাই ভগবানকে তার আবেদন জানানো উচিত। 

মন্দিরে কিভাবে থাকতে হয় 

কঙ্গনা রানাওয়াত: বড়ো হওয়ার সময় আমি কখনই মনে করিনি যে "শ্রীরাম" বলতে থাকলেই আমি জ্যোতির্ময় হয়ে যাব আর তাঁর প্রতিষ্ঠিত জীবনের মান, নীতি ও মূল্যবোধ এর ছাপ আমার মধ্যে চলে আসবে।  

সদগুরু: এমনটা হচ্ছে কারণ আমরা বাকি দুনিয়ার অনুকরণ করছি, যেখানে তারা বিভিন্ন জায়গা নির্মাণ করেছেন প্রার্থনার উদ্দেশ্যে। আপনার ভগবানের সাথে কথা বলাটা ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ নয়। কারণ এখানে, সচেতনতার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করেছি যে ভগবানকে আমরাই তৈরী করতে পারি। এটাই একমাত্র সংস্কৃতি যেটি এ বিষয়ে সচেতন যে ভগবান আমাদেরই সৃষ্টি। 

সেই জন্যেই আমাদের ৩৩ কোটি দেব-দেবী রয়েছে। অন্য যেকোন জায়গায় মানুষ বিশ্বাস করেন ভগবান তাদের সৃষ্টি করেছেন। এখানে আমরা জানি, আমরাই ভগবানকে সৃষ্টি করেছি - কিন্তু সেটা আমাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে! এবং আমাদের কল্যাণ শুধু আমাদের অর্থ, জীবনধারণ আর খাবারকেই বোঝায় না। মুক্তিও তার অন্তর্গত - এটাই এই সংস্কৃতির মাহাত্ম্য।. 

তাহলে আমাদের কি আশা করা উচিত আর কেমন প্রস্তুতি নেওয়া উচিত একটা মন্দিরের পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা আনতে? যদি আপনি যোগ কেন্দ্রে আসেন, পুরুষদের সূর্যকুন্ডে এবং মহিলাদের চন্দ্রকুন্ডে ডুব দিতে দেখতে পাবেন এবং তারপর তারা যান মন্দিরে, শরীর সামান্য ভিজে থাকতেই। এসবকিছু বহু আগে থেকেই ছিল, প্রতিটি মন্দিরে কুন্ড থাকত এই কারণেই। আপনার একবার ডুব দেওয়ার কথা এবং তারপরই প্রবেশ, কারণ আপনি শক্তিটির প্রতি বেশী গ্রহনশীল হন যখন আপনার শরীর ভিজে থাকে। এছাড়া আপনার মানসিকতায় এটা জরুরী, আপনি যাতে না ভাবেন যে আপনি সেখানে যাচ্ছেন ভগবানকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য। 

এটাই একমাত্র সংস্কৃতি যেটা সচেতন যে ঈশ্বর আমাদেরই সৃষ্টি।

আপনি সেখানে যাচ্ছেন না ভগবানকে বলতে যে তাঁকে কি করতে হবে _ আপনি সেখানে গেছেন নিজেকে শক্তির এক মাত্রার প্রতি গ্রহনশীল করতে যা আপনি নিজে সৃষ্টি করতে পারেন না। এই কারণেই এই সংস্কৃতিতে কথিত আছে যে আপনি সংসারী মানুষ হলে প্রতিদিন আপনার দৈনন্দিন কাজ শুরুর আগে মন্দিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু একই সাথে এই ছাড়ও দেওয়া ছিল যে আধ্যাত্মিক মার্গের মানুষদের মন্দিরে যাওয়ার দরকার নেই, কারণ আপনার তখন নিজের কাছেই চার্জিং পদ্ধতি রয়েছে - তাই আপনার সর্বসাধারণের জন্য নির্ধারিত স্থানে যাওয়ার দরকার নেই। যদি আপনি গ্রামের মানুষদের দেখেন, দেখবেন তারা বারোয়ারী কলে জল নিতে যান কারণ তাদের বাড়িতে নিজস্ব কল নেই। কিন্তু যাদের বাড়িতেই কল রয়েছে তারা আর বারোয়ারী কলে জল ভরতে যাচ্ছেন না - এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই।

হয় আপনি এটা নিজের ভেতরে সৃষ্টি করতে পারেন অথবা আপনি অন্য কোথাও যেতে পারেন এটা পাওয়ার জন্য। "কিভাবে আমার যাওয়া উচিত?" আপনার নিজেরই মন্দিরের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ হয়ে যাওয়া উচিত। মন্দিরের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ মানে আপনি বোঝেন যে এই দেহও সৃষ্টির উৎসকে ধারণ করে আছে, যেটাকে কিনা আপনি বলছেন ঈশ্বর। যেটা এই সৃষ্টির উৎস, সেটাকেই তো আপনি উল্লেখ করছেন ঈশ্বর বলে এবং এই দেহ অবশ্যই তা ধারন করে আছে। যদি তা আপনার অভিজ্ঞতায় নাও থাকে, অন্তত আপনার চিন্তাভাবনা ও আবেগের মাধ্যমে জানেন যে এটা আমার মধ্যে আছে এবং এটা জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন। একমাত্র বিষয় হলো এটা এইমুহূর্তে আমার অভিজ্ঞতায় নেই, কিন্তু এটা আমার অভিজ্ঞতায় আনতে হবে। 

কঙ্গনা রানাওয়াত: এটা আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি যে কিছু মানুষ অন্যদের থেকে অনেক বেশী উন্নত হন। কিন্তু সেক্ষেত্রে মন্দিরে গেলে এই আত্মোপলব্ধির অভিজ্ঞতা কি চেষ্টা করলে সবার পক্ষেই করা সম্ভব? নাকি কয়েকজনের জন্য এটা কঠিন হবে আর অন্যরা সহজেই পেয়ে যাবেন?

সদগুরু: যদি আমি আপনাকে একটা গাছে চড়তে বলি, সেখানে কি পার্থক্য কি থাকবে না - কিভাবে আমি গাছে উঠছি আর আপনি কিভাবে উঠছেন? সেটা নির্ভর করবে আমি কিভাবে আমার শরীরকে রেখেছি আর আপনি কিভাবে রেখেছেন তার ওপর। জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই এরকম। ধরুন আপনি একটি বই পড়লেন। কত দ্রুত একজন বুঝবেন, তা নির্ভর করছে তাদের উপলব্ধি কতটা শানিত তার ওপর। একইভাবে আপনার প্রাণশক্তির ক্ষেত্রেও _ এটা নির্ভর করছে আপনি এটাকে কোন্ মাত্রার প্রস্তুতি এবং তৎপরতায় রেখেছেন, তার উপর। 

কঙ্গনা রানাওয়াত: কিন্তু সদগুরু, এখানে প্রচুর মন্দির রয়েছে। আমি মনে করি আমাদের পুর্বপুরুষেরা নানা ধরনের চমৎকার সব মন্দিরে বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে পরিমান অর্থ, সম্পদ, এবং মানসিক শক্তি ও আবেগ বিনিয়োগ হয়েছে এই মন্দিরগুলোয়, এটা এমন এক সংস্কৃতি যা অনেকখানি মন্দিরভিত্তিক ছিল; আর আপনি বলছেন এগুলোর কোন গুরুত্বই নেই। 

সদগুরু: এমনকি তখনও, তারা এটা তৈরী করেছিলেন তাদের জন্য, যারা সাংসারিক। যোগীরা গুহায় গিয়ে থাকতেন। তাঁরা কখনই মন্দিরে থাকতেন না _ তারা পর্বতে পরিভ্রমণ করতেন এবং নদীর তীরে বাস করতেন। তাঁরা প্রতিদিন মন্দিরে আসতেন না। কিন্তু যদি এটা আপনার প্রয়োজন হয়, তবে এটা কাজে লাগানোতে কোন ভুল নেই। এটা একদমই স্বাভাবিক। 

একজন যোগী হিসাবে সদগুরু কতটা আলাদা?

কঙ্গনা রানাওয়াত: আদিযোগী সম্পর্কে আমি যেটুকু শুনেছি, তিনি সর্বদাই নিজের মনে পরমানন্দে থাকতেন। তাঁর সপ্তঋষিদের নিয়ে কোন আগ্রহ ছিল না বা কাউকে জ্ঞান দেওয়ার ব্যাপারেও। উপরন্তু যাকিছু তিনি তাদের প্রদান করেন, তা ফিরিয়েও নেন। তাঁর জ্ঞান বিতরন বা সে রকম কোনো ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহ ছিল না। তো বেশিরভাগ যোগী যাদের আমি দেখি, যখন কুম্ভমেলা হয়, সেখানে অনেক অসাধারণ সব মানুষেরা আসেন, তারা যেন ঠিক স্বর্গ বা কোথাও থেকে হঠাৎ নেমে এসেছেন। 

কিন্তু আপনার ব্যাপারটা ঠিক কি? আমি মনে করি আপনি একজন কর্মী, এই জগতে _ আপনি নদীগুলো বাঁচাতে চান, আপনি তাদের কথা ভাবেন ; আপনি পরিবেশের জন্য ভাবেন। যেভাবে আপনি ধ্যানলিঙ্গের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আপনি প্রায় আপনার জীবন দিতে বসেছিলেন তার প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য। একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে মানুষকে দেওয়ার জন্য। তো কিভাবে এই যোগীরা আপনার থেকে আলাদা? 

সদগুরু: কাশীতে আপনি এখানে যাদের দেখলেন, তাদের কয়েকজন শুধুই যোগীর মতো পোশাক পরে আছেন আর চেষ্টা করছেন আদিযোগীকে নকল করার। সেই জন্যেই আমি আমার পরিচ্ছদ পুরো পাল্টে ফেলেছি। তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু নেশাচ্ছন্ন আর অপুষ্ট। কিন্তু আপনি আদিযোগীকে দেখুন - তিনি হয়তো এই গ্রহের সবথেকে সুঠাম দেহী ভগবান কারণ তিনি একজন যোগী।  

কিচ্ছু যায় আসে না আমি কেমন পরিবেশে আছি, কেমন মানুষের সাথে আছি _ এতে আমার কোন তফাৎ হয় না। আমি সু-সঙ্গ খুঁজে বেড়াই না, আমি খারাপ সঙ্গেও ঠিক আছি, কারণ আমার কাজই হল খারাপ সঙ্গে।

আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আর সেখানে পড়াশোনা করার দুর্ভাগ্য হয় নি। সেখানে গেলে আপনি দেখবেন প্রফেসররা রোজ তাদের অর্জিত শিক্ষা বিতরণ করছেন। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন তারা তাদের পি.এইচ.ডি. বা কিছু করছিলেন পাঁচ বছর ধরে। যখন তারা কারোর সাথে কথাও বলতেন না, তারা লাইব্রেরিতেই সময় কাটাতেন লেখালেখি করে, পড়াশোনা করে এবং বিভিন্ন জিনিস আয়ত্ত করতে। আপনি তাদের সেইসময় দেখলে ভাবতেন, তারা বুঝি জগতের সবকিছু ত্যাগ করেছেন - এক রকম ভাবে তারা তাই করেছেন। এটা কোন ত্যাগ-ট্যাগ নয়, আপনার মনযোগ কোন বৃহত্তর বিষয়ের উপর পড়েছে এই যা। যখন আপনি এমন কিছুর উপর কাজ করেন, তখন অন্য লোকেরা ভাবেন আপনি বুঝি সবকিছু ত্যাগ করেছেন। তারা এটা বোঝেন না যে আপনি খুব কঠিন একটা বিষয় নিয়ে লেগে আছেন, তাই আপনার হাতে অন্য কোন কিছুর জন্য সময় নেই। তাই এমন কেউ যে চার থেকে পাঁচ বছর ধরে পি.এইচ.ডি. করছেন তিনি আপনার স্থানীয় অনুষ্ঠানে না আসলেই আপনি ভাবেন তিনি বুঝি বৈরাগী হয়ে গেলেন। কিন্তু একবার তিনি প্রফেসর হয়ে গেলে, এবার তিনি শেখাতে শুরু করেন এবং প্রতিদিনই সব ধরনের মানুষজনের সাথে মেলামেশা করেন। একটা বিষয় হলো তার জ্ঞান বা জানার অবস্থা আর দুর্বল নয়। দুর্বল নয় বলতে, তার অনন্য উপস্থিতি আর কোনভাবে বিপন্ন নয়। প্রথম প্রথম আপনি অন্যরকম পোশাক পরলে, অন্যরকম খাবার খেলে বা মানুষজনের সাথে মিশলে আপনার জ্ঞান দুর্বল হবার আশংকা থাকে; কারন তখনও এটা পুর্নাঙ্গ পরিণতি পাওয়ার পথে। একইভাবে একজন যোগীর ক্ষেত্রেও _ আপনি ভাবেন তিনি সবকিছু ত্যাগ করেছেন। তিনি ত্যাগ করেননি, তিনি কোনকিছুতে মনোনিবেশ করেছেন।  

প্রত্যেকের জীবনেই এরকম কিছু বিশেষ অবস্থা থাকে, আর এরকম পরিস্থিতি আমার জীবনেও ছিল। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আলাদা, কারণ আমার আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া দুর্বল নয়। আমি যেমন খুশী ভাবে থাকতে পারি এবং তবুও ঠিক থাকব __ কিছুই হারাবে না আমার। কিছু যায় আসে না আমি কেমন পরিবেশে আছি, আমি কেমন মানুষের সাথে আছি _ এতে আমার কোন তফাৎ হয় না। আমি সু- সঙ্গ খুঁজে বেড়াই না। খারাপ সঙ্গেও আমি ঠিক আছি, কারণ আমার কাজ খারাপ সঙ্গেই। 

আমরা দু-দশকেরও বেশী সময় ধরে কারাগারগুলোতে কাজ করছি, যার অর্থ আমি রয়েছি চরম আসামিদের সাথে। তাদের সাথে আছি বলে আমিও কি আসামি হয়ে যাবো? না। বরং সম্ভাবনা আছে তারা যোগী হয়ে উঠবেন। আমি একজন আসামি হয়ে যাবো না। 

 

Editor’s Note: Here’s a glimpse into Sadhguru’s Kashi Krama in 2019.