গল্প: একজন অন্ধ ব্যক্তি তার একজন বন্ধুর সাথে কিছুদিন থেকেছিলেন, এবং একদিন রাতে তিনি তার আদি শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। তার বন্ধু তাকে একটি লণ্ঠন দিতে চায়, কিন্তু লোকটি তার প্রতিবাদে জানায়, “আমার লণ্ঠনের কী দরকার? আমার জন্য সবকিছুই সমান। যে অন্ধ, তার প্রদীপ দিয়ে কী লাভ?”

“প্রিয় বন্ধু, এটি তোমার জন্য নয়; এটি তোমার সামনে যে ব্যক্তিটি আসবে তার জন্য। যদি আপনার হাতে এই লণ্ঠনটি থাকে, তাহলে আপনার সামনে আসা ব্যক্তি আপনার সাথে আচমকা ধাক্কা খাবে না।”

“সেই ক্ষেত্রে, আমি এটি গ্রহণ করব,” অন্ধ লোকটি বলল।

তিনি প্রদীপটি নিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে শুরু করলেন। তা সত্তেও, রাস্তায় একজন এসে তাকে সরাসরি ধাক্কা মারলেন। অন্ধ লোকটি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলেন। তিনি রেগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি আমাকে ধাক্কা মারলেন কেন? আমার হাতে একটি লণ্ঠন ছিল - আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা দেখতে পাচ্ছেন না?”

“কোন লণ্ঠন? আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না,” যিনি ধাক্কা মেরেছিলেন তিনি চারিদিকে তাকিয়ে বললেন।

তারপরে তিনি লণ্ঠনটি দেখতে পেয়ে বললেন, “ওহ হ্যাঁ! একটি লণ্ঠন আছে বটে, কিন্তু এর শিখাটি তো অনেক আগেই নিভে গিয়েছে, প্রিয় বন্ধু।”

সদগুরু: লোকটি আলোর জন্য প্রদীপটি বহন করছিলেন। এটিকে ওপরে ধরে রাখা এবং শিখাটি নিভে যাওয়ার পরেও সেটিকে বহন করা কেবল অর্থহীন একটি আচার। আমরা আমাদের জীবনে উদ্দেশ্য নিয়ে এমন অনেক কিছু শুরু করেছি, কিন্তু পরবর্তীকালে সেগুলো তাদের গুণাগুণ হারিয়ে নিছকই কিছু আচারে পরিণত হয়েছে।

কর্ণাটকে একটি বিশেষ আচার রয়েছে। যদি কারোর বাড়ির অতিথিকে নিরামিষ খাবার পরিবেশন করা হয় তবে তারা যে পাতায় খাবার পরিবেশন করবেন, সেই পাতার পাশে একটি পেষণী রাখবেন। আমি অনেককে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছি, কিন্তু তারা আসল কারণ জানেন না। সংস্কৃতি সম্পর্কে দক্ষ ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন প্রবীণকে জিজ্ঞাসা করার পরে আমি উত্তরটি খুঁজে পেয়েছি।

আগে, নিয়মটি ছিল, দাঁত খুঁটিবার মত সরু একটি কাঠি রাখতে হত পাতার পাশে যাতে যিনি খাচ্ছেন তার দাঁতে যদি কিছু আটকে যায়। সময়ের সাথে সাথে তারা সরু কাঠিটির জায়গায় একটি লাঠি রাখা হয় এবং তারপরে কোনো বোকা মানুষ লাঠির পরিবর্তে পেষণী রাখতে শুরু করেন। পরে, কেউ কোনও ব্যাখ্যা না জানা সত্তেও এটিকে একটি আদর্শ অনুশীলনে পরিণত করেন। কেউ কি দাঁত খুঁটবার জন্য একটি পেষণী ব্যাবহার করতে পারেন?

এভাবেই আমরা আমদের জীবনের সুবিধার্থে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা নিয়ম তৈরি করি। তবে যখন আমরা ভুলে যাই যে এই প্রক্রিয়াগুলি মৌলিকভাবে কেন তৈরি হয়েছিল এবং কেবল আমাদের বাবা বা পিতৃপুরুষেরা এটি করার কারণে সেগুলি অনুসরণ করা শুরু হয়েছিল, এটি নিছক আচারে পরিণত হয়ে যায়। কারণ আমরা বুঝতে পারি না কেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম কিছু আচারকে পরম্পরায় পরিণত করা হয়েছে এবং পালন করা হচ্ছে। সেগুলির আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কিনা আমাদের জীবনে সেটি ভেবে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পরি।

প্রদীপ বহনকারী অন্ধের মতো, আমাদের জীবনে দিশা দেওয়ার জন্য তৈরি করা কিছু সরঞ্জামগুলি কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। এখনই সময় তাদের আসল উদ্দেশ্যটি খুঁজে বের করার এবং আমাদের জীবনে আমাদের পথের দিশা পাওয়ার জন্য তাদের প্রদীপে পরিণত করার। অন্যথায়, কমপক্ষে আমাদের পথপ্রদর্শন করার জন্য নতুন সরঞ্জাম তৈরি করা উচিত।