সদগুরু আলোর উৎসব দীপাবলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কীভাবে আমরা এই উৎসবকে দারুণভাবে উৎযাপন করতে পারি তা জ্ঞাপন করছেন।

সদগুরু: দীপাবলি পালন করা হয় নানা সংস্কৃতিগত কারণে কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে একে বলা হতো নরকচতুর্দশী কারণ নরকাসুর নামের এক নিষ্ঠুর রাজাকে কৃষ্ণ নিধন করেছিলেন। সেই কারনে এই উৎযাপন এত বড়ো মাপের আকার পায়। এই উৎসব নানা ভাবে পবিত্র। এই দিনে, বলা হয় যে যদি কারোর অর্থের প্রয়োজন হয় তবে লক্ষ্মীর আগমন ঘটবে। যদি কেউ স্বাস্থ্য চান তবে শক্তির আগমন ঘটবে। যদি কেউ শিক্ষা চান তবে সরস্বতী আসবেন। এগুলো সবই লোককথার বিভিন্ন প্রকাশ এটা বলার জন্য যে এই উৎসব মঙ্গল আনে।

অন্তরে আলোর সৃষ্টি

দীপাবলি হলো আলোর উৎসব। দীপাবলির দিন আপনি দেখবেন প্রত্যেকটি মফস্বল, শহর ও গ্রামের সব জায়গা হাজার হাজার প্রদীপের আলোয় আলোকিত । কিন্তু উৎসবটা শুধুই বাইরে প্রদীপ জালানোর নয় - ভেতরেও একটা আলোর জন্ম নিতে হবে। আলো মানে স্বচ্ছতা। স্বচ্ছতা ছাড়া আপনার যাই গুণ থাকুক না কেন তা বাধাই হয়ে দাঁড়াবে, উপহার নয়, কারণ স্বচ্ছধারণাহীন আত্মবিশ্বাস মানেই দুর্যোগ। এবং আজ, বিশ্বে অনেক কাজই করা হয় স্বচ্ছ ধারণা ছাড়া।

যদি আমরা শুধু বসেও থাকি, তবু আমাদের জীবনী শক্তি, হৃদয়, মন এবং দেহ বিস্ফোরিত হওয়া উচিত জীবন্ত বাজির মতো। যদি আপনি স্যাঁত-স্যাঁতে পটকা হন, তাহলে আপনার বাইরে থেকে বাজির দরকার পড়বে রোজ।

কোন এক দিন, একজন সদ্য চাকরি পাওয়া পুলিশ তার অভিজ্ঞ সহকর্মীর সাথে একটি নগরের মধ্যে দিয়ে প্রথমবার গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা রেডিওতে একটা খবর পেলেন, যে একদল লোক নাকি কোন এক রাস্তায় ঘুরঘুর করছেন এবং তাদের সরাতে হবে। তারা গাড়ি চালিয়ে সেই রাস্তায় পৌঁছলেন এবং দেখলেন একদল লোককে রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে। যেই গাড়িটা একটু কাছে এলো, নতুন পুলিশটি খুব উৎসাহের সাথে তার গাড়ির জানলাটি নামালেন এবং বললেন, "এই যে, আপনারা সবাই। ওই কোণটা থেকে সরে যান! "দলের লোকগুলো অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালেন। তারপর তিনি আরও জোরে চেঁচালেন, "আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না? আমি আপনাদের ওই কোণটা থেকে সরতে বললাম তো!" তারা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন। তারপর নিজের এই প্রথম অফিসিয়াল কাজে লোকগুলোর উপর এমন প্রভাবশালী হতে পারায় খুব সন্তুষ্ট হয়ে তিনি তার অভিজ্ঞ সঙ্গীর দিকে তাকালেন আর জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি ভাল করেছি তো?", তার সঙ্গী বললেন, "একদমই খারাপ না, ওটা একটা বাসস্টপ ছিল সেই নিরিখে।"

উপযুক্ত স্বচ্ছ ধারণা ছাড়া, যাই আপনি করতে চেষ্টা করবেন তা বিধ্বংসী হবে। আলো আপনার দৃষ্টিতে স্বচ্ছতা আনে - শুধু দেহের আঙ্গিকেই নয়। কতটা পরিষ্কারভাবে আপনি জীবনকে দেখেন এবং আপনার চারপাশের সবকিছুকে অনুভব করেন, সেটাই নির্ধারণ করে কতটা বাস্তবসম্মতভাবে আপনি আপনার জীবনকে অতিবাহিত করেন। দীপাবলি হল সেই দিন যেদিন অন্ধকারকে পরাজিত করে আলো জন্ম নেয়। এটা মানব জীবনের ক্ষেত্রেও বিধেয়। ঠিক যেমন কালো মেঘ অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে ভাসে, তারা বুঝতে পারে না যে তারা সূর্যকে ঢাকছে, একইভাবে একজন মানুষকে অন্য কোথাও থেকে আলো জোগাড় করতে হবে না। যদি সে শুধু নিজের মধ্যে জমতে দেওয়া সেই কালো মেঘগুলোকে দূর সরিয়ে দেয়, তাহলেই আলো ফিরবে। আলোর এই উৎসব সেটাই মনে করিয়ে দেয়।

জীবন এক উৎসব

ভারতীয় সংস্কৃতিতে, একটা সময় ছিল যখন বছরের প্রত্যেকটা দিনই একটি করে উৎসব থাকতো - বছরে ৩৬৫টি উৎসব। এর পেছনে ভাবনাটাই ছিল আমাদের গোটা জীবনকে একটা উৎসবে পরিণত করা। আজ হয়ত মাত্র তিরিশটা কি চল্লিশটার মতো উৎসব অবশিষ্ট আছে। আমরা সেগুলোও উৎযাপন করতে পারিনা ঠিক মতো কারণ আমাদের অফিসে যেতে হবে বা অন্য কিছু করার আছে রোজ। তাই লোকজন সাধারণত বছরে মাত্র আটটা কি দশটা উৎসব উৎযাপন করছেন। যদি এটাকে আমরা এইভাবেই ছেড়ে দিই,পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোন উৎসবই থাকবে না৷ তারা জানবে না উৎসব কি জিনিস। তারা শুধুই আয় করবে আর খাবে, আয় করবে আর খাবে - তারা শুধু এটাই বারবার করে যাবে। অনেক মানুষের জন্যেই এটা ইতিমধ্যেই এরকম হয়ে গেছে। একটা উৎসব মানে আপনি একটা ছুটির দিন পেয়েছেন আর আপনি দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন না। তারপর আপনি খালি বেশী করে খান, সিনেমা দেখতে যান অথবা টিভি দেখেন বাড়িতেই। আর একমাত্র বাইরে থেকে কোন উত্তেজক নিলে, তবেই তারা সামান্য একটু নাচবেন। তা নাহলে তারা গাইবেন না বা নাচবেন না। এটা এরকম ছিলনা আগে। একটা উৎসব মানে ছিল গোটা শহরটা এক জায়গায় জড় হবে আর সেখানে হবে অনুষ্ঠান খুব বড় করে। একটা উৎসব মানে ছিল আমরা ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠব আর খুব সক্রিয় ভাবে, প্রচুর জিনিস হত সারা বাড়ি জুড়ে। সেই সংস্কৃতিকে মানুষের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে ঈশা চারটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উৎযাপন করে: পোঙ্গাল বা মকর সংক্রান্তি, মহাশিবরাত্রি, নবরাত্রি এবং দীপাবলি।

গম্ভীর নয় অথচ পরমভাবে নিযুক্ত

যদি আপনি সবকিছুর দিকে উৎসব উৎযাপনের মনে এগোন, তবে আপনি শিখবেন জীবন নিয়ে গম্ভীর না হতে অথচ সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত থাকতে। এখন বেশিরভাগ মানুষেরই সমস্যাটা হলো, যদি তারা কোনকিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তারা সেটা নিয়ে সাংঘাতিক গম্ভীর হয়ে যান। যদি তারা ভাবেন এটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তবে তারা সেটাকে নিয়ে ঢিলেঢালা থাকেন - যথাযোগ্য নিষ্ঠা দেখান না৷ যখন কেউ বলেন, "তার অবস্থা খুবই গম্ভীর," তার মানে তার পরবর্তী গন্তব্য আপনি জানেন কোথায়। প্রচুর মানুষ খুব গম্ভীর অবস্থায়। তাদের সাথে ঘটবে একমাত্র একটাই জিনিস যার কোন মাহাত্ম্য আছে। বাকি সবই তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাবে কারণ কোন কিছুই যেটা তারা গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন না, সেটার প্রতি তারা মনযোগ ও নিষ্ঠা দেখাতে পারেন না। গোটা সমস্যাটা ওটাই ৷ জীবনের গোপন রহস্য জানার পথ এর মধ্যেই রয়েছে - সবকিছুকে গম্ভীর চোখে না দেখা অথচ পরম নিযুক্তি - একটা খেলার মত। ওটাই কারণ জীবনের সর্বোচ্চ বিষয়গুলো উৎসব-উৎযাপনের মন নিয়ে এগোনোর, যাতে আপনি পুরো বিষয়টা বুঝতে ভুল না করেন।

দীপাবলির মানে হলো সেই উৎসবমুখরতাকে আপনার জীবনে আনা - সেইজন্যই পটকাবাজি, আপনার মধ্যে একটু আগুনটা জালানো! তাই উদ্দেশ্যটা এই একটা দিন শুধু মজা করা আর চলে যাওয়া নয়। এটা যেন এরকম আমাদের মধ্যে প্রতিদিনই ঘটে। যদি আমরা শুধু বসেও থাকি, তবু আমাদের জীবনী শক্তি, হৃদয়, মন এবং দেহ বিস্ফোরিত হওয়া উচিত জীবন্ত বাজির মতো। যদি আপনি স্যাঁত-স্যাঁতে পটকা হন, তাহলে আপনার বাইরে থেকে বাজির দরকার পড়বে রোজ।

Editor’s Note: At the Isha Yoga Center, major festivals, including Makar Sankranti and Pongal, Navratri and Mahashivratri are celebrated with great exuberance. These festivals are a part of Isha’s efforts to rejuvenate the ethos of Indian culture.

Indian Culture