ঈশ্বরের ব্যাপারে কোন আপোস নেই

সদ্গুরু: মূলত, আমরা এই পৃথিবীতে জীবন হিসেবে জন্ম নিয়েছি; বাকি সব জিনিসগুলো আমাদের শেখানো হয়েছে। আমরা সকলে অনেক কিছুতে পরিণত হয়েছি যা আমরা নই। এই মুহূর্তে যেটা আমাদের ঠিক করা দরকার সেটা হল - আমরা কারা? যে শিক্ষা আমাদের মানুষ বানায় না সেগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। আমাদের বুঝতে হবে, অশুভ সর্বদাই আরোপিত হয়েছে শুধুমাত্র এক মানুষের দ্বারা অন্য মানুষের উপর, কখনোই অন্য কোন শক্তির দ্বারা নয়।

মানবজাতির ইতিহাসে আকাশ থেকে বেরিয়ে এসে কেউ কখনও মানুষের কোনও অমঙ্গল ঘটায়নি। মানুষের ওপর যেকোনো রকমের ভয়ঙ্কর অত্যাচার কোনো মানুষই করে। কারণ হয়ত বিভিন্ন – অহং, অর্থ, ক্ষমতা বা অন্য কিছু। কিন্তু যখন লোকেরা বিশ্বাস করে যে তারা তাদের ঈশ্বরের জন্য লড়াই করছে, তখন সেখানে কোন আপোস থাকে না। এটা আমাদের বোঝা দরকার।

যে মুহূর্তে আপনি অনুমান করছেন এবং এক হাজার লোক জড় করছেন যারা ওই একই অনুমান করে নিয়েছেন, আর আমি অন্য কিছু অনুমান করে দশ হাজার লোক জড় করছি, তখন সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী।

ঈশ্বরের জন্য লড়াই করলে কখনও আপস সম্ভব নয়। এটা যদি সম্পত্তি হয়, আমি আপস করতে পারি। কিন্তু আমি এমন কিছুর জন্য লড়াই করছি যেখানে আপোষের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এটা বুঝতে হবে যে কোনও কিছুর উপর আপনার বিশ্বাস পরম হলে, আর আমার বিশ্বাস অন্য কিছুর উপর হলে, একে অপরকে হত্যা করা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

হয়তো আমরা করব অথবা আমাদের ছেলেমেয়েরা করবে অথবা তাদের ছেলেমেয়েরা করবে, কিন্তু এটা হতে বাধ্য। আপনি যখন কিছু বিশ্বাস করেন, তার মানে ঠিক এই: আপনি যেটা জানেন না, সেটা আপনি অনুমান করে নিচ্ছেন, সেই অনুমানটিকে জমাটবদ্ধ করছেন এবং এরম মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি হতেই থাকছে। যে মুহূর্তে আপনি অনুমান করছেন এবং এক হাজার লোক জড় করছেন যারা ওই একই অনুমান করে নিয়েছেন, আর আমি অন্য কিছু অনুমান করে দশ হাজার লোক জড় করছি, তখন সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী।

ধর্মকে ব্যক্তিগত সাধনার রূপ দেওয়া

যখন এরকম ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, প্রত্যেকেই প্রবলভাবে অনুভব করেন এই ব্যাপারে কয়েক দিনের জন্য, তারপর তারা চলে যান স্বাভাবিক কাজ কর্মের মধ্যে। শুধুমাত্র এখানে সেখানে অল্প একটু শান্তির সূচনার লক্ষ্যে এইসব আলাপ আলোচনা কোন সমাধান নয়। একটা মৌলিক জিনিস যেটা আমাদের করা উচিত সেটা হল পরবর্তী ২৫ বছরে, যদি আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে, এটা প্রতিপাদন করতে হবে যে আপনার ধর্ম আপনার সাধনা, যা কিছু চান তা করুন কিন্তু সেটা কোন রাষ্ট্রব্যাপী বা বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি হতে পারে না।

এটা ঠিক করতেই হবে শতকরা একশত ভাগ। যদি আমরা এটা না করি, আমরা শুধুমাত্র কয়েকটা চার্চ-এ বিস্ফোরণ বা কোনো মসজিদে গুলি চালানোতে ব্যাপারটা সীমিত থাকবে না। দেশের পর দেশ টুকরো টুকরো হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে, কারণ তরোয়ালের দিন শেষ হয়েছে। আজ এক মারাত্মক বোতামে চাপ দিয়ে অকল্পনীয় ধ্বংস আনা সম্ভব। মানব জাতির এক বৃহৎ অংশ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে, কারণ প্রযুক্তি আজ আমাদের সেই সম্ভাবনার দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে। একটা তরওয়াল দিয়ে একশজন মানুষ মারার দিন চলে গেছে। এখন এক নিমেষে কটি কটি মানুষের মৃত্যু সম্ভব।

বিশ্ব রূপান্তরিত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার 

প্রযুক্তির এই একই অগ্রগতি আজ আমাদের এখানে বসে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব করেছে, বিশ্বের শতকরা ৫৭ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারেন। প্রায় ১২ বছর আগে, আমি আমেরিকায় একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম যিনি এক ধরনের ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "মানুষজনেরা যারা ঘন্টার পর ঘন্টা তারা এই নেটে রয়েছেন, তারা কিসের খোঁজ করছেন?"। তিনি খুবই অপ্রত্যাশিত ভাবে বললেন,"সদ্গুরু, প্রায় ৭০ শতাংশই অশ্লীল যৌন সিনেমা ও চিত্র"। আমি বিশ্বাস করতে চাইনি। আমি বলেছিলাম "এটা সম্ভব নয়। এটা ৭০ শতাংশ হতে পারে না"। তারপর আমি আরো অন্য কয়েকজনের কাছে যাচাই করি এবং তারা প্রত্যেকেই বলেন তথ্যটা ঠিক।

আরও জানতে পারলাম, প্রত্যেক বছর প্রায় ১২ লক্ষ শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম, ইন্টারনেটে বিক্রি হচ্ছে। কি হয়েছে আমাদের? আমাদের কাছে যখন প্রযুক্তির এরকম বিস্ময়কর হাতিয়ার আছে, সেটা দিয়ে আমরা আমাদের বাচ্চাদের বিক্রি করতে চাই? এইভাবে আমরা এর ব্যবহার করব? আমরা এটা বদলাতে চাই। সেই জন্য গত ১০ বছর ধরে আমি সোচ্চার। আমাদের এই ধরনের বিষয়বস্তুর বিরোধ করতে হবে এবং একটি বিকল্প উপস্থাপন করতে হবে।

কিছু বছর আগে, আমি ব্যাঙ্গালোর শহরে হাঁটছিলাম। কতগুলি 12-13 বছরের ছেলে দৌড়ে এসে বলল,"সদগুরু! সদগুরু!" আমি বললাম,"আরে! তোমরা কি করে জানলে আমি কে?" তারা বলল, "আমরা আপনার ভিডিও দেখি, সদগুরু"। আমি বললাম, "তোমাদের মায়েরা তাহলে তোমাদের নিশ্চয়ই জোর করছে আমার ভিডিও দেখতে"। তারা বলল, "আমাদের ক্লাসে আমরা সবাই আপনার ভিডিও দেখি"। আমি সত্যিই খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে সকল স্কুলে আমি যাই তার প্রত্যেকটির কমপক্ষে শতকরা কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ বাচ্চারা আমাদের ভিডিও দেখছে। আমি যখন ১৫ বছরের ছিলাম আমাকে কোনও আধ্যাত্মিক ভিডিও দেখানো অসম্ভব ছিল!

প্রযুক্তি আজ এটা সম্ভব করেছে মানুষের মনকে প্রভাবিত করতে এবং বিশ্বে রুপান্তর ঘটাতে। আমরা কি এটা ঘটানোর জন্য সমর্পিত?

এটা আমাদের সময়, আসুন এই সময়টাকে আমরা মনুষ্য জাতির জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় করে তুলি। আমরা অত্যন্ত ক্ষমতা প্রদত্ত এক প্রজন্ম, সময় এসেছে একে ব্যবহার করার, সকলের মঙ্গল উপলক্ষে। আসুন আমরা করে দেখাই।