সদগুরু: অনেক বছর আগে, যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, এজকন অধ্যাপককে ক্লাস চলাকালীন উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর নোটসগুলো আমাকে দিয়ে দেবার কথা বলেছিলাম, যাতে আমি সেগুলোর ফটোকপি করা নিতে পারি। এতে তাঁর ক্লাসে দাঁড়িয়ে ডিক্টেশনের সময় বেঁচে যেত আর আমিও ক্লাসে আসার ঝামেলা থেকে রেহাই পেতাম। বলাই বাহুল্য যে, আমি সাথে সাথেই ক্লাস থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলাম। সত্যি বলতে কী, আমি সেটাই চাইছিলাম। 

এটা কি ক্লাস ফাঁকি দেবার পরামর্শ ? অবশ্যই না। কিন্তু যা বলতে চাইছি তা হল, অপরিণত মনে অসংখ্য প্রশ্ন ভিড় করে আসে অবিরত – ওগুলো প্রশ্নই থেকে যায় – কদাপি তার উত্তর মেলে

যা করেছিলাম, সেটা সঠিক ছিল না এবং তা করার জন্য কাউকে উৎসাহ দেবো না। যা বলতে চাইছি যে, ক্লাসরুমগুলো যেন নোটস ডিক্টেশনের সমার্থক আর আমি ওখানে স্টেনোগ্রাফার হতে চাইতাম না।

ক্লাস থেকে বহিষ্কৃত হওয়া আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। স্কুলের অভিজ্ঞতা ভীষণই একঘেঁয়ে লাগত আমার, কারণ শিক্ষকরা যা বলতেন তার কোনওটাই তাদের জীবনের কাছে অর্থপূর্ণ ছিল না। শিশু বয়সে আমার অধিকাংশ সময় কাটতো স্কুলের বাইরে একটি জলাশয়ের মধ্যে বৈচিত্র্যময় জলজ প্রাণীদের দেখতে দেখতে। যখন আমার বাবা-মা বুঝলেন যে, জলের জীবদের আবিষ্কারের নেশায় আমি নিজেই জলে ভিজে চুপচুপে হয়ে যাচ্ছি, তখন আবার আমাকে ক্লাসের মধ্যে ধরে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা হল।

প্রশ্ন কখনও শেষ হয়নি

এটা কি ক্লাস ফাঁকি দেবার পরামর্শ ? অবশ্যই না। কিন্তু যা বলতে চাইছি তা হল, অপরিণত মনে অসংখ্য প্রশ্ন ভিড় করে আসে অবিরত – ওগুলো প্রশ্নই থেকে যায় – কদাপি তার উত্তর মেলে। কল্পনাহীন বড়দের জগত শুধু গ্রেডেশন, কেরিয়ার, অর্থ উপার্জন শেখাতেই ব্যস্ত, কিন্তু শৈশব মানে তো প্রশ্নের সারি, আমার নিজের শৈশবেই লাখো প্রশ্ন ভিড় করে আসতো মাথার মধ্যে। আমার বাবাকে হতাশ হয়ে বলতে শুনেছি, “জীবনে যে এই ছেলেটা কী করবে কে জানে ?” বাবা কখনও বুঝতেই পারেননি যে, সেই ছোট বয়স থেকেই আমার করার মতো কাজের অভাব হয়নি কখনও। ক্লাসরুম আমার কাছে বরাবর নীরস ছিল, কিন্তু ওটার বাইরে আমি গভীর ভাবে উৎসাহী ছিলাম সব কিছু নিয়ে – পৃথিবী গ্রহটা যেভাবে তৈরি, ঋতুর বদল, গভীর জঙ্গল, কৃষির সময় ভৌগোলিক পরিবর্তন, ফসলের বেড়ে ওঠা, মানুষ কীভাবে ভেচে থাকে। আর এই সব কিছু নিয়ে অসংখ্য প্রশ্নে ভরপুর ছিল আমার জীবন।

 

বেড়ে ওঠার বয়সে প্রশ্ন যেন শেষ হতেই চায় না। এই মুহূর্তে ভারতের মোট জনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি পঁচিশ বছর বা তার থেকেও কম বয়সী। এর অর্থ হল, প্রশ্নের সংখ্যা অগণিত। এই যে ৬৫ কোটি তরুণ সম্প্রদায় – এদের আশা আকাঙ্ক্ষা, দক্ষতা বা ণৈপুণ্যই ঠিক করে দেবে এদেশের ভবিষ্যৎ এবং এই গ্রহটির ভবিষ্যৎ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই তরুণ সম্প্রয়দায় আজ নিজেরাই যন্ত্রণা বিদ্ধ, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার হারের নিরিখে আমাদের দেশ আজ শীর্ষে। প্রতি ঘন্টায় একজন ছাত্র আত্মহত্যা করে আমাদের দেশে। এই পরিসংখ্যান দেখে নিজেদের প্রশ্ন করার এসেছে যে, এতদিন কোথায় ভুল করে এসেছি আমরা।

এই কারণেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সময় নিয়ে কথা বলার। পরামর্শ দেওয়া বা নৈতিকতা শেখানো উদ্দেশ্য নয়। তরুণ বয়সে ওই সব নৈতিকতার গল্প আমার জীবনেই কাজে দেয়নি। ওদের আমি যা দিয়ে যেতে চাই তা হল জীবনকে দেখার স্বচ্ছ দৃষ্টি। কোনও রকম পূর্বকৃত সিদ্ধান্তে না পৌঁছে, প্রশ্নগুলির অবিরাম উত্তর খোঁজার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার অর্থ হল জীবনের সাথে অ্যাডভেঞ্চার

“আমি জানি না” – একটি সম্ভাবনা

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আজকের পৃথিবী জানেই না যে, কোনও সম্ভাবনা উন্মোচিত হওয়ার প্রথম দ্বার হল “আমি জানি না”। প্রথাগত শিক্ষার নামে যা চলছে তা হল, অসংখ্য বিশ্বাস, অনুমান বা পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তগুলি চাপিয়ে দেওয়ার চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল। আমরা ভুলে গেছি যে, “আমি জানি না ” এই অনুভবের জায়গাটা তৈরি হলে - তবেই জানার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়।

এরকম তারুণ্য প্রয়োজন, যারা শুধু প্রশ্নই করবে না, তার সমাধান অণ্বেষণে নিজের জীবনকেই উৎসর্গ করে দেবে। এটিই হল ব্যক্তি ও বিশ্বের ভাল থাকার চাবিকাঠি

এই সম্ভাবনার দ্বারটি উন্মুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকে তারুণ্যের পর্বে। এই সম্ভাবনার দ্বারটি উন্মুক্ত হলে পরেই জীবনের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়। এরকম তারুণ্য প্রয়োজন, যারা শুধু প্রশ্নই করবে না, তার সমাধান অণ্বেষণে নিজের জীবনকেই উৎসর্গ করে দেবে। এটিই হল ব্যক্তি ও বিশ্বের ভাল থাকার চাবিকাঠি 

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image

A version of this article was originally published in Speaking Tree.