আবেগের আতিশয্য সামলানোর উপায় কী?
আবেগের চিটচিটে ফাঁদে আটকে গেলে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কি কোনও উপায় নেই? কীভাবে আবেগের আতিশয্য থেকে নিজেকে দূরে রাখা যাবে, সোনাক্ষী সিনহার প্রশ্নের উত্তরে, সেই পরামর্শ দিলেন সদগুরু –
![How to Get Out of Emotionally Difficult Situations? How to Get Out of Emotionally Difficult Situations?](https://static.sadhguru.org/d/46272/1633488877-1633488876391.jpg)
সোনাক্ষী সিনহা: প্রিয় সদগুরু জী, আমি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং প্রাশয়ই দেখি যে, আমার অনুকূলে নেই এমন পরিস্থিতির কাছ থেকেও নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারছি না আবেগের বশে। কোনও ঘটনা আমার বিরুদ্ধে জাচ্ছে জেনেও সেখান থেকে আমি আমার মন ও আবেগকে কিছুতেই সরিয়ে নিতে পারিনা। আমি একেবারেই চাই না, কিন্তু ভাবনাগুলো ক্রমাগত মাথার মধ্যে আসতেই থাকে। মনের এই অবস্থাকে সামলানোর জন্য আপনি কি পরামর্শ দেবেন ?
সদগুরু: সকলের কাছেই যেন সমস্যার রূপভেদ একটিই, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের সম্পর্ক। কিন্তু বাস্তবে মন ও আবেগ বলে আলাদা কিছু হয় না, যেভাবে তুমি ভাববে, তোমার অনুভূতিও সেরকম হবে। যেভাবে তুমি অনুভব করবে, তোমার ভাবনাও সে দিকেই যাবে।
বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে তার মন ও আবেগ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কার্যকরী হয়। অধুনা শিক্ষার প্রকৃতি অনুযায়ী, সাধারণভাবে মানুষের ভাবনা তার আবেগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছোটে। কিন্তু কিছু মানুষ এখনও আছেন, যাদের আবেগ ভাবনার চেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু বর্তমান সময়ে সব মানুষই আবেগে ভর করে চলা ব্যক্তিদের গায়ে নির্বোধ বলে তকমা লাগিয়ে দিতে চান। এর কারণ, আবেগের শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অবহিত নন। যদিও বহু মানুষ ইদানিং আবেগের কোশেন্ট (quotient) পরিমাপের ভাবনা শুরু করেছেন।
মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সময়
আসলে সোনাক্ষী যা বলতে চাইছে তা হল, অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতি আসে যেখানে তুমি থাকতে না চাইলেও আবেগ তার সঙ্গে লেপ্টে থাকে, ভাবনা চিন্তাও ক্রমাগত ওদিকেই যেতে থাকে এবং তুমিও অগত্যা ওই রাস্তাতেই হাঁটতে থাকো।
সত্যি বলতে কী, ভাবনা চিন্তা হল অতীব ক্ষিপ্রগতি, এটি দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আবেগ হল চিটচিটে বা আঠালো বস্তুর মতো, মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এর কিছুটা সময় লাগে। আজ তোমার কোনও এক ব্যক্তিকে বেশ সুন্দর মানুষ বলে মনে হল। আগামীকাল যদি সেই ব্যক্তিটিই তোমার অপচ্ছন্দের কোনও কাজ করে, সঙ্গে সঙ্গে তোমার ভাবনা বলবে যে, ওই লোকটি ভাল নয়। কিন্তু আবেগ অত দ্রুতগতি নয়। কোনও ব্যক্তির সঙ্গে একবার জড়িয়ে গেলে, আবেগের সময় লাগে সেই ব্যক্তির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে। মন নেই, কিন্তু আবেগ আছে - এই সময়টিই অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
মনের বাঁদুরে প্রকৃতি
এর জন্য কী করা যেতে পারে ? আবেগ অথবা চিন্তাকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে যেও না, কারণ মানব মনের সহজাত প্রকৃতিই হল এরকম যে, যদি তুমি ভাবো “ওই লোকটিকে নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না”, সেক্ষেত্রে ওই লোকটিই বাকি জীবনটা তোমার ভাবনার সবটুকু জুড়ে থাকবে।
এ যেন প্রবাদপ্রতিম বাঁদুরে কাহিনী। এখন যদি তোমাকে বলি যে, “পরের পাঁচ সেকেন্ড তুমি বাঁদরের কথা ভাববে না”, সেক্ষেত্রে যা ঘটবে, শুধু বাঁদরের কথাই মনের সবটুকু জুড়ে থাকবে। এর কারণ, মানুষের মনের প্রকৃতিই এরকম যে, যেটা তুমি ভাবতে চাও না, সেই ভাবনাটাই সবার আগে আসবে।
যখন এই অদম্য ভাবনা ও আবেগ জন্ম নেয়, তোমার প্রথম ও প্রধান কাজ হল সেগুলিকে তাদের মতো থাকতে দেওয়া – কোনও ভাবেই সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যেও না। যে মুহূর্তে তুমি ভাবনা ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাবে, সেগুলি বহুগুণ বেড়ে যাবে।
মনের চরিত্র এমনই যে, সেখানে শুধু গুণ বা যোগের মাধ্যমে বৃদ্ধির খেলা চলে, বিয়োগ বা ভাগের মাধ্যমে কিছু হ্রাস পায় না। যদি ভাবো, “এই আবেগ চাই না”, সেটি শুধু বাড়তেই থাকবে। আবার যদি ভাবো, “হে ভগবান, ওই ভাবনাগুলো আবার আসছে, ওগুলোকে আমি চাই না”, সেগুলি শতগুণে বেড়ে যাবে, মনের প্রকৃতি এমনই। জোর করে কোনও ভাবনা বা আবেগকে তুমি মন থেকে সরাতে পারবে না।
দূরত্ব তৈরি করতে শেখা
এটা বোঝা অত্যন্ত জরুরী যে, ভাবনা আর আবেগ হল মনের মধ্যেই জমা হয়ে থাকা পুরোনো তথ্যের চর্বিতচর্বণ – শুধুই স্মৃতিকে উসকে দেওয়া। স্মৃতি হল সেই পুরোনো গন্ধের মতো, যা বারে বারেই ফিরে ফিরে আসে। তোমাকে এসবের থেকে দূরত্ব তৈরি করতে শিখতে হবে।
ধরো তুমি এয়ারপোর্টে যাবার সময় ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়েছো। কী নিদারুণ উদ্বেগ আর যন্ত্রণায় তোমাকে ভুগতে হবে ভাবো একবার। তারপর কোনও রকমে জ্যাম থেকে নিস্তার পেয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে চেক-ইন করে প্লেনে উঠে বসতেই সেটি উড়তে শুরু করল। এরপর ওপর থেকে নীচে তাকিয়ে দেখলে সেই জ্যামে আটকে থাকা সারিবদ্ধ গাড়িগুলোকেই কী সুন্দর দেখতে লাগবে ভাবো একবার! এর সহজ কারণ হল, তখন সেই জ্যামের সঙ্গে একটা দুরত্ব তৈরি হয়েছে। এবং ওই দূরত্ব তৈরি হওয়ার জন্যই তোমার অনুভূতিতে সেই জ্যামটি আর কোনও সমস্যার কারণ নয়।
ঠিক একই কথা প্রযোজ্য তোমার ভাবনা আর আবেগের ক্ষেত্রেও। অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে রাখতে হবে তোমার শারীরিক প্রক্রিয়া এবং মানসিক প্রক্রিয়াকে। কিন্তু প্রত্যেকটি ভাবনা আর আবেগকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে যাও, সেক্ষেত্রে তারা হাজার গুণ বেড়ে যাবে।
সদগুরু নির্দেশিত মেডিটেশন Isha Kriya শিখে নিতে পারেন বিনামূল্যে, যা শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়া থেকে দূরত্ব তৈরি করতে সাহায্য করবে। দেখুন Isha Kriya Online অথবা SadhguruApp.
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.
![Youth and Truth Banner Image](https://static.sadhguru.org/d/46272/1633186536-1633186535246.jpg)