সদগুরু: যেকোনো তীর্থের নেপথ্যে যে উদ্দেশ্যটা থাকে সেটা হল মূলত আপনার আমিত্ব বোধটাকে সরিয়ে ফেলা। নিজেকে হাঁটা, পাহাড়ে চড়া ও প্রকৃতির আরো নানা দুঃসাধ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে শূন্য হয়ে ওঠা। আজকাল সবকিছুই অনেক আরামদায়ক হয়ে গেছে।আমরা বিমানে করে যাচ্ছি তারপর নেমে গাড়ি করে কিছুটা গিয়ে মাত্র অল্প একটু হাঁটছি।

হাজার বছর আগেকার মানুষ যেমন ছিল সেই তুলনায় আমরা শারীরিকভাবে অনেকটাই দুর্বল কারণ কোথাও যেন আমরা জানিই না যে এই স্বাচ্ছন্দ্য বা সুযোগসুবিধাগুলোকে কীকরে নিজেদের কল্যাণে কাজে লাগাতে হয়। নিজেদেরকে আরো দুর্বল করে তুলতে,নিজেদের সাথে ও পারিপার্শ্বিকের সাথে আরো জড়িয়ে পেঁচিয়ে যেতে আমরা এগুলোকে ব্যবহার করে চলেছি। তো তীর্থের মূল উদ্দেশ্য আজকালকার সমাজে আগের চেয়ে আরো বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গন্তব্যের দিক থেকে দেখলে, যাওয়ার জন্য সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ গন্তব্য হল কৈলাস ও মানস সরোবর।

আমি মনে মনে এমন অবস্থায় নেই যে,আমায় তীর্থ করতেই হবে, তাসত্ত্বেও কৈলাস-মানস সরোবরের এই তীর্থ, অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে একেবারে বিস্ময়কর। এমনটা হবে কখনো আশা করিনি। যথেষ্ট দেখেছি। কয়েক জন্মের স্মৃতি এখনও আমার সাথে রয়েছে, আমি সেরকম প্রকৃতির নই যে কোনোকিছুতে সহজেই অবাক হব বা উত্তেজিত হব; কিন্তু এই গত পনেরো দিন, আমার অনুভূতিতে, ঠিক অবাক করা নয় বরং কিঞ্চিৎ অভিভূত করা।

হাজার হাজার বছর ধরে আত্মজ্ঞানপ্রাপ্ত সত্তারা সবসময় কৈলাসে গেছেন, গিয়ে তাঁদের জ্ঞান এক নির্দিষ্ট উপায়ে, নির্দিষ্ট শক্তির আকারে গচ্ছিত করে রেখেছেন। হিন্দুরা বলেন, শিব থাকেন কৈলাসে আর দক্ষিণ ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদ সবসময় বলে, তাঁদের মহান যোগী তথা দক্ষিণ ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদের জনক, যিনি স্বয়ং শিবের সরাসরি সাত শিষ্য অর্থাৎ যাঁরা সপ্ত ঋষি বলে পরিচিত তাঁদের অন্যতম সেই অগস্ত্য মুনি, তিনি থাকতেন ঐ কৈলাসের দক্ষিণমুখে। এর মানে এই নয় যে তাঁরা সেখানে সত্যিসত্যিই বাস করছেন বরং এর মানে হল তাঁরা তাঁদের সমস্ত কাজ ঐখানে গচ্ছিত করে রেখেছেন যেহেতু তাঁরা মানুষজনের মধ্যে এটা প্রেরণ করতে পারেননি। তো এটা একটা জ্ঞানের ভাণ্ডার।

পৃথিবীতে যত মন্দির, স্থান বা আর যা কিছু থেকে থাকুক না কেন - আর আমি এমন অনেক সত্যিকারের পবিত্র ও শক্তিশালী জায়গায় গেছিও, অনেক শক্তিশালী সত্তাও দেখেছি - আমি যখন তাঁদের কাছে মাথা নোয়াই, আন্তরিকভাবেই নোয়াই তবে তা যেন সবসময়েই আমার গুরুর কাছে মাথা নত করার চেয়ে কিছু কম কিন্তু আমি যখন কৈলাসের কাছে মাথা নত করি, আমার গুরুর কাছে যেমন নত করতাম, ঠিক সেভাবেই মাথা নত করি। এর আগে সারা জীবন আমি কখনো কোনোকিছুর প্রতি বা কারোর প্রতি এমন করিনি, বরং সবসময় একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম কিন্তু কৈলাসের প্রতি, আমি যখন মাথা নত করি, এমনভাবেই নত করি যেমনটা আমি তাঁর প্রতি করি।