প্রশ্নকর্তা: সদগুরু, কেন ধ্যানলিঙ্গকে একটি গম্বুজের ভেতরে রাখা হয়েছে? এর পেছনে কি কোন বৈজ্ঞানিক কারণ আছে?

সদগুরু: যা কিছু বিচ্ছুরিত হয়, আলো বা তাপ- সবসময় তা বৃত্তাকারে বিকীর্ণ হবার প্রবণতা দেখায়। যদি আমরা একটি বর্গাকার ভবন বানাতাম- আপনি সংবেদনশীল হলে, সেই স্থানে গেলেই আপনি একটা অসংগতি অনুভব করতেন। কাজেই ধ্যানলিঙ্গের জন্য একটি গোলাকার ভবনই বানাতে হতো।

ধ্যানলিঙ্গ- চত্বরের নকশার সাথে আপোস করা আমার জীবনের এমন একটি দিক যা এখনও আমাকে অবনত করে। প্রত্যেকবার যখন আমি এর ভেতরে প্রবেশ করি, আমি জানি এটা কিরকম হতে পারত, আর নিজেদের আর্থিক ও সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা কিভাবে করেছি। প্রাথমিকভাবে, আমি একে 60 ফুট মাটির নীচে তৈরি করতে চেয়েছিলাম এবং একটি বড় জলাশয় দিয়ে ঘিরে রাখতে চেয়েছিলাম। এটি নির্মাণের শ্রেষ্ঠ উপায় ছিল সেটা। কিন্তু যখন আমরা এটি তৈরী করছিলাম- আমাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এটা সম্পূর্ণ করতে হতো, কারণ আমার জীবন একটি বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সময় এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের কাজ ত্বরান্বিত করতে হয়েছিল এবং সেইজন্য আমি একটি দ্বিতীয় প্ল্যান তৈরী করলাম। সেটাও খুবই ব্যয়সাপেক্ষ ছিল, তাই আমি তৃতীয় প্ল্যান ঠিক করি। বর্তমানে আমরা সেই তৃতীয় প্ল্যানটিকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করছি এবং একে উপযুক্ত করে তুলছি কারণ 'তিনি' যা- তাঁর জন্য কোনো ধরনের অলঙ্করণই যথেষ্ট নয়। আমরা যতটা করতে পারি তার জন্য সাগ্রহে চেষ্টা করে চলেছি।

স্থাপত্যের দিক থেকে ধ্যানলিঙ্গ গম্বুজটি অনন্য। সাধারণত গম্বুজগুলি 'তাজমহল' অথবা 'গোল গম্বুজের' মত অর্ধ-গোলকাকার হয়, কিন্তু আমরা উপবৃত্তাকার গম্বুজ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কোন স্টীল, কংক্রিট অথবা সিমেন্ট ছাড়া উপবৃত্তের একটি অংশকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখাই ছিল সবথেকে কঠিন কাজ। সেই জন্যেই গম্বুজটি অনন্য। যদি আপনি স্বাভাবিকভাবে এর দিকে তাকান, এটি একটি গোলার্ধের মত মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি উপবৃত্তের একটি অংশ। আমরা এভাবেই এটিকে করতে চেয়েছিলাম কারণ লিঙ্গটিও উপবৃত্তাকার, তাই লিঙ্গের শক্তির পরিপূরক হিসেবে উপবৃত্তাকার গম্বুজই সবচেয়ে ভালো।

যে কারণে আমরা কোন সিমেন্ট, স্টীল এবং কংক্রিট ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ইঁট ব্যবহার করেছিলাম, তা হল- কংক্রিট, যদি খুব উচ্চমানের কংক্রিট হয়- সেটাও সর্বোচ্চ ১২৫ বছর টেকসই হবে। সেখানে বসবাসকারী পরবর্তী প্রজন্মের লোকজনদের আমরা বিরক্ত করতে চাই না। ভাবুন তো যদি একশো বছর পর একটি কংক্রিটের পিলার কারো উপর ভেঙে পড়ে! তাদের দুরাবস্থা আপনি অনুমান করতে পারেন? আমরা এমন ভাবে পরিকাঠামো তৈরি করছি- যাতে সেটা তিন থেকে পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকে; কারণ এটি এমন একটি জিনিস যা মানুষ দীর্ঘ সময় যাবত উপভোগ করবেন। যদি আপনি কোন মেসোপটেমিয়ান অথবা ইজিপশিয়ান খননকার্য দেখেন- সর্বপ্রথম আপনি মৃৎশিল্পের অবশিষ্টাংশ দেখতে পাবেন; কারণ, যদি আপনি মাটিকে পোড়ান- এর জীবনকাল প্রায় অনন্তকাল। ইঁটও এক ধরনের মৃৎশিল্পের অংশ- এগুলো চিরকাল থেকে যাবে।

গম্বুজের অন্য একটি দিক হল- এটা প্রায় সমস্ত আধুনিক ভবনের মত পীড়ন বা টানের জন্য সংহত থাকছে না। অধিকাংশ স্থাপত্যে ছাদ এবং অভিকর্ষের মধ্যে সর্বদা একটি সংগ্রাম কাজ করতে থাকে; অভিকর্ষ ভবনটিকে নীচে টেনে নামাতে চায়, ছাদ ভবনটিকে দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়- এবং একদিন অভিকর্ষেরই জয় হবে। কিন্তু গম্বুজটি কেবলমাত্র ইঁট, মাটি এবং অল্প পরিমাণ চুন এবং ভেষজ সংযোজক দ্বারা একত্রে সংহত আছে। সাধারণ প্রযুক্তি এটাই যে সমস্ত ইঁট একই সাথে নীচের দিকে নামার চেষ্টা করছে, সুতরাং তারা সেটা করতে পারবে না। এটা এরকম যে যখন দশজন লোক একটি দরজা দিয়ে একসাথে বেরতে চায়, তারা পারে না; তারা আটকে যাবে, যদি না তাদের মধ্যে কোন একজন পিছিয়ে আসার সৌজন্যতা দেখায়। এবং বিশ্বাস করুন- ইঁটেদের কোন সৌজন্যতাবোধ নেই।

প্রত্যেকটি ইঁটকে 24 ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখা হয়েছিল এটা নিশ্চিত করার জন্য যে সেগুলো সম্পূর্ণভাবে পোড়ানো হয়েছিল। আধপোড়া ইট ইঁটকে জলে রাখা হলে সেগুলো গলে যাবে। যেগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গলে যায় না -সেগুলো সম্পূর্ণরূপে পোড়ানো হয়েছে এবং এদের জীবনকাল অনন্ত। আমরা প্রত্যেকেটি ইঁটকে মিলিমিটার পর্যন্ত পরিমাপ করেছি কারণ যদি ওগুলো ভিন্ন মাপের হয়, সেগুলো পড়ে যাবে। গম্বুজটিকে একটির পর একটি ইঁট বসিয়ে বলয়াকারে স্থাপন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল, একবার একটি ইঁটের স্তর বসানো শুরু করার পর আপনাকে সেইদিনই সেটা সম্পূর্ণ করতে হবে। যদি আপনি সেটা না করেন, রাতারাতি সেটা ভেঙে পড়বে। একবার এটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আর ভেঙে পড়তে পারে না।

ঈশা যোগ কেন্দ্রটি একটি ভূকম্পন- সংবেদনশীল স্থান, সুতরাং আমরা গম্বুজটিকে একটি বালির ভিতের ওপর নির্মাণ করেছি। আমরা ২০ ফুট গভীরে খনন করেছি এবং সেটাকে বালি দিয়ে ভর্তি করেছি, সুতরাং এটি একটি গদির মত কাজ করবে। এটা যেকোন কম্পন শোষণ করে নেবে।

তারপর, শুধুমাত্র আরেকটু বেশি দুঃসাহসী হবার জন্য, আমরা গম্বুজে ন'ফুটের একটি ফাঁকা অংশ রেখেছি যাতে গরম হাওয়া বাইরে বের হতে পারে। সাধারণত, মানুষ বিশ্বাস করেন যে গঠনগত দিক থেকে গম্বুজে ফাঁকা রাখা অসম্ভব। লোকে বলে, "একটি গম্বুজকে সম্পূর্ণ বদ্ধ হতে হবে, অন্যথায় এটি ভেঙে পড়বে।" আমি বলেছিলাম, "চিন্তা করবেন না। এটা সেভাবে দাঁড়িয়ে নেই। " গম্বুজটি পৃথিবীর বলের সাথে সম্পূর্ণভাবে সংগতি রেখে চলছে। এটা খুবই স্বচ্ছন্দভাবে রয়েছে- এমনকি আপনি বলতে পারেন যে এটা ধ্যান করছে, কারণ ভবনটিতে কোন পীড়ন নেই। সেই কারণে আমি সবাইকে বলি, "যখন ভবনগুলো নিজেরাই ধ্যানস্থ অবস্থায় আছে, আপনার তো সহজেই হওয়া উচিত!"

গম্বুজটি তৈরি করতে আমরা যে এক লক্ষ আশি হাজার ইঁট ব্যবহার করেছি সেগুলো সব স্বেচ্ছাসেবীরা পরিমাপ এবং স্থাপন করেছিলেন। আমি তাদের সাথে বসে এটা বুঝিয়েছিলাম যে, "দেখুন এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমি এটা আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। যদি কেউ সামান্যতম অমনোযোগী হয়ে যা পরিমাপ হওয়া উচিত তার থেকে মাত্র ২ মিলিমিটার কম পরিমাপ করে, সম্পূর্ণ জিনিসটি ধসে পড়তে পারে।" পুরুষ, মহিলা এবং বাচ্চারা বসে পড়েছিলেন এবং দিন রাত ধরে পরিমাপ করেছিলেন। আমি চেয়েছিলাম এই ভবনটি এভাবেই তৈরি হোক- মানুষের ভালোবাসার থেকে, অন্য কিছু থেকে নয়।

Editor's Note: It is Sadhguru’s vision that the Dhyanalinga be made available to all, not just now, but for generations to come. This week, Isha launches its online campaign to help raise funds for completion of the Dhyanalinga complex. This is an opportunity for all of us wishing to make the spiritual process available to all, to join in making it happen by giving what we can. To learn more about the expansion plans for the Dhyanalinga and to get involved, please visit: www.giveisha.com/temple