সদগুরু: প্রতি বছর এই বিশ্বে ৮,০০,০০০ মানুষ আত্মহত্যা করছেন। এটি সমস্ত অপরাধজনিত খুন এবং যুদ্ধের মৃত্যুর মিলিত সংখার চেয়েও বেশি। এর অর্থ হ'ল- প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি নিজের জীবন নিচ্ছেন। এটি কেবলমাত্র তখনই আপনি জানতে পারেন যখন আপনার পরিচিত কেউ মারা যান বা এমন কেউ মারা যান যিনি আমাদের সমাজে জনপ্রিয় বা উল্লেখযোগ্য কেউ - তখন সবাই উঠে বসেন। 

আত্মঘাতী চিন্তার কারণ কী?

কেন একজন মানুষ তার নিজের জীবন নিতে চাইবেন? তাদের জীবনের পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ হয়তো আত্মহত্যা করছেন, কিন্তু বহু মানুষ তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতির কারণে আত্মহত্যা করেন।

যখন তারা তাদের নিজস্ব প্রকৃতিতেই আনন্দিত থাকেন, তখন কেন কেউ তাদের নিজের জীবন শেষ করবেন? কেন কেউ হতাশ হবেন?

আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত করি নি যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক গঠন সামলাতে শেখায়। বেশিরভাগ মানুষকে নিজের বুদ্ধি কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তা শেখানো হয়নি। এখন আপনার যে বুদ্ধি আছে তার যদি অর্ধেকটা থাকত, তাহলে আপনার কোন মানসিক অসুস্থতা থাকত না। এখন আপনার একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বুদ্ধিমত্তার রয়েছে, কিন্তু আপনি এমন কোনও প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়েও আসেননি বা এমন কোনও সামাজিক পরিস্থিতিতে বাস করেননা- যেখানে আপনার বুদ্ধিকে কিভাবে নিজের কল্যানে ব্যবহার করবেন তা শেখানো হয় । কাজেই আপনার নিজের বুদ্ধিমত্তা, আপনার বিরুদ্ধেই কাজ করছে। এটিকে এতটাই আশাহীন মনে হয়- যেন এর বাইরে বেরোনোর কোনও উপায় নেই। এর থেকেই মানুষ আত্মহত্যা করেন।

এটি সহজেই থামানো যেতে পারে; যদি সঠিক ব্যবস্থা থাকে যেখানে একেবারে শৈশব থেকেই প্রত্যেককে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেখানো হয়- যেখানে তারা তাদের নিজস্ব প্রকৃতিতেই আনন্দময় হয়ে ওঠে, তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা স্বাভাবিকভাবেই মনোরম। তারা যখন তাদের নিজস্ব প্রকৃতিতেই আনন্দিত থাকে- তখন কেন কেউ তাদের নিজের জীবন শেষ করবে? কেন কেউ হতাশ হবে?

হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা।

"হতাশা" শব্দটি শুধুমাত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের হতাশা নয়। আজ যদি আপনার জীবনে দুটো জিনিস গোলমাল হয়ে যায়- আপনি মৃদু হতাশ হতে পারেন। আমি মনে করি বেশিরভাগ মানুষ জীবনের কিছু পরিস্থিতির জন্য কোন না কোন সময় হতাশাগ্রস্থ হতে শুরু করেন। তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তারা নিজেদের সাথে কথা বলে এটা থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা বিভিন্ন রকম অনুপ্রেরণা ব্যবহার করেন, কারও প্রতি তাদের ভালোবাসা- দেশের প্রতি বা তাদের জীবনে মহত্বপূর্ণ এমন কিছুর কথা ভেবে তারা এটা থেকে বেরিয়ে আসেন। হয় আপনি নিজের সাথে কথা বলে এটা থেকে বেরিয়ে আসবেন বা আপনি আপনার বন্ধু বা পরিবারের সাথে কথা বলবেন এবং তারা আপনার সাথে কথা বলে এটা থেকে বের করে নিয়ে আসবে; অন্যথায় আপনাকে পেশাদারের সাহায্য চাইতে হবে।

হতাশা থেকে মুক্তির উপায় না থাকলে একজন মনোচিকিৎসক কেন আপনার সাথে বসে কয়েকঘন্টা কথা বলবেন? স্পষ্টতই তারা জানেন যে কথা বলে আপনাকে তারা এটা থেকে বের করে আনতে পারেন। না হলে তো রাসায়নিক সহায়তা আছেই। যখন রসায়নের কথা আসে- এই মানবতন্ত্রটি পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত রাসায়নিক কারখানা। প্রশ্নটি কেবল এটাই যে আপনি এই রসায়নের একজন দুর্দান্ত পরিচালক নাকি ঢিলেঢালা পরিচালক। যোগের অর্থ আপনি নিজের রাসায়নিক কারখানার একজন খুব দক্ষ পরিচালক হয়ে উঠবেন।

যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রতিরোধ

লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ থেকে উপকৃত হয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরীক্ষামূলক পরিসংখ্যান রয়েছে, যা থেকে আমরা জানি যে এটি কাজ করে। তবে এখন রক্ত- চিহ্নিতকারীর ( ব্লাড মার্কার) সাহায্যে অধ্যয়ন করা হচ্ছে এবং আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে যোগিক অনুশীলনের মাধ্যমে বংশগত গুনাগুণও পরিবর্তিত হচ্ছে।

..এখন রক্ত চিহ্নিতকারীর সাহায্যে অধ্যয়ন করা হচ্ছে এবং আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে যোগিক অনুশীলনের মাধ্যমে জিনগত গুনাগুনও পরিবর্তিত হচ্ছে।

এগুলি স্পষ্টভাবে দেখায় যে সঠিক অনুশীলন করে এই মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতাগুলিকে আপনি কেবলমাত্র প্রতিরোধই করতে পারবেন না, আপনি যদি সঠিকভাবে এটি করেন তবে আপনি এ থেকে বেরিয়েও আসতে পারবেন। একমাত্র সমস্যা হ'ল কেউ যখন মানসিক অবসন্ন অবস্থায় থাকেন, তখন তাদেরকে দিয়ে অনুশীলনগুলি করানোটাই বিশাল সমস্যা। প্রতিদিন তাদের এটি করানোর জন্য সবরকম ভাবে সাহায্য করা প্রয়োজন, যদি আশেপাশে সমর্পিত মানুষ থাকেন তবেই এটি সম্ভব, তাছাড়া নয়। আমি হাজার হাজার মানুষকে দেখাতে পারি- যারা এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসেছেন; কারণ আমরা একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করি। প্রতিটি বাড়িতে এটা তৈরি করা সম্ভব নাও হতে পারে। প্রশ্নটি হল প্রয়োগের। তবে কিছু চিকিৎসাজনিত ঘটনাও রয়েছে যেগুলো খুবই শক্ত। আমরা এ ধরনের রুগীও দেখেছি এবং তাদের ওষুধের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো গেছে। 

 

Editor's Note:  Say goodbye to depression and negativity and learn to live a joyful, exuberant and fulfilling life with Inner Engineering Online which is available free of cost for COVID Warriors and at half the cost for everyone else. Register now!