এর আগে, "নারী এবং আধ্যাত্মিকতা" পর্যায়ের প্রথম পোষ্টে, সদগুরু ক্রিয়া-যোগ মার্গে চলা নারীদের ব্যাপারে বলেছিলেন। এই সপ্তাহে কীভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অলক্ষ্যে বিভিন্ন ভুল বিকৃত ধারণা প্রচলিত ছিল যা আধ্যাত্মিক পথে মেয়েদের বিরুদ্ধে পক্ষপাত সৃষ্টি করে এসেছে, সেই সম্পর্কে সদগুরু বলছেন।

সদগুরু:
পুরুষ এবং নারীর সর্বোচ্চ চেতনায় উপনীত হবার ক্ষেত্রে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা সর্বদাই এক সমৃদ্ধ মিশেল হয়ে এসেছে। যখন কথা হয় ভেতরের প্রকৃতি নিয়ে তখন একজন নারী ততটাই সক্ষম যতটা একজন পুরুষ। এটা কেবলমাত্র বাইরের আবরণ, শরীর, যাকে আপনারা একজন পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক বলেন। যেটা ভেতরে আছে তা এক। বাইরের খোসা কারোর আধ্যাত্মিক সামর্থ্য বিচার করতে পারে না।

প্রাচীনকালে স্ত্রীলোকেরাও পৈতে বা উপবীত ধারণ করতেন কারণ এটা না হলে তারা পুঁথি পাঠ করতে পারতেন না। একজন পুরুষের মতোই তিনিও দশ থেকে কুড়ি বছর সংসারের মধ্যে থাকতেন এবং যখন আধ্যাত্মিক আর্তি অনুভব করতেন, তিনিও পরিবার ত্যাগ করতে পারতেন। যাই হোক, যখন বর্বরের দল ভারতে আসতে শুরু করেছিল, মেয়েরা ধীরে ধীরে তাদের স্বাধীনতা হারাতে থাকেন। নিয়মগুলো বদলাতে শুরু করে। হয়তো কিছু সময় পর্যন্ত এটা প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ বাস্তবিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে মেয়েদের নিজের সুরক্ষার জন্যই তাদের উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এটা নিয়মে পরিণত হয়। মেয়েদের সর্বপ্রথম অবদমন ঘটেছিল যখন তারা ঘোষণা করেন যে মহিলারা পৈতে ধারণ করতে পারবেন না। আরও বলা হয়েছিল যে তাদের মুক্তি লাভ বা নিজের পরম প্রকৃতি প্রাপ্ত করার একমাত্র উপায় হল তার পতির সেবা করা। এটা ঠিক করা হয়েছিল যে শুধুমাত্র একজন পুরুষই সংসার ত্যাগ করতে পারবেন।

দুর্ভাগ্যবশত, এগুলো কখনও কখনও বর্তমান যুগেও চলছে। একজন স্ত্রীলোককে এটা বলা হয় যে তার জন্মই হয়েছে কেবলমাত্র তার পিতা অথবা তার স্বামীর সেবা করার জন্য। মানুষজন অস্তিত্বের অদ্বৈতবাদ নিয়ে আলোচনা করেন আর বলেন, "সবকিছুই এক, কিন্তু স্ত্রীলোক নিম্ন পর্যায়ের।" তার উপর পুরুষের অস্তিত্ব নির্ভর করছে - একথা জানা সত্ত্বেও সে যদি তাকে স্বীকার করতে না পারে, তবে সমগ্র অস্তিত্বের সকল দ্বৈত প্রকৃতি স্বীকার করার কোন প্রশ্নই নেই। একমাত্র সংস্কারাচ্ছন্ন মনেই উচ্চ - নীচের প্রশ্ন আসে। এটা কেবলমাত্র দু'রকম প্রকৃতির প্রশ্ন। যদি একজন নারী, যার থেকে একজন পুরুষের জন্ম হয়, হীনতর হন, তাহলে পুরুষ কীভাবে উচ্চতর হতে পারে? এটা তো সম্ভবই নয়। এই সমস্যা সার্বজনীন। এমন নয় যে কেবল একজন স্থূল অনুভূতির মানুষই এটা ভাবছেন। এটাই পুরুষের জীবনের ধরন হয়ে গেছে, তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ধর্মের অংশ হয়ে উঠেছে।

একবার একজন সমাজ সংস্কারক বিবেকানন্দের কাছে গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, "এটা খুবই মহৎ ব্যাপার যে আপনিও মহিলাদের সমর্থন করেন, আমি কী করবো? আমিও তাদের উন্নত করতে চাই। আমি এতে সহযোগিতা করতে চাই।" তখন বিবেকানন্দ বললেন, "দূরে থাকুন। আপনাকে তাদের ব্যাপারে কিছুই করতে হবে না। তাদের একলা ছেড়ে দিন। তাদের যা করা দরকার তা তারা নিজেরাই করবেন।" এটাই হওয়া দরকার। এমন নয় যে একজন পুরুষের একজন নারীকে সংশোধন করতে হবে। যদি পুরুষ সুযোগ দেন, যা করার প্রয়োজন তা নারী নিজেই করবেন।

Stay tuned every Monday, for upcoming posts in this series.