79 তম বছরে ভারত: শুধু উদারীকরণ যথেষ্ট নয়, সময় এসেছে মুক্তির
ভারত আজ স্বাধীনতার 79 বছর পূর্ণ করছে, এবং এই পুণ্যলগ্নে সদগুরু বলছেন, সতর্ক উদারীকরণ(cautious liberalization) থেকে এগিয়ে ব্যবসা, শিক্ষা আর উদ্ভাবনে সাহসী মুক্ত পরিবেশ (bold liberation) আনার সময় এসেছে।

কিন্তু একইসঙ্গে, যে জাতির মেরুদণ্ড আছে, যে নেতৃত্বের সাহস আছে, তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ কখনও পিছুহটার কারণ নয়; এগুলো বরং বৃদ্ধির খোরাক। চারিদিকে যে প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসের জোয়ার জেগেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই - মানুষ আরও আশাবাদী হচ্ছেন, আত্মবিশ্বাসও যে বাড়ছে তা স্পষ্ট অনুভব করা যায়।
শুধু উদারীকরণ যথেষ্ট নয় (liberalize) নয়, সময় এসেছে মুক্তির (liberate)। আমাদের এখন দরকার মুক্ত উদ্যোগের(free enterprise) বিস্ফোরণ - সাহসী, আত্মবিশ্বাসী আর দুঃসাহসিক উদ্যোগের বিস্ফোরণ। এখন শিক্ষা, শিল্প, প্রযুক্তি আর অবকাঠামোকে (infrastructure) সরকারি নিয়ন্ত্রণের থাবা থেকে মুক্ত করে ব্যক্তিগত উদ্যোগকে বিরাট আকারে বিকাশলাভ করতে দেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে মানুষের সৃজনশীলতার শক্তির উপর চাপানো বা কল্পিত, উভয় প্রকারের সকল সীমা ও বাধা ভেঙে আকাশ ছোঁয়ার।
যদি আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে আরও প্রান্তবন্ত ও শক্তিশালী হতে দেখতে চাই, আর যদি চাই আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আমাদের আরেকটু গুরুত্ব দিয়ে দেখুক, তাহলে আমাদের অনতিবিলম্বে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে যা ব্যবসা আর বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল হবে। যে ঔপনিবেশিক দমনের হীনমন্যতা আমাদের ছোট করে রাখতে চেয়েছিল আর আমাদের চিন্তাকে শুধু বেঁচে থাকা বা টিকে থাকায় সীমিত রাখতে চেয়েছিল, তা এখন ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে। মানুষকে দেশ গঠনের প্রকল্পে (nation-building) অংশ নিতে উৎসাহিত করা হোক। উৎসাহিত করা হোক রাস্তা, সেতু, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব ধরনের পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করতে। এই কাজগুলো শুধু একান্ত সরকারেরই করণীয় হয়ে থাকার দরকার নেই।
মানুষ যখন বড় স্বপ্ন দেখে, যখন তারা নিজেদের জীবন, নিজের জাতি বা দেশকে গড়তে চায়, তখন কিছু বিশৃঙ্খলা হবেই। কিছু ছোটখাটো নিয়ম লঙ্ঘন হতে পারে, কিছু অতি পুরনো নিয়ম একটু বাঁকানো হতে পারে। কিছু জীর্ণ আমলাতান্ত্রিক কাঠামো (creaky bureaucratic structures) আর পুরনো ট্যাক্স আইন (outdated taxation laws) বদলাতে হতে পারে। কিন্তু এই আপাত অরাজকতা, পরিবর্তনের এক অপরিহার্য উপাদান। আসুন কিছু মৌলিক নিয়ম ঠিক করি, আর মানুষের ওপর ভরসা করি যে তারা সেগুলো মেনে চলবে। উদ্দম উদ্ভাবনী শক্তিকে(radical innovation) যেন জীর্ণ আমলাতন্ত্রে (moribund red tapism) শ্বাসরুদ্ধ না করা হয়। একটা স্বাধীন আর প্রাণবন্ত জাতি গড়ার এটাই একমাত্র উপায়।
আজও তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের মূল শক্তি এবং আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) ক্ষেত্রে দ্রুত বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসেবে উঠে আসছি। আমরা এই সুবিধাকে কোনও বাইরের স্বার্থান্বেষী শক্তির দ্বারা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। যেহেতু AI(কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) খুব বেশি নির্ভর করে ডাটা সেন্টারের ওপর যা পরিকাঠামোগতভাবে শক্তিশালী কম্পিউটিং হার্ডওয়্যার, স্টোরেজ আর নেটওয়ার্কিংয়ের উপর নির্ভর করে, তাই কার্যকরী পাওয়ার গ্রিডে বিনিয়োগ শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুধু রাজ্যের বরাদ্দ শক্তির (power allotment) ওপর নির্ভর করতে পারি না। মিনি নিউক্লিয়ার স্টেশন (বা ছোট মডুলার রিয়্যাক্টর) কিনলে তা আমাদের শক্তিশালী পাওয়ার সোর্সের বাড়তে থাকা চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে। এটা আমাদের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার জন্য এবং এক বিশ্বস্তরীয় প্রযুক্তিগত পাওয়ারহাউস হিসেবে আমাদের দক্ষতা ও খ্যাতি বাড়ানোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় হবে।
শিক্ষা যদি মানুষকে রূপান্তরিত না করে, তাহলে তা অপ্রাসঙ্গিক। যদি আমরা আমাদের জনসংখ্যার সুবিধা পেতে চাই, তাহলে আমাদের তরুণদের ছোট বয়স থেকেই উদ্ভাবনী হতে উৎসাহিত করতে হবে। এবং এটা করতে হবে তারা তাদের স্বাধীন চিন্তা করার অনুপ্রেরণা ও ক্ষমতা হারানোর আগেই। বর্তমান সময় দাবি করছে : রাষ্ট্রের কঠোর হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত এমন এক পুনরুজ্জীবিত শিক্ষাব্যবস্থার, যা মানসিক তৎপরতা আর শারীরিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেয়।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, এখন ভৌগোলিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ(geographically congruent) দেশগুলোর সঙ্গে জোট গভীর করার সময় এসেছে, যাতে আধিপত্যবাদী দেশগুলোর (hegemonic countries) জোর খাটানো রাজনীতির (strong-arm tactics) প্রতিরোধ করা যায়। দুটো দেশের মধ্যে দরজা খুললে, মানুষ উপকৃত হবেই। আমাদের চাই আরও জানালা, আরও দেওয়াল নয়।
সর্বোপরি, এই সংস্কৃতি চেতনার জগতে আবিষ্কারের এক অসাধারণ ক্রুসিবল হয়ে এসেছে। স্বর্গের টিকিট বিক্রি করে আমরা জীবন চালাই না, বরং মানুষের অস্তিত্বের যন্ত্রকৌশল সম্পর্কে আমাদের গভীর জ্ঞানকে আরও বৃদ্ধি করাই আমাদের জীবনের ব্রত। বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানবতাকে ভাগ করা বন্ধ করার সময় এসেছে। কীভাবে আমরা আমাদের অন্তর্জগৎকে সামলাই সেটাই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কোন বিশ্বাস ব্যবস্থা মানি সেটা নয়। আমাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য হল : আমরা বিশ্বাসীদের নয়, আবিষ্কার করার সংস্কৃতি। আরও সাম্প্রদায়িক বা মতবাদপুষ্ট শিশু লালন করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। আমাদের লক্ষ্য বরং হওয়া উচিত আরও মুক্ত ও সচেতন শিশু লালন করা।
একজন শিশুকে বড় করতে একটা সুরক্ষাকেন্দ্রিক বিধি ও ব্যবস্থার দরকার হয়। কিন্তু এই দেশ এখন আর শৈশবে নেই। সে এখন এক অস্থির কিশোর, যে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, যে প্রস্তুত নতুন ধারণা-উপায়(ideas), নতুন প্রতিষ্ঠান, নতুন ব্যবস্থা গড়তে। যদিও অতীতে কিছু সংরক্ষণবাদ (protectionism) সাহায্য করেছিল, এবং “কাজ কম কথা বেশি” গোছের একটা ভীরু সমাজতন্ত্রের (gutless socialism) শিকারও আমরা হয়েছি - তবুও আমাদের বুঝতে হবে, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত চিন্তিত অভিভাবককে তার শিশুর হাতটা ছেড়ে দেওয়ার সময় এখন এসেছে। চ্যালেঞ্জ বাধা নয়, এটা একটা রসদ। এই জাতির আত্মাকে প্রস্ফুটিত হতে হলে প্রকৃত অর্থেই ভারতীয়দেরকে তাদের দেশের ভাগ্যের বিধাতা হতে দিতে হবে। এখন শুধু উদারীকরণই (liberalize) যথেষ্ট নয়, চাই মুক্তিও (liberate)। আসুন এটা সম্ভব করে তুলি।