Pre-order Sadhguru's new book - Karma: A Yogi's Guide to Crafting Your Destiny

দ্বিতীয় পর্বে, সদগুরু ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে কর্ম অনেকের জন্য মায়া, আর কীভাবে ক্রিয়া আর প্রাণায়ামের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সূক্ষ্ম শরীরকে শক্তিশালী বানানো যায়, আর কর্ম থেকে দূরত্ব তৈরী করা যায়।

সদ্গুরু: কর্ম মূলত অনেকের জন্য মায়া। মায়া—যাকে আমরা সাধারণত ভ্রম বলে থাকি—এই শব্দে তার সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না। তবুও ধরুন, মায়া মানে ভ্রম। এই “বহুত্বের” ভ্রমই কর্মের আসল শিকড়। যতক্ষন আপনি “এটা আমি, ওটা তুমি” তে আটকে থাকবেন, ততক্ষণ কর্ম একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বাস্তব। এটা যেন একটা কঠিন, বাস্তবিক, ইস্পাতের কাঠামো।

কোনভাবে, আপনি যদি গুলিয়ে ফেলেন, “কোনটা আমি আর কোনটা আমি নই?”, হঠাৎ কর্মের ভিত্তি হারিয়ে যায়। যদি আপনি চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে না পারেন কোনটা আপনি আর কোনটা আপনি নন, এই গোলমালে কর্মের ভিত্তি আর টেকে না, সেটা সহজেই ভেঙে পড়ে। সংশয়ের এক মুহূর্তে, হঠাৎ, কর্মের গোটা কাঠামো ভেঙে পড়ে। আপনি কি খেয়াল করেছেন, যদি কখনো প্রেমে পড়ে থাকেন, আপনার পছন্দ-অপছন্দ, আপনার পরিচিতি, ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা, সব কেমন যেন একাকার হয়ে যায় – অন্ততঃ কিছুদিনের জন্য, তার পর হয়তো সব আবার আগের মতোই হয়! আপনি যা করতে সক্ষম নন বলে ধরে নিয়েছিলেন, তেমন কাজও আপনি করতে শুরু করলেন, কারন আপনার পরিচয়টাই একটু গুলিয়ে গিয়েছিল। দুজন মানুষের মধ্যে একটু ঐক্য ঘটায় বহুত্বের মায়া একটু ফিকে হয়ে গেছিল, আর হঠাৎ করে কর্ম নিজের ভিত্তি হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল।

বহুত্বের সমস্যা

একবার এমন হয়েছিল – 1944 সালে, হিটলারের আটজন নকলকে একটি গোপন নিরাপদ স্থানে রাখা হয়। বাকি সবার তুলনায় তাদের থাকা-খাওয়া ছিল সবথেকে ভালো, আর তাদের বিশেষ কোনো কাজও থাকত না কখনো সখনো হয়তো একটু আধটু। তাদের হিটলারের মত হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারা হিটলারের মতন পোশাক পরতেন, তার মতন খেতেন, – তিনি যা করতেন তাদেরও তাই তাই করতে হত, কারণ তাদের যখন অভিনয় করতে হতো, তখন এমন নিখুঁতভাবে করতে হতো যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তো, এই লোকগুলো বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছিল।

তারপর, হিটলারের এক বিশ্বস্ত সহচর হেনরিক হিমলার এলেন। নিয়ম ছিল, যেই আসুক, তাদের হিটলারের নকলদেরকেও সেভাবেই অভিবাদন জানাতে হবে যেভাবে তারা স্বয়ং হিটলারকে জানায়, যাতে সবাই এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তো হিমলার এসে বললেন, “হাইল হিটলার!” তারপর তিনি বললেন, “আমার কাছে কিছু ভালো খবর আছে আর কিছু খারাপ খবর আছে”

সবাই মিলিতভাবে বললেন, “আগে ভালো খবর”

“আমাদের ফুহরার বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন”

“খারাপ খবর …?”

“দুৰ্ভাগ্যবঃশত, ওনার বাঁ চোখ আর নেই “ এই বলে তিনি একটি কর্ক স্ক্রু বার করলেন।

কর্ম এরকমই। এটা বহুত্বের এক জটিলতা। তাই, প্রথম কাজ হল, কর্ম তৈরী বন্ধ করা - জীবন বিলীন হওয়ার রাস্তা নিজে থেকেই খুঁজে নেবে। বা যদি আপনি নিজের সমস্ত কর্ম একবারে ঝেড়ে ফেলতে চান, সেটাও করা সম্ভব। কিন্তু এটা বোঝা দরকার, কর্ম শুধু বন্ধনই নয়, একধরনের সুরক্ষাও। এটা সিমেন্টের মত আপনাকে শরীরের সাথে ধরে রাখে। যদি সব কর্ম বিলীন হয়ে যায়, আপনি এই শরীরকে ধরে রাখতে পারবেন না – শরীর ছেড়ে দিতে হবে। আপনার হয়তো এটা নাও জানা থাকতে পারে, বেশিরভাগ জীবের ক্ষেত্রে বোধিলাভ এবং দেহত্যাগ একই সময়ে ঘটে। কেবলমাত্র যাঁরা ক্রিয়ামার্গে আছেন, যাঁরা দেহের কার্যপ্রণালী, খুঁটিনাটি সব জানেন, একমাত্র তাঁরাই শরীরকে ধরে রাখতে পারেন।

সূক্ষ্ম শরীর বা এথেরিক শরীরকে ব্যায়াম করানো

যোগে আমরা মানবতন্ত্রকে পাঁচটি কোষ বা স্তর হিসেবে দেখি। প্রথম তিনটি - ভৌতিক শরীর, মানসিক শরীর আর প্রাণময় শরীর – হল ভৌতিক বাস্তবিকতা; হয়ত সূক্ষ্ম কিন্তু তবুও ভৌতিক। অন্যদুটি – সূক্ষ্ম শরীর বা এথেরিক শরীর এবং আনন্দময় শরীর – এগুলি ভিন্ন এক মাত্রায় অবস্থিত। সুক্ষ শরীর বা এথেরিক শরীর হল ভৌতিক থেকে অভৌতিকের মধ্যে একটি পরিবর্তনশীল অবস্থা। আনন্দময় শরীর সম্পূর্ণরুপে অভৌতিক। ভৌতিক শরীর, মানসিক শরীর আর প্রাণময় শরীর কর্মকে বহন করে। কিন্তু সূক্ষ্ম শরীর বা এথেরিক শরীর আর আনন্দময় শরীরে কোনও কর্মের ছাপ থাকে না কারন এগুলি অভৌতিক। অস্তিত্বের ভৌতিক দিকটা কারণ ও প্রভাবের সূত্রের মধ্যে বাঁধা। কিন্তু যা ভৌতিক নয় তা কার্য-কারণ ছকের বাইরে। তো, যখনই আপনি দিব্যতার স্বাদ পেতে শুরু করেন, হঠাৎ করেই আপনার যত কর্মের স্তূপ থাকুক না কেন, তা আপনাকে প্রভাবিত করে না, কারণ আপনি তখন অভৌতিকের রাজ্যে প্রবেশ করতে শুরু করছেন, যেখানে কোনো কর্মের অস্তিত্ব নেই।

কর্ম হল বহুত্বের সমস্যা। তাই, প্রথম কাজ হল, কর্ম তৈরী বন্ধ করা – বিলীন হওয়া রাস্তা নিজে থেকেই খুঁজে নেবে।

যখন আপনি ক্রিয়া বা প্রাণায়ামের মতো সচেতন শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া  করেন, তখন আপনি সুক্ষ শরীর বা এথেরিক শরীরকে ব্যায়াম করাতে চাইছেন – আপনার মধ্যে সেই মাত্রা যাতে একটু ভৌতিক অংশ থাকলেও সেটা ভৌতিক নয়। আপনি সেটাকে শক্তিশালী করতে চাইছেন, যাতে সেটা আপনার নিজের অভৌতিক সত্তার পথে কোনো বাধা না হয়ে, বরং একটি প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠে। এটার আরও শারীরবৃত্তীয়, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে সহজ ভাষায় বললে, এই সূক্ষ্ম শরীর বা এথেরিক বডি—যা ভৌতিক শরীর এবং অভৌতিক অস্তিত্বের মধ্যে এক সংযোগ—যদি সেটা শক্তিশালী হয়, তাহলে আপনার ভৌতিক দেহ, আপনার মানসিক কাঠামো যাকে আপনি “আমি” বলছেন, এবং যেটি সমস্ত কিছুর উৎস সেই অভৌতিক মাত্রা—এই তিনটি সর্বদা স্বাভাবিকভাবে সংযুক্ত থাকবে। সাধনার মূল উদ্দেশ্যই হল, আপনার জীবনে দিব্যতাকে শুধু একটা বিশ্বাস বা ধারণা হিসেবে নয়, বরং জীবন্ত উপস্থিতি হিসেবে অনুভব করা। সাধনার ভিত্তি হল, এই তিনটি স্তর— ভালোভাবে সমন্বিত এবং প্রতি মুহূর্তে একে অপরের সাথে যুক্ত। আমরা কোনও নেশা বা একবারের-মত অভিজ্ঞতা খুঁজছি না, আমরা খুঁজছি সেই উৎসের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ। তবেই সেটি আপনার জীবনে প্রকাশ হতে পারবে – জীবনের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি মুহূর্তে, সবকিছুতে।

সদগুরুর আরও অন্তর্দৃষ্টি জানতে পড়ুন বই "অফ মিস্টিকস অ্যান্ড মিস্টেইকস"।

ইশা ডাউনলোডসে গিয়ে প্রিভিউ অধ্যায়টি ডাউনলোড করুন অথবা ই-বুকটি সংগ্রহ করুন।