প্রশ্ন: সদগুরু, আমি অনেক ছবিতে কালীকে শিবের মৃতদেহের বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এই দৃশ্যের তাৎপর্য কী?
সদগুরু: এটি একটি বিশেষ গল্প যা নারী-শক্তি কীভাবে কাজ করে তা দেখানোর চেষ্টা করছে। একবার এমন হয়েছিল, যে বিভিন্ন অসুর পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করল। অনেক অশুভ শক্তি পৃথিবীকে দখল করতে শুরু করলো। তখন কালী ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। একবার যখন তিনি উন্মত্ত হয়ে উঠলেন, তখন তাঁকে থামানোর কোনও উপায় ছিল না। তাঁর সামনে যা পড়ল, তিনি সবকিছু ধ্বংস করতে লাগলেন।
তাঁর ক্রোধ কোনওভাবেই থামছিল না। কোনও যুক্তিতর্কের তোয়াক্কা না করে এই ধ্বংসলীলা চলতেই থাকছিল, পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা না মেনেই, সবকিছুর সীমা অতিক্রম করে। তাঁর ক্রোধ এতই বেশি উগ্র ছিল যে তা কোনওমতেই থামছিল না, আর যেহেতু তিনি নির্বিচারে সংহার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাই কেউই সাহস করে তাঁকে থামানোর জন্য এগিয়ে যেতে পারছিলেন না। তখন তাঁরা সবাই শিবের কাছে গিয়ে বললেন, " তিনি এরকম মূর্তি ধারন করেছেন। তিনি তো আপনার স্ত্রী। দয়া করে তাঁকে সংযত করার জন্য কিছু অন্তত করুন।"
সাধারণত শিব যেভাবে কালীর কাছে যেতেন এবারও ঠিক সেভাবেই তিনি তাঁর কাছে গেলেন। কোনও আগ্রাসন বা যুদ্ধের মনোভাব না নিয়ে, এমনিই গেলেন। কিন্তু কালীর প্রাণশক্তি এতটাই উগ্র হয়ে উঠেছিল যে তা স্বয়ং শিবকেও ছাড়ল না। শেষে যখন তিনি শিবের উপর পা রাখলেন কেবল তখনই বুঝতে পারলেন তিনি কী করেছেন। তখন তিনি শান্ত হলেন এবং শিবকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন।
এই বিশেষ ঘটনার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন তান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে। আপনি হয়তো এমন ছবি আর চিত্রকলা দেখে থাকবেন যেখানে তান্ত্রিকরা নিজেরাই নিজেদের মস্তক ছিন্ন করে সেটা হাতে ধরে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। অথবা আপনি হয়তো দেবীকেও দেখে থাকবেন, যেখানে তিনি নিজেই নিজের মস্তক ছিন্ন করে তা হাতে নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এমন বিভিন্ন তান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে যেখানে সাধক নিজেই নিজের মাথা বিচ্ছিন্ন করেন এবং পুনরায় সেটা জুড়ে দেন। নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এটা করা হয়।
আমি জানি আজকাল বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ‘তন্ত্র’ মানেই লাগামছাড়া অশ্লীলতা। এর কারণ হল এখনকার বেশিরভাগ তান্ত্রিক বইগুলো আমেরিকানরা লিখেছেন, আর মানুষ ম্যাগাজিন আর বই থেকে তন্ত্র সম্পর্কে পড়েন। তন্ত্র মোটেও অশ্লীলতা নয়। তন্ত্র মানে চরম শৃঙ্খলা। তন্ত্র হল একটি প্রযুক্তি, একটি পদ্ধতি, জীবনকে ভেঙে ফেলে আবার নতুন করে গোড়ার ক্ষমতা। তন্ত্র হল নিজের উপর এমন এক দক্ষতা অর্জন করা যে আপনি জীবনের সমস্ত কাঠামো ভেঙে ফেলতে পারেন এবং পুনরায় আপনি তা নির্মাণ করতে পারেন।
আপনি জীবনের উপর এমন এক দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যেখানে জীবন আর মৃত্যু দুটোই সম্পূর্ণভাবে আপনার নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে, জীবনকে আপনি ধ্বংস করে আবার তা পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এমনকি আপনি ঈশ্বরকেও হত্যা করে আবার তাঁকে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। এটা কাউকে দেখানোর জন্য কোনও কীর্তি নয়। এর কারণ আপনি জীবনের উপর সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে চান।
জীবনের উপর কিছুটা দক্ষতা না থাকলে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। জীবনের উপর প্রত্যেকেরই অল্প কিছুটা দক্ষতা রয়েছে। তা না হলে, আপনি কি কিছু করতে পারতেন? আপনার দক্ষতার মাত্রাই নির্ধারণ করে দেয় যে আপনি কতটা করতে পারবেন।
কালীর শিবের উপর দাঁড়িয়ে থাকার চিত্রটি মূলত জীবনের প্রক্রিয়ার উপর সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জনের প্রতীক। এর অর্থ হল আপনি স্বয়ং ঈশ্বরকেও হত্যা করে তারপর তাঁকে আবার জীবিত করে তুলতে পারেন। এটা সত্যিই এক স্পর্ধার কাজ, তাই না? তন্ত্রের প্রযুক্তি ঠিক এমনই।