মহিমান্বিত ভিক্ষুক: ব্রহ্মচারী রূপে কৃষ্ণ
সদগুরু কৃষ্ণের জীবনের এক পর্বের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন - যখন তিনি ব্রহ্মচর্যের পথ বেছে নিয়েছেন, কংস বধের পর।
Read all the episodes in the "Krishna's Guru Dakshina" series.
Prologue || Part 1 || Part 2 || Part 3 || Epilogue
সদগুরু: ষোল বছর বয়সে, কংসের শিরচ্ছেদের পর কৃষ্ণ নেতা হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁর গুরু গর্গাচার্য্য তাঁকে বললেন, "এবার, যা হবার জন্য তুমি ভাগ্য-নির্ধারিত, তার জন্য তোমার শিক্ষার প্রয়োজন। তোমার বাকী সবকিছুই আছে, কিন্তু তোমাকে সুনির্দিষ্ট সংযমের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সন্দীপনীর শিষ্যত্ব গ্রহণ কর।" এবং কৃষ্ণ সেটাই করলেন। যখন তিনি ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হতে যাবেন, বলরাম এবং আরও কয়েকজন রাজপুত্র, যারা তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন- হেসে উঠলেন এবং বললেন, "এরকম একটি আমোদ-প্রমোদপূর্ণ জীবন যাপনের পর, কিভাবে তুমি একজন ব্রহ্মচারী হতে পারবে?" কৃষ্ণ বললেন, "কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে আমি যা করেছি, তা করেছি। কিন্তু আমি সবসময়ই একজন ব্রহ্মচারী । এখন তোমরা দেখবে - আমি এই ব্রত গ্রহণ করব এবং সম্পূর্ণরূপে এর পালন করব। "ছয় বছর ধরে কৃষ্ণ সন্দীপনীর তত্ত্বাবধানে এবং তাঁর করুনার ছায়ায় ব্রহ্মচারীর জীবন যাপন করেছিলেন, যিনি তাঁকে বিভিন্ন কলা- কৌশল এবং অন্যান্য ধরনের শিক্ষায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার শিখেছিলেন এবং চক্র ছোঁড়ায় বিশেষ রকমের দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। চক্র হল ধাতু নির্মিত একটি চাকতি যা ঠিকঠাক ব্যবহার করা হলে প্রাণঘাতী অস্ত্র হতে পারে। কৃষ্ণ এটিকে সম্পূর্ণরূপে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
সেই সময়, অন্য ব্রহ্মচারীদের মতো কৃষ্ণও খাবার সংগ্রহের জন্য পথে ভিক্ষা করতে বেরোতেন। যখন আপনি ভিক্ষা করতে যান, আপনি আপনার খাবার বেছে নেন না। যে খাবার তারা আপনার ভিক্ষার ঝুলিতে দেয়- ভালো বা পচা অথবা যে রকমই হোক না কেন, আপনি সেটা ভক্তি ভরে খান। একজন ব্রহ্মচারীর কখনও তাকে পরিবেশন করা খাবারের প্রকৃতির দিকে নজর দেওয়া উচিত নয়। কি খাব, কি খাব না- এটা কখনোই তার বেছে নেওয়া উচিত নয়। যখন আপনি বলেন আপনি একজন ব্রহ্মচারী, আপনি দৈবের পথে আছেন। খাদ্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু আপনার পুষ্টি শুধুমাত্র খাদ্যে নেই।
সুতরাং, কৃষ্ণ একজন পূর্ণাঙ্গ ব্রহ্মচারী হয়েছিলেন। কৃষ্ণ, যিনি সর্বদা মুকুট, ময়ূরের পালক এবং রেশমের বস্ত্রে সুসজ্জিত থাকতেন, হঠাৎ করে একখন্ড হরিণ চর্মে আচ্ছাদিত; তিনি তাঁর নতুন সাধনায় একশ শতাংশ উৎসর্গীকৃত ছিলেন। এর আগে পৃথিবী কখনও এরকম একজন মহিমান্বিত ভিক্ষুককে দেখেনি। লোকজন চমৎকৃত হতেন- তাঁর সৌন্দর্য দেখে, তাঁর সত্তা দেখে, কতখানি লাবণ্য, আত্মোৎসর্গ, একনিষ্ঠতার সাথে তিনি সেইদিনের সামান্য খাবারের জন্য রাস্তায় হাঁটতেন। তিনি চাইলেই যেকোন সময় রাজা হতে পারতেন, কিন্তু তিনি ভিক্ষা করতে পথে নেমেছিলেন, তাঁর জীবনের ছয় বছরের জন্য।
কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন
আর একজন এরকম সুন্দর বহ্মচারী ছিলেন, তার নাম কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন, যিনি পরবর্তীকালে 'ব্যাস' বলে পরিচিত হন, ছয় বছর বয়সে ব্রহ্মচারী হয়েছিলেন।
তাঁর ব্রহ্মচর্যের প্রথম দিনে এই মুণ্ডিত মস্তক এবং গাছের ছাল পরিহিত ছোট্ট বালকটি তাঁর শিশুসুলভ মিষ্টি সুরে "ভিক্ষাং দেহি" বলে ভিক্ষা করতে বেরোল। মানুষ যখন এই আকর্ষণীয় ছোট্ট বালকটিকে দেখলেন, তারা তাকে প্রচুর পরিমাণে খাবার দিলেন, সব থেকে ভালো জিনিস যা তারা দিতে সক্ষম- কারণ তারা তাঁর ক্ষমতা বুঝতে পেরেছিলেন, যেভাবে সে রাস্তায় একা হাঁটছিল, তাঁর নিজের এবং তাঁর গুরুর জন্য খাবার ভিক্ষা করছিল। সে যা বহন করতে পারত তার থেকে বেশি পেয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে, রাস্তায় সে এমন সব শিশুদের দেখল যারা ভালোভাবে খাবার খায়নি, সে তাদের মুখের দিকে তাকিয়েই সেটা বুঝতে পারল। সুতরাং সে সব খাবার বিলিয়ে দিল এবং খালি হাতে ফিরে এলো।
পরাশর, তাঁর গুরু এবং বাবা, তাঁর দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, " কি ব্যাপার? তুমি ভিক্ষা করনি? নাকি তোমাকে কেউ কিছু দেয়নি?" কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বললেন, " তারা আমায় খাবার দিয়েছিল। কিন্তু আমি কিছু ছোট বাচ্চাকে দেখলাম যারা না খেয়ে ছিল, সুতরাং আমি সব খাবার তাদের দিয়ে দিয়েছি।" পরাশর তাঁর দিকে দেখলেন এবং বললেন, "ঠিক আছে।" এর অর্থ সেদিন তাদের জন্য কোনো খাবার নেই।
দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকল। ছেলেটি কিছু খেত না। যখন পরাশর দেখলেন এই ছয় বছরের বালকটি তিন- চারদিন না খেয়ে থাকছে এবং তা সত্বেও তাঁর সমস্ত কর্তব্য এবং পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছে, তিনি বালকটির মধ্যে বিস্ময়কর সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারলেন এবং নিজেকে তাঁর মধ্যে উজাড় করে দিলেন। তিনি অন্য কাউকে একশো বছরে যা শেখাতে পারতেন, খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সেটা তাঁকে শিখিয়ে দিলেন।
লীলা
অনেক ঐতিহ্য এবং ব্যাবস্থা মানুষকে উচ্চতর সম্ভাবনায় উন্মুক্ত করার জন্য অনেক রকম পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে। ব্রহ্মচর্য একটি পথ। লীলা একটি ভিন্ন পথ। লীলা হল সবকিছু- আপনার শরীর, মন, যা কিছু আপনি "আমি" বলে বিবেচনা করেন, তাকে বিমোহিত করে ব্যবহার করা। আপনার স্তব, নৃত্য, খাদ্য গ্রহণ, সংগীত অথবা যা কিছু আপনি করেন, নিজেকে বিলিয়ে দিন এবং এর প্রতি সমর্পণ করুন। আপনাকে স্ত্রীসুলভ হতে হবে।
নারীসত্তার প্রকৃতিই হল সমর্পণ করা, এক হয়ে যাওয়া, গ্রহণ করা। চাঁদের নিজস্ব কোন গুন নেই। এটা শুধুমাত্র সূর্যকে প্রতিফলিত করছে - এবং দেখুন এটা কি সুন্দর হয়ে উঠেছে। যদি চাঁদ তার নিজের মত কিছু করত, এটা এরকম হত না। সূর্য জীবনদায়ী এবং বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম- সেটা আলাদা। কিন্তু আপনার মধ্যে স্বর্গীয় সত্তা জাগিয়ে তোলার জন্য, আপনাকে কবিতা অথবা ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত করার জন্য, চাঁদ সূর্যের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাই নয় কি? কারণ এর নিজস্ব কোন প্রকৃতি নেই- এটা শুধুমাত্র প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
যদি আপনি দৈব সত্তাকে জানতে চান, আপনার একমাত্র রাস্তা হল- আপনার নিজস্ব কোন প্রকৃতি থাকবে না। আপনাকে শুধুমাত্র প্রতিবিম্ব হতে হবে। যদি আপনি প্রতিবিম্ব হন, আপনি কি প্রতিফলন ঘটাবেন? শুধুমাত্র পরম করুণাময়কে।
Read all the episodes in the "Krishna's Guru Dakshina" series.
Prologue || Part 1 || Part 2 || Part 3 || Epilogue
Editor’s Note: Watch the Leela series, for more of Sadhguru’s talks on Krishna.