প্রশ্নকর্তা: আমি যাই করি না কেন, প্রচুর সংঘাতের মুখোমুখি হই। সে ব্যাপারে কী করা যায়?

সদগুরু: প্রত্যেকদিন বহু মানুষের ক্ষেত্রে এটা ঘটতে দেখি আমি। ধরা যাক, কোনও একটা কাজ করতে হবে। যদি কাজটা না হয়, বেশিরভাগ লোকের চিন্তার প্রাথমিক প্রবণতাই হল যে, অন্য কোনও একজনের কারণে এটা হল না। তাদের ঝোঁক হল অন্যদের দিকে আঙ্গুল তোলা। কোনও একটা কিছু কেন ঘটল না, তার অতিলৌকিক কারণ খুঁজে বেড়ান প্রচুর মানুষ। এমনকি তারা আমাকেও দোষারোপ করেন, "সদগুরু আপনার কৃপা কাজ করছে না।" ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রমের প্রথম দিন থেকে, বা এমনকি বিনামূল্যের প্রারম্ভিক আলোচনার দিন থেকে, আমরা এই একটা জিনিস আপনার মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছি : যদি কোনও কিছু কাজ না করে, তবে স্পষ্টতই কাজটা ঠিক ভাবে করা হয়নি।

অতীন্দ্রিয়বাদের অর্থ হল, যা কিছু নিগূঢ় রহস্যময় - যা আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে বা মৌলিক যুক্তিবোধ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন না – সেগুলিকে মোটামুটি যুক্তিগ্রাহ্য উপায়ে উপলব্ধি করা।

হয়তো আপনি এই মুহূর্তে এটা খুঁজে বের করতে পারছেন না, কিন্তু কোনও কিছু যদি যেভাবে হওয়া উচিত সেভাবে কার্যকরী না হয়, স্পষ্টতই কোনও একটা কিছু সঠিক ভাবে করা হয়নি। কিন্তু মানুষ এর অতিলৌকিক সমাধান খুঁজে বেড়ায়। জনগণের এক বিরাট অংশের কাছে অতীন্দ্রিয়বাদ বলতে এটাই বোঝায়: জীবনের সাধারণ জিনিসগুলোকে তারা জটিল করে তোলেন আর ভাবেন যে সেটা রহস্যময় ইন্দ্রিয়াতীত ব্যাপার। না, অতীন্দ্রিয়বাদের অর্থ হল, যা কিছু নিগূঢ় রহস্যময় - যা আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে বা মৌলিক যুক্তিবোধ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন না – সেগুলিকে মোটামুটি যুক্তিগ্রাহ্য উপায়ে উপলব্ধি করা। সহজ জিনিসকে দুষ্প্রাপ্য এবং অতিলৌকিক করে তোলাটা কোনও ধরনের অতীন্দ্রিয়বাদ নয়।

 

 

আপনি যা কিছু করার চেষ্টা করছেন, তাতেই যদি সংঘাত ঘটে, তাহলে স্পষ্টত আপনিই হলেন সিরিশ কাগজ। আমরা আপনাকে ছোট এক টুকরো সিরিশ কাগজ দিতে পারি। প্রত্যেকদিন যখনই কারো সাথে সংঘাতের সম্মুখীন হবেন তখন আপনার চামড়া চেঁছে ফেলুন। যদি নিজেকে শীঘ্রই সারিয়ে তুলতে না পারেন, আপনার কোনও চামড়া আর অবশিষ্ট থাকবে না। যখন আর কোনও চামড়া থাকবে না আর কোনও ঘর্ষন আপনি চাইবেন না। আপনি শান্তভাবে হাঁটাচলা করবেন। যদি সেই ধরনের চিকিৎসা চান, আমরা তা করতে পারি। না হলে নিজের শুভ বোধকে জাগিয়ে তুলুন। যদি যেখানেই যান সেখানেই সংঘাত ঘটতে থাকে তাহলে স্পষ্টতই, আপনিই এর কারণ।

সংঘাত কমিয়ে আনতে একটা সহজ জিনিস করতে পারেন। যতগুলো কথা আপনি উচ্চারণ করেন সারাদিনে, এক ঘন্টায় বা এক মিনিটে – তার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কমিয়ে ফেলুন। অনেকটা পরিমাণে সংঘাত কমে যাবে, শুধুমাত্র বাজে বকছেন না বলে। যাকেই দেখুন, একজন পুরুষ, নারী, শিশু, গরু অথবা গাধা যাকেই দেখুন, আপনি মাথা নত করুন। ওভাবে চললে আর সংঘাত ঘটবে না। এই ব্যাপারটা নিজের মধ্যে আনুন, শুধুমাত্র প্রতীকী হিসেবেই নয় –  একটা গাধার সামনে প্রকৃতই মাথা নোয়াতে শিখুন।

দুই ধরনের সংঘাত আছে : একটা আমাদের নিজেদের অন্তরে। বাইরের সংঘাত হল শুধু অন্তরের সংঘাতের এক বহিঃপ্রকাশ এবং এক পরিণাম। ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অর্থ শুধু এটাই, আপনি এখানে কোনও দ্বন্দ্ব ছাড়াই বসে থাকতে পারেন। যদি বিনা দ্বন্দ্বে এখানে বসে থাকতে পারেন, বাইরের সংঘাতও কমে যাবে। তবুও যখন আপনার সাথে কোনও সিরিশ কাগজের সাক্ষাৎ হবে, কিছুটা সংঘাত ঘটবে। তাই সাধারণত আমরা সিরিশ কাগজকে এড়িয়ে যাই, যদি এড়াতে পারি। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের তাদের সাথে কাজ করতে হয়। যখন কোনও সিরিশ কাগজের সঙ্গে কাজ করবেন তখন আপনার প্রয়োজন কৌশলের। এই ব্যাপারটাই আপনাকে শিখতে হবে।

সিরিশ কাগজের সাথে সাক্ষাৎ হলে কিছু মানুষ খুবই বিচক্ষণ হয়ে থাকেন। তাঁরা এতই মার্জিত যে অন্যজন যত রুক্ষই হোক না কেন, এই ধরনের মানুষরা তাঁদের কাজ সম্পন্ন করে চলে যেতে পারবেন। সিরিশ কাগজদের সাথে কাজ করতে হলে একটু দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার দরকার। এর মধ্যে কোনও আধ্যাত্মিক ব্যাপার নেই – এটা একটা সামাজিক দক্ষতা। যখন সজারু তার কাঁটাগুলোকে খাড়া করে থাকে আপনাকে তখন অবশ্যই একটু দূরে সরে থাকতে হবে। যখন কাঁটাগুলো নোয়ানো থাকবে তখন ওর সাথে কথা বলতে পারেন। সব সময় কাঁটাগুলোকে খাড়া করে রাখার ক্ষমতা ওর থাকে না।

অন্যথায়, আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, আপনার সংঘাতের কারণ আপনি নিজেই।