শিশুদের কতটা স্বাধীনতা থাকা উচিত ?
অভিভাবক হিসেবে আমরা সন্তানদের কতটা স্বাধীনতা দিতে পারি ? ক্রিকেটার ভি ভি এস লক্ষণের প্রশ্ন সদগুরুর কাছে -
ভি ভি এস লক্ষণ: আমি জানতে চাই, সঠিক অভিভাবক হয়ে ওঠার অন্তরালে সত্যটা কী? শৈশব বা কৈশোরে আমি স্বাধীন হতে চাইতাম, নিজের জীবন নিজের শর্তে বাঁচতে চাইতাম। আর আমার মনে হয়, এটা সব প্রজন্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সন্তানদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া দেওয়াটা কি সঠিক কাজ? কোথায় সীমারেখা টানা উচিত বা আদৌ কি কোনও সীমারেখা থাকা উচিৎ ? যোগ্য অভিভাবক হয়ে ওঠার জন্য আপনি আমাদের কী পরামর্শ দেবেন ?
সদগুরু: নমস্কার লক্ষণ! তোমার কব্জিতে লুকিয়ে থাকা নৈপুণ্যকে ক্রিকেট মাঠের আঙিনায় আমরা দুর্দান্ত ভাবে উপভোগ করাছি। অভিভাবক হওয়ার কথা যদি বলো, সন্তানদের বড় করে তোলার এই ধারণাটা পুরোপুরি পশ্চিমী বোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। গবাদি পশুকে তুমি প্রতিপালন করতে পারো, কিন্তু কোনও মানুষকে প্রতিপালন করতে পারো না। সন্তানদের বড় করে তোলার ভাবনাটাই থাকা উচিত নয়। তোমাকে শুধু সন্তানদের বড় হয়ে ওঠার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তোমাকে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যা ভালবাসা, আনন্দ আর দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ। তোমার প্রশ্নে “স্বাধীনতা” শব্দটা উল্লেখ করেছো। স্বাধীনতা এমন একটি অপ্রয়োজনীয় শব্দ যা কখনই উল্লেখ করা উচিত নয়। আর তোমার সন্তানদেরও “স্বাধীনতা” শব্দটার সঙ্গে পরিচিতি থাকা উচিত নয়। অভিভাবক হিসেবে তোমার করণীয় হল, সন্তানদের এমনভাবে দায়িত্বশীল কোরে তোলা যাতে ওরা নিজেদের ভালো থাকা, স্বাস্থ্য আর বিকাশের প্রতি মনযোগী হয়ে ওঠে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার পরিচয় রাখে। প্রয়োজনীয় দায়িত্ববোধকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকতে শিখলে স্বাধীনতা তার স্বাভাবিক ফলশ্রুতি।
আমাদের বর্তমান পৃথিবীতে এটাই মৌলিক সমস্যা কারণ আমরা সবাই এখন লক্ষ্যের পিছনে ছুটছি। আমরা শুধু মনের মতো ফল পেতে আগ্রহী, কিন্তু যে পদ্ধতিতে সেই ফল আসবে, তা নিয়ে আগ্রহী নই। তুমি যদি বাগানে ফুল ফোটাতে চাও, তাহলে ফুল নিয়ে আলোচনা কোরো না। তুমি যদি ভাল মালি হও, কখনই তুমি ফুলের কথা বলবে না, তুমি শুধু মাটি, সার, জল ও সূর্যালোকের কথাই ভাববে। এই উপকরণগুলি যদি সঠিক ভাবে জোগান দেওয়া যায়, সুন্দর ফুল এমনিই ফুটবে।
ঠিক একইভাবে, যদি তুমি একটি শিশুকে সুন্দরভাবে বিকশিত, হওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হও, তাহলে তারাও বিকশিত হবে। কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার ছাঁচে ফেলে শিশুটিকে গড়েপিঠে নেওয়ার চেষ্টা করো, তাহলে প্রতিটি শিশুই অবাধ্য হয়ে উঠবে, আর তার কারণ হল, জীবনকে কখনও তোমার মনগড়া ছাঁচে ফেলে গড়েপিঠে নেওয়া যায় না, মনকে তৈরি হতে হবে জীবনের ছাঁচে।
তাই সন্তান প্রতিপালন করার ভাবনাটাই ত্যাগ করে তার পরিবর্তে শুধু ভালবাসা, আনন্দ আর দায়িত্বশীলতার বোধে পরিপূর্ণ একটি পরিবেশ তৈরি করা উচিত। সব কিছুর আগে এটা নিশ্চিত করো যাতে শিশুরা তার মা-বাবার মধ্যে কখনও অসন্তোষ, ঈর্ষা, হতাশা, বিষণ্ণতা ও ক্রোধের প্রকাশ যেন দেখতে না পায়। তাহলেই দেখবে তোমার সন্তান সুন্দরভাবে বিকশিত হয়ে উঠছে। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করার বদলে যদি শুধু ফলাফল নিয়ে ভাবতে থাকো, সেক্ষেত্রে তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলটি স্বপ্নই থেকে যাবে। কিন্তু পদ্ধতির প্রতি যদি যত্নশীল হও, ফলাফল এমনিই আসবে।
সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.