"মাটি কহে কুমোরে - কবির রচিত একটা কবিতা"

 

 

মাটি কহে কুমোরে, তুমি আমায় দলন করার কে?

একদিন আসবে, যেদিন আমি দলন করব তোমাকে

জন্মালে মরতে হয়, সে রাজা হোক বা ফকির

কেউ সিংহাসনে বসে, কেউ বা কারাবাসে

কবির-এর জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া

সদগুরু: আজ কবির জয়ন্তী। কবির পেশায় তাঁতি ছিলেন - এক দুর্দান্ত অতীন্দ্রিয়বাদী কবি যিনি এখনও তাঁর বিভিন্ন কবিতার মধ্য দিয়ে জীবিত রয়েছেন। তিনি যে সব কবিতা লিখেছেন বা গান গেয়েছেন তা তাঁর জীবনের একটা ছোট্ট অংশ মাত্র। বেশিরভাগ সময়ই তিনি তাঁতি হিসাবে কাজ করতেন। যেহেতু এখন কেবলমাত্র কিছু কবিতা রয়ে গিয়েছে তাই লোকে মনে করে যে তিনি কেবল কবিতাই লিখেছেন। না, তাঁর জীবন ছিল তাঁতের কাজে ব্যস্ততায় ভরা, কবিতায় নয়। সে কাপড় আর আজ অবশিষ্ট নেই, তবে এখানে ওখানে একটা কবিতা বা কোন কবিতার স্তবক এখনও রয়েছে। আমি জানি না কতগুলো হারিয়েছে, কিন্তু যা আছে তা এখনও অবিশ্বাস্য।

এত চমৎকার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও, তার কবিতা ছাড়া তার সম্বন্ধে আমরা বিশেষ কিছু জানি না। স্পষ্টতই তিনি ছিলেন গভীর অভিজ্ঞতার মানুষ, সে বিষয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। তবে তাঁর মৃত্যুর আগে অবধি তার পুরো জীবন এবং এমনকি তার পরেও, তার অতীন্দ্রিয়বাদ, তার জ্ঞান বা স্পষ্টতার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যা তিনি নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন, সে সমস্ত কিছু মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি হিন্দু ছিলেন না মুসলমান, সেটাই আজ মানুষের কাছে মূল প্রশ্ন! আপনি যদি না জেনে থাকেন তবে, আমি আপনাকে কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছি: কেউই হিন্দু বা মুসলমান বা অন্য কিছু হিসাবে জন্মগ্রহণ করে না। কেউ হিন্দু, মুসলমান বা অন্য কিছু হিসাবে মারাও যায় না। তবে আমরা যখন জন্মাই, তখন দেখি এসব নিয়ে বিশাল বড় নাটক চলছে সমাজে। 

আপনার তৈরি করা সবকিছু, যেমন, আপনার নিজের সম্বন্ধে আপনার ধারণাগুলো, আপনি কোন ধর্মের অন্তর্ভুক্ত, কোনটা আপনার, কোনটা আপনার নয়, এ সবকিছুই অসত্য। সত্য রয়েছে; এই ব্যাপারে আপনাকে কিছু করতে হবে না। এই সত্যের আধারেই আমাদের সকলের উপস্থিতি। সত্য মানে আপনার সত্যবচন নয়; সত্য মানে হল সেই মৌলিক নিয়মগুলো যা এই জীবন এবং বাকি সবকিছুকে ঘটাচ্ছে। আপনি হয় এর সাথে তাল মিলিয়ে চলুন আর না হয় এর সাথে তাল মেলাবেন না, বিকল্প কেবল এই দুটোই। আপনাকে সত্য আবিষ্কার করতে হবে না। আপনাকে সত্যের অধ্যয়ন করতে হবে না। এটাকে স্বর্গ থেকে নিয়ে আসতে হবে না।

একটা গাছ বেড়ে ওঠে, বিকশিত হয় – এর মানে, অবশ্যই জীবনকে সমর্থন করার মত সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। সে কারণেই সে বেঁচে আছে। আপনি এখানে রয়েছেন, তার মানে এই জীবনটা ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই এখানে আছে। অন্যথায় আপনি এখানে থাকতেন না। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি এই সকল জীবনীশক্তির সাথে তাল মেলাচ্ছেন নাকি আপনি এর বিপক্ষে? 

"আরে! আমি কেন জীবনীশক্তির বিপক্ষে হব?” আদতে, আপনি যে মুহূর্তে বিশ্বাস করবেন যে আপনি এমন কিছু যা আপনি আসলে নন, আপনি জীবনীশক্তির বিপক্ষে চলে যান। আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি ধার্মিক হচ্ছেন, কিন্তু এসব ঘটছে কেবল আপনি বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে; আপনি পুরোপুরি একটা মনস্তাত্ত্বিক নাটক তৈরি করছেন এবং অস্তিত্বের নাটকটাকে মঞ্চস্থ করছেন। আপনি নির্মাতার সৃষ্টি থেকে পুরোপুরি অনুপস্থিত, কারণ আপনার মাথার মধ্যে আপনার নিজস্ব নির্বোধ সৃষ্টি আপনাকে ব্যস্ত রাখছে। 

আলোকপ্রাপ্তি - অজ্ঞতার উদযাপন

আপনি তখনই সত্যের দিকে এগোবেন যখন আপনি উপলব্ধি করবেন "আমি জানি না"। যদি আপনি ভাবেন যে আপনি জানেন, তাহলে আপনি অসত্যের দিকে যেতে শুরু করবেন - কারণ "আমি জানি" কেবল একটা ধারণা; "আমি জানি না" হল প্রকৃত সত্য, এটাই বাস্তবতা। যত তাড়াতাড়ি আপনি এটা বুঝতে পারবেন, ততই ভাল। আপনি জানেন না, এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় উপলব্ধি। "আমি জানি না" একটা দুর্দান্ত সম্ভাবনা। কেবলমাত্র যখন আপনি "আমি জানি না" কি সেটা বুঝতে পারবেন, জানার আকাঙ্ক্ষা, জানতে চাওয়া এবং জানার সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হবে।  

আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা সর্বদাই অজ্ঞতার সাথে একাত্মবোধ করতাম কারণ আমাদের জ্ঞান অতি ক্ষুদ্র। আমরা যতই জেনে নিই না কেন, আমাদের অজ্ঞতা সীমাহীনই থাকবে। সুতরাং আপনি যদি নিজের অজ্ঞতার সাথে একাত্ম হন তবে আপনি কিছু অর্থে সীমাহীন হতে পারেন কারণ আপনি যা কিছুর সঙ্গেই একাত্ম হবেন, সেটাই হবে আপনার গুণ। এক অর্থে, আলোকপ্রাপ্তি হল অজ্ঞতার উদযাপন, একটা আনন্দময় অজ্ঞতা। আপনি জ্ঞানের বোঝায় জর্জরিত নন, তাই আপনি সবকিছুকে সেই ভাবেই দেখবেন যা তাদের আসল রূপ। আপনি যদি জ্ঞানের বোঝায় জর্জরিত হন, তবে আপনি কোন কিছুই সঠিকভাবে দেখতে পাবেন না; আপনি সবকিছুর সম্বন্ধেই পক্ষপাতপূর্ণ হবেন। 

সুতরাং কবির ছিলেন একজন জ্ঞানদীপ্ত তাঁতি, একজন অতীন্দ্রিয়বাদী। অতীন্দ্রিয়বাদ মানে অতীতের কোন একজন ব্যক্তি বা কোথাও কয়েকটা কবিতা পড়েছেন, তা নয়। অতীন্দ্রিয়বাদ মানে প্রতিদিন আপনি জীবনের নতুন ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। নতুন কিছু, যা আপনি জানতেন না, আজ আপনার সেটার অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অতীন্দ্রিয়বাদ মানে সঞ্চিত জ্ঞানের পরিমাণ নয়; অতীন্দ্রিয়বাদ মানে একটা অন্বেষণ। আপনি যদি বিশ্বাস করেন, তবে আপনি কোন অন্বেষণ করতে পারবেন না। আপনি তখনই প্রকৃত অর্থে অন্বেষণ করতে পারবেন যখন আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনি জানেন না।