মৃত্যুকে একটা গুরুতর রহস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুজরুক, দার্শনিক, ডাক্তার এবং কবিরা এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মৃত্যু অজানা এবং অজ্ঞেয় রয়ে গেছে - আপাতদৃষ্টিতে সকলের জন্য একটা বাধ্যতামূলক গন্তব্য। একমাত্র একজন অতীন্দ্রি়বাদী, যিনি জীবন এবং মৃত্যুর রেখার মধ্যে সচেতনভাবে পা রেখেছেন, তিনিই বলতে পারেন এই দুটো অতিক্রম করার জন্য কি করতে হয়, ও সেইদিকে প্রথম পদক্ষেপ রাখার প্রক্রিয়াটা আমাদের দিতে পারেন।

সদগুরু: আপনাকে এটা বুঝতে হবে: আপনি যা কিছুর অভিজ্ঞতা করতে পারেন, সেটাই জীবন। যাকে আপনি মৃত্যু বলেন তাও হ'ল জীবন। তাই, মৃত্যুর কি কোনো বিকল্প আছে? অবশ্যই আছে। আপনি মৃত্যু হিসেবে যেটা উল্লেখ করছেন তা হল জীবনের শেষ মুহূর্ত। সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন আপনি ভৌতিক দেহের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেন, আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে। আপনার জীবনের বাকি প্রায় সবকিছুই বহুবার ঘটতে পারে। কিন্তু এই একটা মাত্র জিনিস আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে এবং এটাই আপনার শেষ কাজ। আমি চাই আপনি মৃত্যুকে জীবন হিসাবে উপলব্ধি করুন, অন্য কিছু হিসাবে নয়। এটা আপনার জীবনের শেষ কাজ। এটা কি জরুরি নয় যে আপনি একে মধুর এবং চমৎকার ভাবে ঘটানোর চেষ্টা করবেন? আপনি যদি এর থেকে ভয় পান, আপনি যদি জীবনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হন এবং আপনি যদি এর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তবে স্বাভাবিকভাবে আপনি সেই সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলবেন।

আধ্যাত্মিক পথের লোকেরা তাদের মৃত্যুর সময়, তারিখ এবং স্থান নির্বাচন করেন। যোগী সর্বদা সময়ের আগে মৃত্যুর সময় এবং তারিখ জানতে চান। তিনি সেটা স্থির করেন। অনেক বছর আগে থেকেই তিনি বলে দেন, “এই তারিখে, এই সময় আমি চলে যাব,” এবং তিনি চলে যান, কারণ তিনি সচেতনভাবে চলে যাওয়ার জন্য নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরি করেন। শরীরের কোনও ক্ষতি না করে এই দেহটাকে সচেতনভাবে ত্যাগ করা, যেভাবে আপনি কাপড় ছাড়েন এবং চলে যান, আপনি আপনার শরীরটাকে সেইভাবে ত্যাগ করবেন এবং চলে যাবেন, আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে সেটা হবে আপনার জীবনের চূড়ান্ত সম্ভাবনা। যদি আপনার সচেতনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আপনি জানেন অস্তিত্ব হিসেবে আপনি এবং এই ভৌতিক শরীর হিসেবে আপনি যা সংগ্রহ করেছেন সেটা কোথায় সংযুক্ত, তখন আপনার সঠিক মুহূর্তে আপনি নিজেকে আলগা করতে পারবেন।

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না।

এটা কি আত্মহত্যা? নিশ্চিত ভাবে না। আত্মহত্যা হতাশা, ক্রোধ, ভয়, দুঃখ সহ্য করার ব্যর্থতা থেকে হয়। এটা না আত্মহত্যা আর না ইচ্ছামৃত্যু। এটা নিজের সমন্ধে এতটাই সচেতন হওয়া যে আপনি জানবেন কখন আপনি জীবনের চক্রটা সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন, এবং আপনাকে এর বাইরে বেরোতে হবে। এবং এটা মৃত্যুও নয়। এটা সমাধি নামে পরিচিত, যেখানে একজন মানুষ নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে সচেতনতা তৈরি করেছে নিজের জমানো শারীরিকতা থেকে নিজেকে আলাদা করতে। সচেতনতার সেই স্তরে, কারোর পক্ষে ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব। আপনি যদি সচেতনতার সেই স্তর অর্জন নাও করতে পারেন, আপনি যদি কিছু নির্দিষ্ট জিনিস পরিচালনা করতে পারেন তবে আপনি অন্তত নিজের সেই শেষ মুহূর্তটাকে অত্যন্ত মধুর, আনন্দদায়ক, সুখকর এবং আনন্দপূর্ণ করে তুলতে পারেন। .

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না। আপনি যদি আপনার পুরো জীবনটায় একটা নির্দিষ্ট স্তরের সচেতনতা বজায় রাখেন,তবে চলে যাওয়ার মুহুর্তটাও সচেতনতার মধ্যে ঘটতে পারে। আপনি যদি অসচেতন ভাবে জীবনযাপন করেন এবং আপনি সেই মুহূর্তটায় সচেতন হওয়ার প্রত্যাশা করেন, এই ধরণের জিনিস মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে না।

আজকের রাতে এইটা অনুশীলন করুন, যাওয়ার শেষ মুহূর্তটা - আমি এটাকে যাওয়ার সময় বলি কারণ সেই শেষ মুহূর্তে আপনি জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমোতে চলেছেন - আপনার সচেতনতা বজায় রাখুন এবং দেখুন। এটা আপনার জীবন অভূতপূর্বভাবে বদলে দেবে। প্রতিদিন এটা একটা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করুন। সম্পূর্ণ অধ্যবসায়ের সাথে এটা করুন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি দেখবেন, আপনি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছেন, যেখানে শেষ মুহূর্ত অবধি আপনি সচেতন থাকছেন। আচমকাই, আপনার জীবন-সম্পর্কীয় সমস্ত কিছু, আপনার জীবনের মৌলিক গুণগুলো, কেবলমাত্র এই একটা সাধারণ কাজ করেই বদলে যাবে। আপনি যদি সচেতনতার সঙ্গে জেগে থাকা থেকে ঘুমের মধ্যে যেতে পারেন, তবে জীবন থেকে মৃত্যুর দিকে যাওয়ার সেই শেষ মুহূর্তটাও আপনার জন্য ভীষণ মধুরভাবে ঘটবে। আরও অন্যান্য পদ্ধতিও রয়েছে।

ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে মানুষ তাদের প্রিয়জনের মধ্যে মারা যাওয়া পছন্দ করতেন না, কারণ আপনি যদি নিজের পরিবারের মধ্যে মারা যান, তবে অনেক আবেগ এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি জীবনকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। আপনি এটাকে সুন্দরভাবে হতে দেবেন না। তাই লোকেরা দূর দূর স্থানে ভ্রমণ করতেন যা আধ্যাত্মিকভাবে প্রাণবন্ত বলে মনে করা হত এবং তারা নিজেদের দেহ সেই জায়গায় ত্যাগ করতে চাইতেন। এমনকি আজও, মানুষ এটা করে। পশ্চিমী দেশে এটা পুরোপুরি চিন্তার বাইরে হতে পারে কারণ সেখানকার মানুষ তাদের পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মারা যেতে চান। এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। একজন ব্যক্তির পক্ষে এমন একটা স্থান নির্বাচন করা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ, যা আধ্যাত্মিকভাবে অনুকুল, যা নির্দিষ্ট উপায় প্রাণবন্ত এবং যথাসম্ভব কৃপার সঙ্গে দেহ ত্যাগ করার জন্য আদর্শ। আপনি যদি কৃপার সঙ্গে জীবনযাপন করেন তবে মাধুর্য্যের সঙ্গে আপনার মারা যাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Editor's Note: This article is based on an excerpt from Isha’s monthly English magazine, Forest Flower. Twenty-three issues of Forest Flower from the years 2011 and 2012 are available for download. Pay what you want and download. (set ‘0’ for free). Print subscriptions are also available.