প্রশ্ন: মহাশয়, আমরা আমাদের দেশকে মহিলা হিসেবে কল্পনা করি এবং তাকে ডাকি “ভারত মাতা” বলে। তা স্বত্তেও আমরা এমন অনেক ধর্ষণের ঘটনা দেখতে পাই, যেখানে আমরা দেখি কোনও ব্যক্তি তার নিজের মা’কে, মেয়েকে অথবা বোনকে ধর্ষণ করছে। কোন পৈশাচিক আনন্দ মানুষকে এমন অমানবিক কাজের পথে চালিত করে ?

সদগুরু: আমরা তো পৃথিবীকেও “ধরিত্রী মা” বলি | তার মানে কি পৃথিবীতে সব অপরাধ বন্ধ হয়ে গেছে ? না, এখানে অনেক ধরণের অপরাধ আছে | মহিলাদের ওপরে যৌন নির্যাতন খুব বেশি মাত্রায় আছে | এটার অনেকগুলো দিক আছে | আমরা রেগে গিয়ে বলতেই পারি, “ বেশ, ওদের ফাঁসি দাও”| এখন, যদি তুমি ধর্ষণের জন্য ফাঁসির সাজাই নিয়ে আসো, তোমাকে বুঝতে হবে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই একমাত্র সাক্ষী নির্যাতিতা নিজে | তুমি যদি একজন ধর্ষণকারীর কাছে এটা নিশ্চিত করে দাও যে, তুমি যদি ধর্ষণ করে ধরা পড়ো তাহলে তোমার অবশ্যই ফাঁসি হবে, তাহলে সে কী করবে বলে তোমার মনে হয়? সে সেই একমাত্র সাক্ষীকে সরিয়ে দেবে। তাই কিছু বলার আগে, নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন আমরা কী বলছি | এর মানে এই নয় যে আমি তাদের সমর্থন করছি। এটা হল শুধুমাত্র সেই প্রশ্ন যে তুমি কোনও সমাধান চাইছ অথবা ক্যাঙ্গারুর আদালত চাইছ, “সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলাও!”

একটি প্রজন্মের বদল

আমাদের অবশ্যই দেখতে এমন কেন ঘটছে | একটা বিষয় হল, ভারতের সংস্কৃতির বিচারে, এটাই প্রথম প্রজন্ম যেখানে মহিলারা আক্ষরিক অর্থে রাস্তায় নামছেন, হাঁটছেন এবং পুরুষের কাছাকাছি এসে কাজ করছেন। মানুষ এটার সঙ্গে অভ্যস্থ ছিল না | আবার লক্ষ লক্ষ তরুণ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছে | গ্রামে মহিলা বলতে তারা বুঝত, হয় নিজের মা, মাসি, তাদের কাকিমা অথবা পিসিমা কিংবা ঠাকুমাকে। এখন তারা শহরে এসে দেখল যুবতী মেয়েরা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে | এটা তাদের কাছে ভীষণ নতুন | তাই সব জিনিসকেই ছোট করে দেখে এমন আচরণ করা যায় না যেন মনে হয় আমরা অন্য কোনও গ্রহ থেকে খসে পড়েছি।  

মানুষ মাত্রই যৌনতাড়না থাকবে | পনেরো থেকে পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত হরমোনের প্রভাব থাকে সর্বাধিক।

মানুষ মাত্রই যৌনতাড়না থাকবে | পনেরো থেকে পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত হরমোনের প্রভাব থাকে সর্বাধিক। কেউ যদি বুদ্ধির চর্চার সঙ্গে নিয়মিতভাবে যুক্ত থাকে অথবা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি, সংগীত, শিক্ষা অথবা অন্য যে কোনও দিক, যা তাকে ব্যস্ত রাখে, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন | যদি তেমন কিছুই না থাকে তোমাকে ব্যস্ত রাখার মতো, শুধুমাত্র তোমার হরমোনই উত্তেজিত করবে, যখনই তুমি তোমার গ্রাম থেকে শহরে এসে তরুণীদের দেখবে। যে ধরণের মানুষকে তোমরা ছায়াছবিতে দেখ, তারা সবাই পথ চলতি মানুষ। সর্বোপরি, সব জায়গায় মদের নেশাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে | যেই মুহূর্তে দু’বিন্দু মদ শরীরে প্রবেশ করল, সেই সন্ধ্যায় তারা একেবারে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ল। যদি সে মনে করে যে কেউ লক্ষ্য করছে না, তাহলেই সে কারোর ওপর একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

এক অমানবিক পরিবেশ

এর মধ্যে একটা সামাজিক কারণও আছে | মানুষটি যদি গ্রামে থাকতো, তার মা, কাকিমা অথবা অন্য কেউ তাকে বলত, “তুমি ওই মেয়েটাকে চেনো, আমরা তোমার সঙ্গে ওর বিয়ে দিতে চলেছি”। যদি ওই মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ে নাও হয়, তার বিশ্বাস জন্মাতো যে তার চাহিদার একটা সমাধান আছে |  

যখন একজন কেউ অপরাধ করে, তাকে শাস্তি দিতে হবে - সেটা আলাদা বিষয়। আমি তার মধ্যে ঢুকছি না। কিন্তু সামাজিক ভাবে, সমাধান সূত্রটা কী?

এখন, শহরে সে একা এসেছে। সারাদিন কাজ করে রাত্রে নোংরা, অমানবিক পরিবেশে দশটা ছেলের সঙ্গে একটা ঘরে ঘুমায়। সেটা একটা ঠাসাঠাসি করা ক্যাম্পের মতো । তাদের মধ্যে অধিকাংশই এই একই অবস্থার মধ্যে বাস করে। এবং এখানে তাদের হরমোন, তাদের শারীরিক, মানসিক বা জীবনের কোনও সমস্যার সমাধান থাকে না। সেখানে এমন কেউ নেই যে তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, “তুমি কী করতে চলেছ? তুমি কাকে বিয়ে করতে চাইছো? তুমি জীবনে কীভাবে ঠিতু হতে চাইছো”? একটা মানুষও কি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে? না। এবার সন্ধ্যাবেলা বন্ধুদের সঙ্গে, যদি সে একটু মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, মানুষটা একেবারে অশান্ত হয়ে ওঠে। তার ওপর, এখন লোকজন বিভিন্ন রকম অশ্লীল ভিডিও বিক্রি করছে। সে ওগুলো দেখছে এবং মনে করছে এটাই করা উচিত।

 

যখন একজন কেউ অপরাধ করে, তাকে শাস্তি দিতে হবে - সেটা আলাদা বিষয়। আমি তার মধ্যে ঢুকছি না। কিন্তু সামাজিক ভাবে, সমাধান সূত্রটা কী? তুমি কি তাদের সন্ন্যাসী হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছো ? তুমি কি তাদেরকে যোগ অথবা সাধনা শেখাচ্ছো, যাতে তারা ব্রহ্মচারী হয়ে এই সব কিছুর থেকে মুক্ত হতে পারে ? না, তোমরা এসব কিছুই শেখাওনি তাদের। তুমি কি তাদের সমস্যা সমাধানের রাস্তা দেখাতে চাও ? যদি সে গ্রামে থাকতো, তাহলে আঠারো বা উনিশ বছর বয়সে তার কারো সঙ্গে বিবাহ হয়ে যেত। এখন তার কোনও আশা নেই। এখন সে এমন টাই থাকবে এবং এই ধরণের উশৃঙ্খল কাজ করবে | এটাই একজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আমাদের বুঝতে হবে। 

আলোচনার প্রয়োজনীয়তা

মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে, প্রতিটা মেয়ের বিয়ে হয়ে যেত তার ষোলো বা সতেরো বছর বয়সের মধ্যে। একজন ছেলের বিয়ে হয়ে যেত কুড়ি বছরের আগে। তাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে তার জীবনের সবকিছু নিশ্চিত হয়ে যেত। প্রজন্মগত এবং সংস্কৃতিগত ভাবে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। এখন তার জীবনে নিশ্চয়তা বলে কিছু নেই। আমাদের এই নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করা উচিত, “আমরা আমাদের তরুণদের নিয়ে কী করতে চলেছি”? আচার সর্বস্ব কাজকর্ম্ম কোনও কাজে দেবে না। 

যৌবন মানে তার অনেক দিক | একটা দিক তার মধ্যে হরমোনের প্রতিক্রিয়া - তুমি কি সেটা মেনে নেবে নাকি শুধুমাত্র চোখ বন্ধ করে থাকবে

যৌবন মানে তার অনেক দিক | একটা দিক তার মধ্যে হরমোনের প্রতিক্রিয়া - তুমি কি সেটা মেনে নেবে নাকি শুধুমাত্র চোখ বন্ধ করে থাকবে আর বলবে, “ওরকম নয় ব্যাপারটা। শুধুমাত্র কিছু লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে”। এভাবে কিছুই ঠিক হবেনা। সময় এসেছে ব্যাপারটাকে চিহ্নিত করার | ভারত মাতা আবেগের সাথে জড়ানোর আগে দয়া করে বিষয়টাকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা উচিত।  

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image