সদগুরু: কোন ব্যক্তির পক্ষে, নিজের বিশ্বাসধারার প্রভাব কাটিয়ে তার বাইরে দেখতে এবং এটা স্বীকার করতে যে তার জীবনের একেবারে বুনিয়াদি দিকগুলোর সম্বন্ধেও সে কিছুই জানে না - প্রভূত সাহসের প্রয়োজন হয়। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার দুটি হাত আছে, না কি আপনি এটা জানেন যে আপনার দুটি হাত আছে? এমনকি আপনার চোখ দিয়ে যদি তাদের নাও দেখেন, তা সত্ত্বেও আপনি জানেন যে আপনার দুটি হাত আছে। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে এটা আপনার কাছে পরিষ্কার। কিন্তু ব্যাপারটা যখন ঈশ্বর নিয়ে, তখন আপনাকে বলা হয়েছে বিশ্বাস করতে; কেউ আপনাকে ঈশ্বরত্বের অনুসন্ধান করতে বলেননি।

….ব্যাপারটা যখন ঈশ্বর নিয়ে, তখন আপনাকে বলা হয়েছে বিশ্বাস করতে; কেউ আপনাকে ঈশ্বরত্বের অনুসন্ধান করতে বলেননি।

কোন কিছুর উপর বিশ্বাস আপনার রূপান্তর ঘটাবে না। কিন্তু সেই একই জিনিস আপনি যদি উপলব্ধি করেন, তাহলে সেটা আপনাকে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করে ছাড়বে। উপলব্ধির স্পর্শ ছাড়া আপনার বিশ্বাসের কোন অর্থই থাকে না। ধরুন আপনার জন্মের দিন থেকে যদি আপনাকে বলতে থাকি যে আমার কনিষ্ঠ আঙুলটাই ভগবান, আর যদি আপনাকে আমি আমার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটা দেখাই তাহলে আপনার অন্তঃকরণে দৈবিক ভাবাবেগ উৎপন্ন হবে। আর যদি আমি আপনার জন্মের দিন থেকেই আপনাকে শেখাই যে আমার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটাই শয়তান, আর যদি আপনাকে আমার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটা দেখাই তাহলে আপনার ভেতর আতঙ্কের উদ্রেক ঘটবে। এটাই আপনার মনের প্রকৃতি।  

মন দিয়ে আপনি যা কিছুই গড়েন, তার সত্যিকারের কোন গুরুত্ব নেই। একটি যন্ত্র হিসেবে গুরুত্ব আছে, কিন্তু চূড়ান্ত অর্থে এর কোন মানেই হয় না, কারণ এটা আজকে এক ধরনের আকার নিতে পারে আবার কাল অন্য আরেক রকমের; মন পরিবর্তনশীল, যেকোনো কিছুই করা যায় একে দিয়ে। মনের গঠন কেবলমাত্র নির্ভর করে সে কিভাবে প্রভাবিত হয়েছে । আপনি যদি গভীরভাবে দেখেন, যেটাকে "আপনার মন" বলছেন - সেটা আপনার চারপাশের হাজার হাজার লোকের থেকে ধার নেওয়া। ছোট ছোট টুকরো দিয়ে আপনি এই মন পুঞ্জীভূত করেছেন। আপনার মন আপনার প্রেক্ষাপট মাত্র- যা নির্ভর করে আপনি কি রকম পরিবার থেকে এসেছেন, আপনার শিক্ষা এবং ধর্ম, যে দেশ বা সমাজের অন্তর্ভুক্ত আপনি এবং যে বিশ্বে আপনি বাস করেন।

আপনি যাকে "আমি" বলে অভিহিত করেন সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্বটি হল জীবন সম্পর্কে আপনার উপনীত একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত মাত্র।

বুদ্ধি বেঁচে থাকার জন্য একটা যন্ত্র মাত্র, আপনার জীবনের সীমিত একটা দিক। বেঁচে থাকাটা আবশ্যিক কিন্তু পরিপূর্ণ নয়। যদি আপনি জীবনের গভীরতর মাত্রাগুলোর মধ্যে যেতে চান, প্রথমেই আপনার দরকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির। বর্তমানে আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র আপনার জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে- দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধের দ্বারা। এগুলো দিয়ে, আপনি যা ভৌতিক তার বাইরে কোন কিছুই জানতে পারবেন না। আপনি মহা সমুদ্রের গভীরতা মাপতে পারেন না একটা ফুট স্কেলের সাহায্যে। আর এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে। তারা জীবনের গভীরতর মাত্রাগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সঙ্গে না নিয়েই। তাই তারা ভুল সিদ্ধান্তে ঝাঁপ দিচ্ছেন।

মানুষ সিদ্ধান্তে ঝাঁপিয়ে পড়তে খুবই উৎসুক, কারণ একটা অভিমত ছাড়া তাদের নিজের বলতে আর কিছুই তো নেই। আপনি যাকে "আমি" বলেন, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব হল জীবন সম্পর্কে উপনীত আপনার একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত মাত্র। কিন্তু আপনি যে সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়ে থাকুন না কেন, আপনার ভুল হতে বাধ্য - কারণ জীবন আপনার কোন সিদ্ধান্তের সঙ্গেই খাপ খায় না।

খুব সহজভাবে এটা দেখতে গেলে, কেবল একজন মানুষের দৃষ্টান্ত নিন। হয়তো কুড়ি বছর আগে আপনার সঙ্গে একজনের দেখা হয়েছিল এবং তখন সে যা করছিল, আপনার তা পছন্দ হয়নি। আপনি সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছিলেন যে সে ভালো মানুষ নয়। এখন ধরুন আপনার সাথে কুড়ি বছর পরে এই ব্যক্তির দেখা হল, সে হয়তো সব থেকে সুন্দর মানুষ হয়ে উঠেছে, কিন্তু আপনার মন আপনাকে এই মানুষটি এখন যেরকম ঠিক সেরকম ভাবেই তাকে উপলব্ধি করতে দেবে না। যে মুহূর্তে আপনি কোন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন, আপনি আপনার বিকাশের পথ রুদ্ধ করেছেন; আপনি জীবনের সম্ভাবনা গুলোকে রুদ্ধ এবং বিনাশ করেছেন।

একটা আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার অর্থ অন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্তে ঝাঁপিয়ে পড়া নয়। যখন আপনি কোন সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়ে আপনার অস্তিত্ব বজায় রাখার সাহস রাখেন, প্রতিনিয়ত চোখ মেলে দেখতে ইচ্ছুক থাকেন, নিজের অস্তিত্বকে এই মহাজগতের এক ক্ষুদ্র কণা রূপে স্বীকার করতে ইচ্ছুক হন, তাহলেই আপনি অস্তিত্বের অসীমতা জানতে পারবেন।

 

Editor’s Note: Has Sadhguru ever experienced God? Click here to watch Sadhguru’s answer to a seeker’s probing question.