আপনজনের শান্তিপূর্ণ মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কি কি যত্ন নেওয়া যায় তা সদগুরু বলেছেন এবং এরজন্য ভারতীয় সংস্কৃতি কিভাবে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে তা ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রশ্নকর্তা: আমার স্বজন মৃত্যুর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে একটি শান্তিময় মৃত্যুর জন্য তৈরি করার কি উপায় আছে?

সদগুরু: পৃথিবীর সর্বত্র, শান্তিপূর্ণ ভাবে কিভাবে মৃত্যুবরণ করা যায়, এ নিয়ে মানুষ আলোচনা করে এসেছে। তারা এটাই বারংবার চর্চা করেছে যে কেউই বিক্ষিপ্ত মৃত্যু চায়না; সকলে চায় মসৃণ ভাবে পশ্চাদপসারণ করতে। মৃত্যুর অস্থিরতা দূরে রাখতে একটা সাধারণ জিনিস আপনি করতে পারেন। আপনি একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে পারেন, ঘি হলে ভালো না হলে তেল দিয়ে, যেটা ওই ব্যক্তির পাশে ২৪ ঘন্টাই জ্বলবে। এটা একটা সূক্ষ্ণ আবহ তৈরী করে যাতে পশ্চাদপসরণের অস্থিরতা কিছুটা কমানো যায়। আরেকটা জিনিস যেটা আপনি করতে পারেন তা হলো কোনো সার্বজনীন স্তুতি বজায় রাখতে পারেন - ব্রহ্মানন্দ স্বরূপা ’র সিডি ইত্যাদি - খুব ধীর মাত্রায়। এধরণের পূতিকৃত ধ্বনি একপ্রকারের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে যাতে মৃত্যুর অস্থিরতাকে এড়িয়ে চলা যায়।

একজন মারা যাওয়ার পর ১৪ দিন অবধি, একটি প্রদীপ ও সাধারণ স্তুতি বজায় রাখা উচিত, কারণ তিনি ডাক্তারী মতে মারা গেলেও হয়তো অস্তিত্বগতভাবে তখনও রয়েছেন, তিনি হয়তো সম্পূর্ণরূপে মৃত নন। মৃত্যু ধীরগতিতে হয়। এই শরীর থেকে, যেটা নাকি পৃথিবীর একটা পিণ্ড মাত্র, জীবনের পরিত্রাণ ঘটে ধাপে ধাপে। ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিস্ক বন্ধ হয়েছে বলে মৃত ঘোষণা করা হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু ঠিক তখনই হয় না। একজনের দেহ পুড়িয়ে ফেলার পরও সে মৃত নয় কারণ অন্য জগতে তার বিচরণ তখনও শুরু হয়নি।

এই কারণের জন্যই ভারতে একজনের মৃত্যুর পর ১৪ দিন পর্যন্ত নানান আচার ও অনুষ্ঠান পালন করা হয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, এর পেছনের জ্ঞান আর শক্তি প্রায় সমস্তটাই হারিয়ে গেছে এবং মানুষেরা শুধু তাদের জীবনধারণের জন্য এগুলো করে চলেছে। খুব কম সংখক লোকই এর প্রকৃত মর্ম বোঝে। যদি একজন সম্পূর্ণ সচেতনভাবে দেহত্যাগ করেন যাতে কিনা তিনি তৎক্ষণাৎ এই জগতের পালা চুকিয়ে প্রস্থান করতে পারেন তাহলে তার জন্য আমাদের কিছু করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আর সকলের জন্য এই সমস্তকিছু করা হয় কারণ তাদের পথ দেখানো প্রয়োজন।

একজনের মৃত্যুর পর প্রথম যেটা করা হয়, তার দেহের সাথে যাকিছু অন্তরঙ্গভাবে স্পর্শ করে ছিল যেমন তার অন্তর্বাস, তা পোড়ানো হয়। অন্য জামাকাপড়, অলংকার সমস্তকিছু তিন দিনের মধ্যে একাধিক লোকের কাছে কাছে বিলি করে দেওয়া হয়। সমস্তটাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিতরণ করে দেওয়া হয় যাতে তারা বিভ্রান্ত হন। তার ফলে তারা থেকে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন জায়গা পাবে না। আপনি যদি তার একগুচ্ছ জামাকাপড় কোনো একজনকে দেন, তাহলে তারা সেখানেই যাবে কারণ তার শরীরের শক্তিগুচ্ছ বস্ত্রের মধ্যে থাকে। এগুলো করা হতো কেবল মৃত ব্যক্তিকে স্থির করার জন্যই নয়, সেইসঙ্গে তার পরিবার ও আত্মীয়দেরকেও স্থিত করার জন্য, যাতে তারা বোঝে যে ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেছে। আপনি একজনের সাথে যতই সংলিপ্ত ও সংযুক্ত থাকুন না কেন, মৃত্যুর ধাপ পেরনো মানে একটাই - খেলা শেষ।

যখন কেও মারা যাচ্ছে, তখন বাঁশী বেজে গেছে এবং তার জীবনের খেলা শেষ। তখন তাকে পদাঘাত করার কোনো অর্থ হয় না।

সাধারণত পৃথিবীর সর্বত্রই, তা সে যে কোনও সংস্কৃতিতেই হোক না কেন, এটা বলা হয় যে – “যদি তোমার শত্রুও এই মুহূর্তে মৃতপ্রায় হয়, তোমার উচিত তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা ও দেখা যাতে সে শান্তিভাবে মরতে পারে। মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড়ানো মানুষের সাথে তুমি কখনই কুৎসিত কিছু কোরো না।” হয়তো তুমি তাকে যুদ্ধ্যে গুলি করে মেরেছো, কিন্তু সে যখন তার দেহ ত্যাগ করছে সেই সময় তুমি তোমার টুপিটা খুলে দিলে, বা বললে ‘রাম রাম’, বা তুমি যেটাই জানো। যখন কেও মারা যাচ্ছে, তখন বাঁশী বেজে গেছে এবং তার জীবনের খেলা শেষ। তখন তাকে পদাঘাত করার কোনো অর্থ হয় না।

সেই কারণে, যখন আপনি দেখেন যে মৃতদেরও সম্মান দেখানো হচ্ছে না, আপনার ভেতরে কিছু নাড়া দেয়। এই কারণে নয় যে একটা দেহকে সম্মান দেখানো আবশ্যক, কিন্তু এই জন্য কারণ তিনি ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছেন। জীবিত অবস্থায়ে তিনি কিভাবে ছিলেন সেটা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এখন বিদায়পর্বটি ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়া উচিত। প্রত্যেক মানুষের অন্তত ওইটুকু ইচ্ছা থাকা উচিত।

সম্পাদকের টিকা: ‘কায়ান্থ স্থান’ হলো ইশার শবদাহ সেবা যা মরণোত্তর ক্রিয়াকার্য ও প্রাচীন সংস্কৃতিকে তেজময় প্রাণশক্তির উদ্দমে পুনরুজ্জীবিত করে, তাদেরকে সেবা মূলক ভাবে পরিচালনা করে না কি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে। আমরা আপনাদের সহযোগিতা ও সহায়তা চাইছি এই সেবাকে আরো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন – ‘কায়ান্থ স্থান’ ঈশার মরণোত্তর সেবাকর্মে।

Isha Chants – Free Mobile App
Vairagya - mp3 download