সদগুরু: জীবনে কাঙ্ক্ষিত জিনিসের সব কিছুই অনৈতিক, বেআইনি অথবা মেদবর্ধক হয়ে যায় কেন ? তরুণরা প্রায়শই এ প্রশ্ন করে বা এটা নিয়ে ভাবিত হয়। প্রথমে দেখা যাক, কোনটা “অনৈতিক”। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌনতা শব্দটি ব্যবহারের সময় মানুষ অপ্রয়োজনীয় ইঙ্গিত করে ফেলে। যৌনতা এমনই এক বিষয় যার জন্য অবিশ্বাস্য সময় ব্যয় করে প্রতিটি মানুষ। সাধারণ একটি শারীরবৃত্তীয় চাহিদা জীবনভর আচ্ছন্ন করে রাখে বহু মানুষকে। সহজ ভাবে এটাকে বোঝা প্রয়োজন যে, যৌনতা আমাদের মধ্যে থাকা একটি স্বাভাবিক প্রবণতা, যার শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের মধ্যে ঘটা কিছু রাসায়নিক পরিবর্তনের জন্য। প্রাণীদের প্রজননে উৎসাহিত করার জন্য প্রাকৃতিক নিয়মেই এর সঙ্গে সুখের অনুভূতি জড়িয়ে থাকে। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, প্রজননের দিক থেকে সরে সরে ক্রমশ এটি সুখের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঠিক বা ভুল কিছু নেই। যৌনতা শুধুমাত্র জীবনের ভৌত অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত একটি আবশ্যিক প্রক্রিয়া। এক সময় দু’জন মানুষ পরস্পরের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করেছেন বলেই তুমি ও আমি আজ রয়েছি। এটাই বাস্তব।

মানুষের জীবনে যৌনতার উপস্থিতি ঠিকই আছে, কিন্তু এর ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। মানসিকভাবে কোনও একটি লক্ষ্যের প্রতি যারা অবিচল থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এই চাহিদার প্রভাব থাকে না।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ধর্ম এবং নীতি শিক্ষকরা আমাদের জৈব সত্তাকে পাপ বলে ভাবতে শিখিয়েছেন। বহুদিন থেকেই এর ফলস্বরূপ অসংখ্য অপরাধ ও যন্ত্রণার জন্ম হয়েছে। কোনও বিষয়কে যত অস্বীকার করবে, মনের মধ্যে তার গুরুত্ব তত বাড়তে থাকবে। এই চাপা দিয়ে রাখার প্রবণতা মানুষের মনে যারপরনাই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

একই সঙ্গে প্রশ্ন হল, আমরা কি শরীরের রসায়নের হাতের পুতুল ? অবশ্যই না। মানুষের জীবনে যৌনতার উপস্থিতি ঠিকই আছে, কিন্তু এর ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত। মানসিকভাবে কোনও একটি লক্ষ্যের প্রতি যারা অবিচল থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এই চাহিদার প্রভাব থাকে না। মনের পরিধির বাইরে গভীরতর কোনও সুখের খোঁজ যদি পাও, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমে আসে যৌন প্রবৃত্তির তাড়না।

যৌনতার সঠিক প্রকাশ

যৌনতার ওপর প্রথাগত ধর্মীয় নিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে গিয়ে সাম্প্রতিক কালে, পশ্চিমী দুনিয়া দিকভ্রান্ত হয়ে আরও বেশি শরীরের ফাঁদে জড়িয়ে গেছে। এটাকে নকল করতে যাওয়াটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া কিছু নয়। আমাদের মৌলিক জৈবিক সত্তাকে বিসর্জন দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু একই সঙ্গে তাকে নিয়ে মাতামাতিরও প্রয়োজন নেই। শৈশব থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত বেড়ে ওঠাকে যদি তুমি খেয়াল করো, তা তোমাকে কৌতূহলী করতে পারে, কিন্তু তা যেন তোমার শাসক না হয়। স্বাভাবিক মানবিক বুদ্ধিবৃত্তির বলে আমরা সকলেই সচেতন ভাবে জানি যে, আমাদের জীবন হরমোনের প্রভাবের চেয়ে অনেক বড়। অপরাপর প্রাণীদের মতো মানুষ কখনই তার শরীরের রসায়নের করুণার পাত্র নয়। মানুষের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শরীরের চাহিদা মেটানোর চেয়ে তার আবেগ ও মনের সঙ্গী পাওয়ার চাহিদা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, যারা শুধু হরমোনের ক্রিয়াশীলতাকে বুদ্ধিবৃত্তির ওপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ দেয়, নিশ্চিতভাবেই তারা ভিতরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আজকাল তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বিভিন্ন ছবিতে বা অনলাইনে দেখা অভিজ্ঞতার পায়ে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিকে সমর্পণ করেছে। এর ফলস্বরূপ, সচেতনতা ও ভারসাম্যের অনুশীলনের বদলে কামজ তাড়নার প্রতি সাড়া দেওয়া যেন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ সর্বদাই যৌনতার পক্ষে অথবা বিপক্ষে কথা বলে। এর কোনওটাই প্রয়োজনীয় নয়। যা আমাদের প্রয়োজন তা হল, শরীর ও মনের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতার বীজ বপন করা, সেক্ষেত্রে যৌনতা তার সঠিকতায় প্রকাশের রাস্তা খুঁজে নেবে। যৌনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়াটাও অতীব জরুরী।

মানুষ সর্বদাই যৌনতার পক্ষে অথবা বিপক্ষে কথা বলে। এর কোনওটাই প্রয়োজনীয় নয়। যা আমাদের প্রয়োজন তা হল, শরীর ও মনের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতার বীজ বপন করা, সেক্ষেত্রে যৌনতা তার সঠিকতায় প্রকাশের রাস্তা খুঁজে নেবে।

কিছু সাধারণ যোগভ্যাস যদি কম বয়সে শুরু করা যায়, পরে তা অত্যন্ত সুফলদায়ক হতে পারে, কারণ শরীর ও মনের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করতে যে কোনও পুঁথিগত শিক্ষার চেয়ে যোগের অনুশীলন অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নেয়।

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image

A version of this article was originally published in Speaking Tree