অমিশ ত্রিপাঠী: আমার প্রশ্নটা দুঃখ নিয়ে। দর্শনশাস্ত্রে বলা আছে, যে কোনও অবস্থায় আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত এবং আনন্দ ও দুঃখে সমান আসক্তিহীন হয়ে থাকা উচিত । কিন্তু দুঃখ যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, যখন কোনও প্রিয়জনের মৃত্যু হয়, তখন সেই দুঃখের অনুভূতিকে সামলানোর উপায় কী ?

সদগুরু: এটা এমন নয় যে, কোনও মানুষকে হারানোর দুঃখ নিয়ে তাচ্ছিল্য করা যায়, কিন্তু আমি এটাই বোঝাতে চাইছি যে, কোনও মানুষের মৃত্যুর কারণে দুঃখের অনুভূতি হয়, তা নয়, এটা সর্বদাই কোনও কিছু হারানোর জন্য তৈরি হওয়া দুঃখের অনুভুতি যে, – আমরা কিছু হারিয়ে ফেলেছি। যে কোনও কারণেই দুঃখের অনুভূতি তৈরি হতে পারে, অধিকার হারিয়ে, পদমর্যাদা হারিয়ে, এমনকি চাকরি হারিয়েও দুঃখের অনুভূতি আসতে পারে। 

প্রধানত, কোনও কিছু হারিয়ে ফেলার জন্যই ব্যক্তি মানুষের দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয়

প্রধানত, কোনও কিছু হারিয়ে ফেলার জন্যই ব্যক্তি মানুষের দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয়। আর এটা যদি কোনও প্রিয়জনের ক্ষেত্রে হয়, আমরা যদি মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের হারাই, সেক্ষেত্রে তার তাৎপর্য হল, সেই ক্ষতিটা আর পূরণ করা যায় না। অধিকার, পদমর্যাদা, অর্থ – সম্পদ, সব হারিয়েও সব কিছুই ফেরত পাওয়া যায়, কিন্তু মানুষ চিরতরে হারিয়ে গেলে, তাদের আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই দুঃখের অনুভূতি আরও গভীর হয়ে ধরা পড়ে। 

 

এর একমাত্র কারণ হল, আমরা নিজেদের ব্যক্তি সত্তাকে কোলাজের মতো করে তৈরি করি। আমাদের ব্যক্তি-পরিচয় তৈরি হয় নিজের অধিকার, পদমর্যাদা, বিভিন্ন সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা মানুষজনের মাধ্যমে। এগুলোর মধ্যে কোনও একটি উপকরণ যদি হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যক্তি-সত্তার মাঝে একটি বড়সড় শূন্যস্থান তৈরি হয়। এই শূন্যতার অনুভূতির মাঝেই তৈরি হয় নিদারুণ যন্ত্রণাবোধ। 

সুতরাং জীবনভর এই বোধকে সঙ্গী করেই আমাদের বেঁচে থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, বাহ্যিক জগতের কোনও উপকরণ যেন আমাদের ব্যক্তি সত্তার নির্ধারক না হয়ে যায়। অন্তর্নিহিত জীবনই যেন আমাদের ব্যক্তি আমি’র পরিচয় দ্যোতক হয়

জরুরী হল, সম্পর্কগুলো যেন আমাদের পূর্ণতার অনুভূতি যোগানোর যন্ত্রের মতো ব্যবহৃত না হয়। পরিপূর্ণতার আত্মানুভূতির ভিতের ওপরেই সম্পর্কগুলো তৈরি হওয়া উচিত। নিজের ভিতরে পরিপূর্ণতা অনুভব করতে যদি তুমি সম্পর্কগুলোকে ব্যবহার করো, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানুষটি চিরতরে হারিয়ে গেলেই তোমার ভিতরে শূন্যতার অনুভূতি তৈরি হতে বাধ্য। কিন্তু নিজের ভিতরে পূর্ণতার অনুভূতিকে ভাগ বাঁটোয়ারা করার মাধ্যমে যদি কোনও সম্পর্ক তৈরি করতে পারো, কোথাও কোনও রকম দুঃখের অনুভূতির অবকাশ থাকবে না। 

সাধারণ অবস্থায় এই বোধ হারিয়ে যায় যখন আমরা কোনও প্রাণপ্রিয় মানুষকে হারাই এবং এটাকে অন্যের অপূরণীয় ক্ষতিকে খাটো করে দেখার চেষ্টা বলে মনে হতে পারে। সুতরাং জীবনভর এই বোধকে সঙ্গী করেই আমাদের বেঁচে থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, বাহ্যিক জগতের কোনও উপকরণ যেন আমাদের ব্যক্তি সত্তার নির্ধারক না হয়ে যায়। অন্তর্নিহিত জীবনই যেন আমাদের ব্যক্তি আমি’র পরিচয় দ্যোতক হয়। প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই এটা হওয়া উচিত। এটিই হল আধ্যাত্মিক পথের মর্মকথা। 

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুন UnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image