মৌনি রায়: কেন মানবিক সম্পর্কগুলি, বিশেষত গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক এত জটিল হয়ে ওঠে ? 

সদগুরু: নমস্কার মৌনি।.  সকলেই নারী পুরুষের মধুর সম্পর্কের কথা বললেও কিন্তু এর মধ্যে অনেক তিক্ততাও থাকে – যেগুলো তুমি টের পেতে শুরু করেছো। দুর্ভাগ্যবশত এখন আমরা পাশ্চাত্যের কাছ থেকে একটি আপাদমস্তক ভ্রান্ত ধারণাকে গ্রহণ করেছি যে, কোনও সম্পর্ক বা “relationship” কথাটা বললেই সাধারণভাবে মানুষ ভেবে নেয় শরীরের সম্পর্কের কথা। কিন্তু মানবিক সম্পর্কগুলির ধরন ও ধাঁচ বহু রকমের হতে পারে। 

 

যদি কোনও সম্পর্ক শুধুমাত্র শরীর কেন্দ্রিক হয়, সেক্ষেত্রে একে অপরের শরীরের প্রতি আকর্ষণ বা উত্তেজনা একটা সময় পর স্তিমিত হয়ে যেতে বাধ্য। যে আকর্ষণ বা উত্তেজনাকে পরম পাওয়া বলে মনে হয় একসময়, সে অনুভূতি একদিন না একদিন উবে যাবেই। যখন আকর্ষণের ওই মূল কারণটা মুছে যায়, যা দুটো মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে, তখনই মানুষ সেই তিক্ততার মধ্য থেকেই পরিণত হয়ে উঠতে শুরু করে। এই ধরনের সম্পর্কগুলো অজান্তেই তিক্ত হয়ে ওঠে তার কারণ, অন্যের থেকে সুখের অনুভূতি, মিষ্টতার অনুভূতি ছিনিয়ে নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে চায় এই ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। যদি তুমি অন্যের আনন্দ ছিনিয়ে বাঁচতে চাও, সেক্ষেত্রে একদিন যখন তুমি অন্যের সেই আনন্দের অনুভূতি শুষে নিতে পারবে না, তখনই তিক্ততার জন্ম হবে। 

যদি কোনও সম্পর্ক শুধুমাত্র শরীর কেন্দ্রিক হয়, সেক্ষেত্রে একে অপরের শরীরের প্রতি আকর্ষণ বা উত্তেজনা একটা সময় পর স্তিমিত হয়ে যেতে বাধ্য। যে আকর্ষণ বা উত্তেজনাকে পরম পাওয়া বলে মনে হয় একসময়, সে অনুভূতি একদিন না একদিন উবে যাবেই।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু বিষয় প্রতি মুহূর্তে নতুন হয়ে আসতে থাকে। গতকাল পেরিয়ে এসে আজ তোমার বয়স সামান্য বেড়েছে। সুতরাং, আজ যখন তুমি আগামীকালের চেয়ে কম বয়সী, তখন তোমার সমস্ত সম্পর্কগুলো নিয়ে, শুধু জৈবিক সম্পর্ক নয়, যত রকমের সম্পর্ক তুমি এই জীবনে বয়ে নিয়ে চলেছো, নতুন করে আর একবার সব সম্পর্কগুলোর দিকে তাকানো উচিত যে, কীভাবে সেখান থেকে আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়ার বদলে, সেগুলি আনন্দের বহিপ্রকাশ হয়ে থাকবে। 

এটা করতে গেলে, সবার আগে তোমাকে নিজেকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে রাখতে হবে।. তুমি যদি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে উপচে পড়া আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারো এবং তোমার সমস্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যদি সেই আনন্দকে ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিতে পারো, সেক্ষেত্রে অন্য মানুষদের মতো সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে তোমাকে ভাবতেই হবে না। 

সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা

মানবিক সম্পর্ক যে কোনও একটিমাত্র ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়। মানুষ যখন একে অপরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসে, তখন বহুবিধ বিষয়কে সেই সম্পর্কের মধ্যে জায়গা দিতে হয়। ফলত, সামান্য অমনোযোগী হলেই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও একে অপরের পায়ের উপর পা তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই কারণেই, একে অপরের প্রিয়জন হয়েও পারস্পরিক তর্ক বিতর্ক বা বিবাদ সংঘাত will চলতেই থাকে। 

এই প্রতিটি তর্ক, বিবাদ, সংঘাতকে তুমি প্রতিদিন সামাল দিতে পারবে না। সুতরাং, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজেকে প্রস্তুত করা, কোনও সম্পর্ককে সামলাতে না গিয়ে তুমি নিজের ভিতরে স্বাভাবিক উচ্ছাস আর আনন্দে পরিপূর্ণ মানুষ ওঠো। তোমার নিজের ভিতরে যদি এই স্বাভাবিকতা বিকশিত হয়, তখন সম্পর্কগুলিও আর তোমার চাহিদার ওপর ভর করে বেঁচে থাকবে না। 

 

মানবিক সম্পর্কগুলি যদি শুধু চাহিদা ভিত্তিক হয়, সেক্ষেত্রে যে মুহূর্তে তোমার চাহিদা পূরণ হবে না, তখনই তোমার অনুযোগ আর অভিযোগের ফিরিস্তি শুরু হয়ে যাবে। প্রতি মুহূর্তে তোমার মনে হতে থাকবে যে, যা তোমার প্রাপ্য ছিল, সেই অনুযায়ী তুমি কিছুই পাচ্ছো না। শুধু যদি তোমার ভিতর থেকে এই চাওয়া পাওয়ার হিসেবটুকু বাদ দিতে পারো, তুমি যদি উপচে পড়া আনন্দে পরিপূর্ণ রাখতে পারো নিজেকে,, সেক্ষেত্রে সব মানুষের সঙ্গেই অসাধারণ সম্পর্ক তৈরি হবে তোমার, তারা কে কেমন তা দিয়ে কিচ্ছু যাবে আসবে না তোমার। তারা তোমার মতো না হলেও সম্পর্ক স্বাভাবিক থেকে যাবে। শুভেচ্ছা রইল, তোমার জীবনে সব সম্পর্কই যেন সুন্দর হয়ে ওঠে।

সম্পাদকের কথা: যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সকলেই অপারগ, যদি এমন কোনও বিতর্কিত বা স্পর্শকাতর প্রশ্ন থাকে অথবা যদি কোনও আপাত কঠিন প্রশ্ন নিজেকে ক্রমাগত বিব্রত করতে থাকে, সেক্ষেত্রে জীবনের সব অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সদগুরুকে আপনার প্রশ্ন করুনUnplugWithSadhguru.org.

Youth and Truth Banner Image